বাংলাদেশে টিকা পরিকল্পনা বাস্তবায়ন নিয়ে সংশয়
১৮ এপ্রিল ২০২১বিকল্প কোনো উৎস থেকে টিকা আমদানির জন্য চেষ্টা চললেও এখনও তেমন কোনো অগ্রগতির খবর পাওয়া যায়নি৷ তাই এই মুহূর্তে ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটের অক্সফোর্ড-আস্ট্রাজেনেকার টিকা ছাড়া বাংলাদেশের আর কোনো বিকল্প সোর্স নেই৷
এদিকে, টিকাদানে ধীরগতি আসতে পারে মনে করলেও এ বিষয়ে কোনো আশঙ্কা দেখছে না স্বাস্থ্য অধিদপ্তর৷ কিন্তু সেরামের ইনস্টিটিউটের টিকার বাংলাদেশি এজেন্ট বেক্সিমকো ফার্মা বলছে, চুক্তিমত টিকা কবে পাওয়া যাবে তার কোনো নিশ্চয়তা নেই৷
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মত, শুরুতে বিকল্প উৎস থেকেও টিকা নেয়ার চেষ্টা করা উচিত ছিলো বাংলাদেশের৷
করোনা ভাইরাসের টিকা আবিষ্কার হওয়ার পর ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে বাংলাদেশ বেক্সিমকোর ফার্মাসিউটিক্যালের মাধ্যমে তিন কোটি ডোজ টিকা কেনার চুক্তি করে৷ চুক্তি অনুযায়ী, প্রথম চালানের ৫০ লাখ টিকা আসে গত জানুয়ারি মাসে৷ ফেব্রুয়ারি মাসে আসে ২০ লাখ৷ এরপর সেরাম আর কোনো টিকা পাঠায়নি৷ কথা ছিলো প্রতি মাসে ৫০ লাখ ডোজ টিকা পাঠাবে তারা৷ এপ্রিল মাসের অর্ধেক পার হয়ে গেলেও ফেব্রুয়ারি ও মার্চের ৮০ লাখ ডোজ টিকা এখনো হাতে পায়নি বাংলাদেশ৷
জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসের মোট ৭০ লাখ ডোজ টিকার বাইরে, ভারত সরকারের কাছ থেকে ২০ লাখ ডোজ টিকা উপহার হিসেবে পায় বাংলাদেশ৷ এছাড়া ঢাকা সফরের সময় ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বাংলাদেশকে আরো ১২ লাখ টিকা উপহার দেন৷ আর ভারতের সেনাপ্রধান বাংলাদেশের সেনাপ্রধানকে উপহার দিয়েছেন এক লাখ ডোজ টিকা৷ সব মিলিয়ে বাংলাদেশ পেয়েছে মোট এক কোটি তিন লাখ ডোজ টিকা৷ দুই ডোজ করে এই টিকা ৫১ লাখ ৫০ হাজার মানুষকে দেওয়া সম্ভব৷
দেশব্যাপী করোনা ভাইরাসের প্রথম ডোজের টিকা দেয়া শুরু হয় গত ৭ ফেব্রুয়ারি৷ এরপর দ্বিতীয় ডোজ টিকা দেয়া শুর হয় ৮ এপ্রিল থেকে৷ প্রথম ও দ্বিতীয় ডোজ মিলিয়ে মোট টিকা দেয়া হয়েছে ৬৮ লাখ ৫০ হাজার ৮৪৯ জনকে৷ এর মধ্যে প্রথম ডোজ দেওয়া হয়েছে ৫৬ লাখ ৯৯ হাজার ৪২ জনকে এবং দ্বিতীয় ডোজ দেওয়া হয়েছে ১১ লাখ ৫১ হাজার ৭৬৭ জনকে৷ সেই হিসেবে এখন বাংলদেশে করোনার টিকা মজুদ আছে ৩৫ লাখ ডোজ৷
বর্তমানে প্রতিদিন প্রথম ও দ্বিতীয় ডোজ মিলিয়ে গড়ে দুই লাখ ৫০ হাজার মানুষ টিকা নিচ্ছেন৷ ১৭ এপ্রিল প্রথম ডোজের টিকা নিয়েছেন ১২ হাজার ১৫৭ জন৷ আর দ্বিতীয় ডোজ নিয়েছেন দুই লাখ ২১ হাজার ৬১৬ জন৷ টিকার জন্য প্রচুর আবেদন থাকার পরও প্রথম ডোজের টিকা প্রদান ব্যাপকভাবে কমিয়ে দেয়া হয়েছে৷ যে পরিমাণ টিকা মজুদ আছে তা এইভাবে চললে আগামী ১৫ দিনে শেষ হয়ে যাবে৷ এদিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা থেকে বাংলাদেশের যে এক কোটি টিকা পাওয়ার কথা ছিলো তাও এখন অনিশ্চিত৷
বাংলাদেশে প্রথম ধাপে এক কোটি ৭২ লাখ ৮০ হাজার মানুষকে টিকা দেওয়ার পরিকল্পনা হাতে নিয়েছিল সরকার৷
তবে টিকা পাওয়ার বিষয়ে আশাবাদী স্বাস্থ্য অধিদপ্তর৷ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক ও টিকাবিষয়ক কমিটির প্রধান মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, ‘‘আমরা আশা করছি সেরাম থেকে টিকা পাব৷ পরিমাণে হয়তো কম হবে৷ ধীরে ধীরে পাব৷ যেভাবে কথা ছিলো সেভাবে হয়তো হবে না৷ তাই আমাদের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন একটু ধীর গতিতে হবে৷ তবে টিকা কার্যক্রম বন্ধ হওয়ার কোনো আশঙ্কা নাই৷’’
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সেরামের টিকার ব্যাপারে আশাবাদী হলেও এ টিকার বাংলাদেশি এজেন্ট বেক্সিমকো ফার্মা এ বিষয়ে এখনো নিশ্চিত নয়৷ প্রতিষ্ঠানটির চিফ অপারেটিং অফিসার রাব্বুর রেজা বলেন, ‘‘আমরা এখনো কোনো তারিখ বলতে পারব না যে কবে ভ্যাকসিন আসবে৷ আমরা কোনো ডেট পাইনি৷ ওখানকার সরকার এখনো রপ্তানির অনুমতি দিচ্ছে না৷’’
নতুন টিকা দেয়া তো কমিয়ে দেয়া হয়েছেই৷ এখন আশঙ্কা হচ্ছে যারা প্রথম ডোজ নিয়েছেন তাদের নির্ধারিত সময়ে দ্বিতীয় ডোজ দেয়া যাবে কী না৷ স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এখন সেটাকেই বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছে৷
চলমান পরিস্থিতে সরকার বিকল্প উৎস থেকে টিকা পাওয়ার চেষ্টা করছে বলে জানা গেছে৷ তবে টিকা পাওয়ার ব্যপারে কোনো নিশ্চয়তা পাওয়া যায়নি৷ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, টিকা পেতে চীন ও রাশিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করছে সরকার৷ যোগাযোগ করা হচেছ ফাইজার ও মডার্নার সঙ্গে৷ মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, ‘‘আমরা বিকল্প অনেক উৎসের সঙ্গেই টিকার জন্য যোগাযোগ করছি৷ তবে এখানো সফল হইনি৷''
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, ‘‘টিকা নিয়ে সারা বিশ্বেই একটা সংকট তৈরি হয়েছে৷ ভারত ৫ কোটি লোককে টিকা দিতে পেরেছে৷ কিন্তু তাদের যে জনসংখ্যা সেই তুলনায় তা অনেক কম৷’’
তবে তিনি মনে করেন, বাংলাদেশের প্রথম থেকেই একক কোনো সোর্সের ওপর নির্ভর করা ঠিক হয়নি৷ উচিত ছিলো চুক্তির মাধ্যমে বাংলাদেশেই টিকা উৎপাদন করা৷ যে সুযোগ চীনের সঙ্গে ছিলো৷
এদিকে, প্রতিদিনই বাংলাদেশে করোনায় মৃত্যুর নতুন রেকর্ড হচ্ছে৷ গত ২৪ ঘন্টায় করোনায় আক্রান্ত হয়ে ১০২ জন মারা গেছেন৷