বাংলাদেশে জঙ্গি ট্রেন্ড
১০ সেপ্টেম্বর ২০১৫সর্বশেষ খবর হলো, থাই পুলিশ দাবি করেছেস যে ব্যাংককে ইরাওয়ান মন্দিরে বোমা হামলার প্রধান পরিকল্পনাকারী ইজান চীনা পাসপোর্ট নিয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে৷ বৃহস্পতিবার থাই পুলিশ কর্মকর্তারা দাবি করেন, ‘‘বোমা হামলার আগের দিনই সে বাংলাদেশে পালিয়ে আসে৷'' ওই হামলায় ১৪ পর্যটকসহ ২০ জন নিহত হয়৷ তবে এ ব্যাপারে বাংলাদেশের গোয়েন্দা সংস্থা বা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী এখনো কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি৷
সিরিয়ায় ব্রিটেনের ড্রোন হামলায় নিহত তিনজন ইসলামিক স্টেট বা আইএস জঙ্গির মধ্যে একজন, রহুল আমিনের জন্ম বাংলাদেশের মৌলভীবাজার জেলায় বলে জানিয়েছে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম৷ যদিও আমিন বড় হয়েছেন স্কটল্যান্ডে৷ অর্থাৎ তিনি একজন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ নাগরিক৷
তবে বাংলাদেশি তরুণদের সরাসরি সিরিয়া গিয়ে আইএস-এ যোগ দেয়ার খবর দিয়েছেন বাংলাদেশের গোয়েন্দারাই৷ তাঁরা জানিয়েছেন, এ রকম অন্তত ৯ জন তরুণের তথ্য আছে তাঁদের কাছে৷ গত বছর আইএস-এর একটি ভিডিওতে বাংলাদেশি কয়েক তরুণের সিরিয়া গিয়ে আইএস-এ যোগ দেয়ার কথা প্রকাশ করা হয়েছিল৷ বাংলাদেশ থেকে এক তরুণীর আইএস-এ যোগ দেয়ার জন্য বিমানে ঢাকা ত্যাগের খবরও সংবাদমাধ্যমগুলি প্রকাশ করেছে৷ তার পরিবার তাকে ফেরত আনার জন্য দূতাবাসের মাধ্যমে এখনো চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন৷
এইসব তথ্য প্রমাণ করে যে বাংলাদেশে সক্রিয় আইএস৷ তারা এখান থেকে সদস্য সংগ্রহ করছে৷ এই সদস্য সংগ্রহের কথা স্বীকারও করেছেন গত মে মাসে ঢাকায় আটক হওয়া আইএস-এর ‘বাংলাদেশের সমন্বয়কারী' আমিনুল ইসলাম বেগ৷ তিনি গোয়েন্দাদের জানান, তারা প্রায় ২০ জন যুবককে তালিকাভুক্ত করেছেন, যারা সিরিয়িায় গিয়ে আইএস-এ যোগ দিতে উদগ্রীব৷
বাংলাদেশের তরুণদের কেউ কেউ নিজ উদ্যোগে আইএস-এ যোগ দিতে দেশ ছাড়ছেন৷ গত ফেব্রুয়ারিতে ঢাকার মিলিটারি ইনস্টিটিউট অফ সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির (এমআইএসটি) প্রকৌশল বিভাগের ছাত্র আশেকুর রহমানের সিরিয়ায় আইএস-এ যোগদানের খবর নিয়ে বাংলাদেশে তখন ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়৷ এছাড়া গত দেড় বছরে পুলিশ বাংলাদেশে অন্তত ৩০ জনকে আইএস-এর সঙ্গে জড়িত বলে আটক করেছে৷
বাংলাদেশে এখন সবচেয়ে আলোচিত জঙ্গি গ্রুপ হলো আনসারুল্লাহ বাংলা টিম৷ তারা ব্লগারদের একের পর এক হত্যা করে আলোচনায় এসেছে৷ নতুন জঙ্গি সংগঠন হিসেবে নাম জানা গেছে আরো দু'টি সংগঠনের৷ সংগঠন দু'টি হলো হামজা ব্রিগেড এবং হিলফুল ফুজুল৷
বাংলাদেশে এখন মোট ৬টি জঙ্গি সংগঠন নিষিদ্ধ৷ এগুলো হলো হরকাতুল জিহাদ, জেএমবি, জেএমজেবি, শাহদাৎ-ই-আল হিকমা, হিযবুত তাহরির ও আনসারুল্লাহ বাংলা টিম৷ এদের মধ্যে হিজবুত তাহরি গত সপ্তাহে ঢাকায় অনলাইন সম্মেলন করেছে৷ তারা প্রায়ই ঢাকাসহ সারাদেশে প্রকাশ্যেই ঝটিকা মিছিল এবং প্রচারপত্র বিলি করে থাকে৷
২০০১ সালে রমনা বটমূলে ছায়ানটের বাংলা বর্ষরণে বোমা হামলার মধ্য দিয়ে হরকাতুল জিহাদ বাংলাদেশের নাম আলোচনায় আসে৷ বর্তমানে কারাগারে আটক হরকাতুল নেতা মুফতি হান্নান একজন আফগান ফেরত বাংলাদেশি তালেবান৷ এই হরকাতুল জিহাদই ২০০৩ সালের ২১শে আগস্ট ঢাকায় বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে শেখ হাসিনার সমাবেশে গ্রেনেড হামলা চালায়৷ ২০০৪ সালের ১৭ই আগস্ট দেশের ৬৪ জেলার মধ্যে ৬৩ জেলায় একযোগে বোমা হামলা চালায় জেমএবি৷ জেএমবি পাকিস্তানের লস্কর-এ-তৈয়বা এবং আল-কায়েদার অনুসারী৷
২০১৩ সালে ব্লগার হত্যার মধ্য দিয়ে আলোচনায় আসে আনসারুল্লাহ বাংলা টিম৷ এর সদস্যরা উচ্চ ও প্রযুক্তি শিক্ষায় শিক্ষিত৷ হিজবুত তাহরির সদস্যরাও তাই৷ আর সর্বশেষ বাংলাদেশের জঙ্গিদের মধ্যে দেখা যাচ্ছে আইএস ‘ট্রেন্ড'৷