বাংলাদেশে কেমন করে গরু পাচার করত অনুব্রত, এমানুলরা?
৯ মে ২০২৩বাংলাদেশে কীভাবে হাজার হাজার গরু পাচার করা হতো? বিস্তারিত তদন্ত করার পর সেই রিপোর্ট চার্জশিটে তুলে ধরেছে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট বা ইডি। সেই চার্জশিট ডিডাব্লিউর কাছে আছে। সেখানেই বলা হয়েছে, গরুপাচারকাণ্ডে নাটের গুরু ছিলেন এমানুল হক, অনুব্রত মণ্ডল, সেহগল হোসেনরা। পুলিশ কনস্টেবল সেহগল ছিলেন অনুব্রতের দেহরক্ষী। ক্রমশ তিনিই হয়ে ওঠেন অনুব্রতের ডান হাত।
ইডি জানিয়েছে, গরুপাচারের ক্ষেত্রে মূল ভূমিকা ছিল এনামুল হকের। সে ও তার সহযোগী জাহাঙ্গির আলম ওরফে মন্টু হাজি, মেহদি হাসান ওরফে অন্তু হাজি, হুমায়ুন কবির ওরফে পিন্টু হাজি, আব্দুল লতিফ ওরফে হিঙ্গল ও অন্যরা বিভিন্ন জেলার পশু হাট থেকে গরু কিনতো। তারপর তা ট্রাকে করে নিয়ে আসা হতো এনামুলের অফিস মুর্শিদাবাদের সোনার বাংলাতে। এই নামে একটা হোটেল প্রথমে খোলা হয়। তারপর তা বন্ধ করে সেখানে মার্বেলের দোকান খোলা হয়। এই দোকানকে সামনে রেখে চলতো এনামুলের অফিস।
গরু-ভর্তি ট্রাকের ড্রাইভারকে একটা টোকেন দেয়া হতো। সেই টোকেন থাকলে রাস্তায় পুলিশ সেই ট্রাক ধরতো না বলে ইডির রিপোর্টে বলা হয়েছে। সেই ট্রাক এনামুলের অফিসে পৌঁছানোর পর মুর্শিদাবাদে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে নিয়ে যাওয়া হতো। বিশেষ করে যেখানে নদীই দুই দেশের সীমান্ত সেখান দিয়ে গরু পাচার হতো। মূলত বিএসএফের ৩৬ নম্বর ব্যাটেলিয়ানের অধীনে থাকা নিমতিতা, খান্ডুয়া, গিরিয়া সীমান্ত চৌকির মতো বিভিন্ন এলাকা দিয়ে স্থানীয় রাখালরা গরুপাচার করত বাংলাদেশে। রাত এগারোটা থেকে তিনটের মধ্যে গরু যেত বাংলাদেশে। তাতে সাহায্য করতো বিএসএফের কর্মকর্তারা।
এনামুলের কর্মী মনোজ সাহার হাতে লেখা ডায়েরিতে বলা হয়েছে, পাঁচ কোটি ৬০ লাখ টাকার গরুপাচার হয়েছে।
বীরভূম জেলার পুরো গরুপাচারের বিষয়টি দেখাশুনা করত আব্দুল লতিফ ওরফে হিঙ্গল। ইলমবাজার পশু হাট থেকে গরু কেনা হতো। তারপর তা পাচার করা হত মুর্শিদাবাদের ওমরপুরে এমামুলের অফিস সোনার বাংলায়।
অনুব্রতের ভূমিকা
ইডি-র চার্জশিট বলছে, এনামুল ও আব্দুল লতিফ যোগাযোগ রাখতো সেহগল হোসেনের সঙ্গে। বাবা মারা যাওয়ার পর সেহগল পুলিশের চাকরি পান এবং ২০১১ থেকে তিনি অনুব্রতের দেহরক্ষী ছিলেন। বীরভূমের পশু হাট থেকে গরু কেনা, তারপর তা জেলার বাইরে নিয়ে যাওয়ার জন্য সেহগলের মাধ্যমে যোগাযোগ রাখা হতো অনুব্রতের সঙ্গে। সেহগলের দুইটি মোবাইল ফোনে কল করতেন এনামুলরা। ২০১৭ সালে মার্চ থেকে ৩ জুনের মধ্যে ৪০ বার কথা হয়েছে। সেই কল রেকর্ডও রিপোর্টের সঙ্গে পেশ করেছে ইডি।
বেশ কিছু সাক্ষী ইডি-কে জানিয়েছে, অনুব্রতের আত্মীয়, তৃণমূলের বিধায়ক, সাংসদ, রাজ্য সরকারের প্রশাসনিক অফিসারেরাও সেহগলের ফোনে কল করে অনুব্রতের সঙ্গে কথা বলতেন। সেহগলও জেরার মুখে জানিয়েছেন, ওই কলগুলি অনুব্রতেরই, তার ফোনে করা হয়েছিল। এনামুল যখন বীরভূম যেতেন, তখন সেহগল-সহ অনুব্রতের ঘনিষ্ঠদের সঙ্গে দেখা করতেন।
ইডি-র দাবি, এমানুল হকের কাছ থেকে অনুব্রতের হয়ে টাকা নিতেন সেহগল। বিনিময়ে এনামুল গরু কেনা ও তা মুর্শিদাবাদে পাচার করার গ্যারান্টি পেতেন। অনুব্রত তার রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক মহলে নিজের প্রভাব খাটিয়ে এই কাজ করতেন। গরু প্রথমে মুর্শিদাবাদ ও তারপর বাংলাদেশ চলে যেত।