এইডস রোগীদের ‘গোপন জীবন'
১ ডিসেম্বর ২০১৫বিশ্ব এইডস দিবসে স্বাস্থ্যমন্ত্রী অবশ্য দাবি করেছেন যে, পরিস্থিতি বদলাচ্ছে৷ বলেছেন, ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে এইডসমুক্ত করা হবে৷
‘আশার আলো' নামে একটি বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ঢাকায় এইচআইভি ভাইরাসে আক্রান্তদের চিকিৎসা এবং পুনর্বাসনের কাজ করছে৷ তারা এ পর্যন্ত ২৫ জনকে পুনর্বাসন এবং এইডস রোগে আক্রান্ত দুই হাজারেরও বেশি মানুষকে চিকিৎসা দিয়েছে৷ সংগঠনের নির্বাহী পরিচালক হাবিবা আক্তার ডয়চে ভেলেকে জানান, ‘‘এইডসে আক্রান্তরা আমাদের সমাজে এখনো নিন্দিত৷ তাই তাঁদের গোপনেই চিকিৎসা করা হয়৷ এছাড়া এ রোগে যাঁরা আক্রান্ত হন, তাঁরাও সে কথা গোপন রাখেন৷ যদি কোনোভাবে পরিচয় প্রকাশ হয়ে যায়, তাহলে তাঁদের সমস্যা হয়৷ অনেককে তো বাড়ি এবং এলাকাও ছাড়তে হয়েছে৷''
হাবিবা আক্তারের কথাতেই বোঝা যায় যে বাংলাদেশে এইডস রোগীরা এখনও এক গোপন জীবন যাপনে বাধ্য হচ্ছেন৷
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, বাংলাদেশের জনগোষ্ঠীর মধ্যে এইচআইভি ভাইরাস সংক্রমণের হার এখনও শতকরা ০ দশমিক ১ ভাগের নীচে এবং ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর মধ্যে ১ শতাংশেরও কম৷ ২০১৪ সালের অক্টোবর থেকে চলতি বছরের নভেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশে নতুন করে এইচআইভিতে আক্রান্ত হয়েছেন ৪৬৯ জন৷
আর এ সময়ে এই ভাইরাস সংক্রমণের পর এইডস রোগ হয়ে মৃত্যু হয়েছে ৯৫ জনের৷ এছাড়া ১৯৮৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত, অর্থাৎ ১৪ বছরে মোট এইচআইভি ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ৪ হাজার ১৪৩ জন এবং এইডস রোগে মৃত্যু হয়েছে ৫৬৯ জনের৷
যাঁরা এইচআইভি-তে নতুন সংক্রমিত হয়েছেন, তাঁদের শতকরা ৭৩ ভাগ পুরুষ, ২৫ ভাগ নারী এবং ২ ভাগ ‘ট্রান্সজেন্ডার' মানুষ৷
স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম জানান, ‘‘২০৩০ সাল নাগাদ বাংলাদেশকে এইচআইভিমুক্ত দেশে পরিণত করতে সরকার পরিকল্পনা নিয়েছে৷ এই পরিকল্পনার অংশ হিসেবে এইচআইভি টেস্টিং অ্যান্ড কাউন্সিলিং, আক্রান্ত ব্যক্তির জন্য পজেটিভ লিভিং কাউন্সিলিং, পুষ্টি, চিকিৎসা এবং কাউন্সিলিং-এর পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে৷ স্থাপন করা হয়েছে ন্যাশানাল এইডস কন্ট্রোল সেন্টার-ও৷''
তবে তিনি জানান, ‘‘বাংলাদেশকে এইডসমুক্ত করতে হলে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টাতে হবে৷ তাছাড়া আক্রান্তদের প্রতি আমাদের সহানুভূতিশীল হতে হবে৷ এ জন্য সরকার ব্যাপক প্রচার প্রচারণার উদ্যোগ নিয়েছে৷''
বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় এবং সাতটি মেডিক্যাল কলেজসহ মোট ১২টি সরকারি হাসপাতালে এইচআইভি রোগ শনাক্তকরণ, চিকিৎসা ও এইচআইভি আক্রান্তদের বিনামূল্যে ওষুধ বিতরণসহ বিভিন্ন সুবিধাও দেওয়া হচ্ছে৷ এ সব ছাড়াও বেশ কয়েকটি বেসরকারি সাহায্য সংস্থা বা এনজিও-র মাধ্যমে এইচআইভি আক্রান্তদের চিকিৎসা সেবা দেওয়া হচ্ছে৷
অন্যদিকে ‘আশার আলো'-র নির্বাহী পরিচালক হাবিবা আক্তার জানান, ‘‘এইচআইভি আক্রান্তদের যদি সার্জারির মতো চিকিৎসার প্রয়োজন হয়, তার ব্যবস্থা বাংলাদেশে নেই৷ এমনকি এইচআইভি ভাইরাসের সংক্রমণ এবং এইডস রোগ সম্পর্কে প্রচার-প্রচারণাও সীমিত৷''
তাঁর কথায়, ‘‘আশার আলোসহ তিনটি এনজিও এইচআইভি আক্রান্তদের নিয়ে কাজ করছে৷ নিজেদের প্রতিষ্ঠানে চাকরি দিয়ে এই ভাইরাসে বা এইডস রোগে আক্রান্তদের পুনর্বাসনও করছে তারা৷ কিন্তু সরকারি পর্যায়ে তাদের পুনর্বাসন বা চাকরির কোনো ব্যবনস্থা নেই৷''
আপনার প্রতিবেশী এইডস-এ আক্রান্ত হলে আপনি কী করবেন? জানান নীচের মন্তব্যের ঘরে৷