বাংলাদেশে উন্মুক্ত হচ্ছে থ্রিজি পরিষেবা
৭ সেপ্টেম্বর ২০১৩বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় এই নিলাম অনুষ্ঠিত হবে রবিবার৷ এই নিলামে অন্তত ৫ হাজার কোটি টাকার স্পেকট্রাম বরাদ্দ দেয়া হবে চারটি মোবাইল ফোন অপারেটরকে৷ তবে অপারেটররা বেশি স্পেকট্রাম নিলে টাকার অঙ্ক ৬ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যেতে পারে৷ আর টেলিটককে ইতিমধ্যে যে স্পেকট্রাম দেয়া হয়েছে, তার দাম ভ্যাটসহ প্রায় দুই হাজার কোটি টাকা৷ টেলিটক এই নিলামে অংশ না নিলেও নিলামে ওঠা দাম তাদের পরিশোধ করতে হবে৷ হোটেল রূপসী বাংলায় অনুষ্ঠিত হবে উন্মুক্ত এই নিলাম৷ এতে অংশ নেবে গ্রামীণফোন, বাংলালিংক, রবি ও এয়ারটেল৷
গত ৫ বছর ধরে থ্রিজি-র নিলাম করার চেষ্টা করে আসছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)৷ ২০০৮ সালে গাইডলাইন তৈরির পর ২০০৯ সালের জানুয়ারিতে এই নিলাম অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল৷ কিন্তু তা পেছাতে পেছাতে চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে এসে ঠেকেছে৷ তারপরও থ্রিজি উন্মুক্ত হওয়ায় খুশি মোবাইল ফোন অপারেটর ও গ্রাহকরা৷ থ্রিজিতে সবচেয়ে বেশি সুবিধা মিলবে ইন্টারনেট সেবায়৷ গতি বাড়বে কয়েকগুন৷ আশপাশের দেশ ভারত, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কায় ইতিমধ্যে থ্রিজি সার্ভিস শুরু হয়েছে৷
নীতিমালা অনুযায়ী থ্রিজির সঙ্গে ফোরজি ও এলটিই সার্ভিস দিতে পারবে মোবাইল ফোন অপারেটররা৷ তার জন্য এখনই তাদের স্পেকট্রাম নিতে হবে৷ কারণ ফোরজি ও এলটিই-র জন্য নতুন করে স্পেকট্রাম বরাদ্দ দেবে না বিটিআরসি৷ একটি বিদেশী প্রতিষ্ঠান ও রাষ্ট্রীয় অপারেটর টেলিটকসহ ৫টি প্রতিষ্ঠানকে থ্রিজির লাইসেন্স দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয় বিটিআরসি৷ কিন্তু কোন বিদেশি প্রতিষ্ঠান আসতে আগ্রহ না দেখানোয় গাইডলাইন সংশোধন করে সেই জায়গায় বর্তমানে বাংলাদেশে সেবা দেয়া অপর একটি প্রতিষ্ঠানকে লাইসেন্স দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়৷ বাংলাদেশে বর্তমানে রাষ্ট্রীয় অপারেটর টেলিটকসহ ৬টি অপারেটর সেবা দিচ্ছে৷ এরমধ্যে এখন লাইসেন্স পাচ্ছে ৫টি প্রতিষ্ঠান৷ শুধুমাত্র সিটিসেল থ্রিজির লাইসেন্স পাচ্ছে না৷ তারা নিলামে অংশ নিতে আগ্রহ দেখালেও শেষ পর্যন্ত জামানতের টাকা জমা দেয়নি৷ ফলে নিলামে তারা অংশ নিতে পারছে না৷
থ্রিজির এই নিলামে অংশ নিচ্ছে চারটি মোবাইল ফোন অপারেটর৷ প্রত্যেকেই লাইসেন্স পাবে৷ তাহলে নিলাম কার্যত আনুষ্ঠানিকতা কি না – এমন প্রশ্নের জবাবে বিটিআরসি চেয়ারম্যান সুনীল কান্তি বোস ডয়চে ভেলেকে বলেন, নিলামে প্রতিযোগিতা হবে৷ কারণ অপারেটরদের ফোরজি ও এলটিই-র জন্য এখনই স্পেকট্রাম নিতে হবে৷ হাতে আছে মাত্র ৪০ মেগাহার্টস স্পেকট্রাম৷ এখন না নিলে নতুন করে আর তাদের স্পেকট্রাম দেয়া হবে না৷ তাছাড়া নিলামে অপারেটরদের অন্তত একটি ডাক দিতেই হবে৷ তাতে প্রতি মেগাহার্টজ স্পেকট্রাম ২০ মিলিয়ন ডলারের সঙ্গে অন্তত এক মিলিয়ন ডলার যোগ হবে৷ কারণ এক মিলিয়নের কম ডাকার কোন সুযোগ নেই৷ বিটিআরসি চেয়ারম্যানের মতে, গাইডলাইন অনুযায়ী সর্বনিম্ন দাম প্রতি মেগাহার্টজ ২০ মিলিয়ন বা ২ কোটি ডলার ধরা হয়েছে তা একেবারে কম নয়৷ তাই নিলাম সফল হবে বলেই মনে করেন তিনি৷
থ্রিজির নীতিমালা অনুযায়ী নিলামে অংশ নিতে প্রতি মেগাহার্টজ স্পেকট্রামের (তরঙ্গ) ফ্লোর প্রাইস (সর্বনিম্ন মূল্য) নির্ধারণ করা হয়েছে ২ কোটি মার্কিন ডলার৷ আবেদনপত্র ফি ৫ লাখ টাকা৷ লাইসেন্স নিতে ১০ কোটি টাকা, আর বার্ষিক লাইসেন্স ফি ৫ কোটি টাকা৷ নিলামে বিজয়ী প্রতিষ্ঠানকে মোট তরঙ্গ ফি-র ৬০ শতাংশ ৩০ কার্যদিবস ও ৪০ শতাংশ পরবর্তী ১৮০ কার্যদিবসের মধ্যে জমা দিতে হবে৷ ১৫ বছরের জন্য দেয়া হবে এই লাইসেন্স৷ পরবর্তী সময়ে প্রতি পাঁচ বছরের জন্য নবায়নের সুযোগ থাকবে৷ আয়ের ৫ দশমিক ৫ শতাংশ বিটিআরসিকে জমা দিতে হবে৷ সোশাল অবলিগেশন ফি ধরা হয়েছে প্রতিষ্ঠানের নিরীক্ষিত মোট আয়ের এক শতাংশ৷
জানা গেছে, থ্রিজি সার্ভিসের জন্য প্রত্যেক অপারেটরকে কমপক্ষে ৫ মেগাহার্টজ স্পেকট্রাম নিতে হবে৷ কেউ চাইলে বেশিও নিতে পারেন৷ ইতিমধ্যে টেলিটককে থ্রিজির জন্য ১০ মেগাহার্টজ স্পেকট্রাম বরাদ্দ দেয়া হয়েছে৷ এখনও বিটিআরসির হাতে রয়েছে ৪০ মেগাহার্টজ স্পেকট্রাম৷ এক ডাকেও যদি অপারেটররা স্পেকট্রাম পান, তাহলে প্রতি মেগাহার্টজের দাম হবে ২১ মিলিয়ন বা ২ কোটি ১০ লাখ ডলার৷ বাংলাদেশি টাকায় ১৬৮ কোটি (এক ডলার ৮০ টাকা হিসেবে) টাকা৷ ৪০ মেগাহার্টস স্পেকট্রামই যদি অপারেটররা নিয়ে নেয় তাহলে এই হিসেবে বিটিআরসি পাবে ৬ হাজার ৭২০ কোটি টাকা৷ এর সঙ্গে ৫ শতাংশ ভ্যাট রয়েছে৷ এই দামে টেলিটককেও দিতে হবে ভ্যাট ছাড়া এক হাজার ৬৮০ কোটি টাকা৷ এর আগে গত ২৯শে আগস্ট জামানত হিসেবে চারটি মোবাইল ফোন অপারেটর ৬২২ কোটি টাকা জমা দিয়েছে৷ সব মিলিয়ে আগামীকাল ৭ থেকে ৮ হাজার কোটি টাকার নিলাম অনুষ্ঠিত হবে৷ যা বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় নিলাম৷