বাংলাদেশ ইস্যুতে বদলে যাচ্ছে ‘ইসলামিক স্টেটের’ নীতি
২০ জুলাই ২০১৬বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট (আইএস)-এর কার্যক্রম নিয়ে গত কয়েকমাস ধরেই চলছে জোর বিতর্ক৷ খোদ আইএস এবং জিহাদিদের প্রতি নজর রাখা বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গোষ্ঠী যখন বলেছে আন্তর্জাতিক জঙ্গি গোষ্ঠীটি বাংলাদেশে বিভিন্ন হামলার সঙ্গে জড়িত, বাংলাদেশ সরকার এবং নিরাপত্তা বাহিনী বলেছে ভিন্নকথা৷ তাদের চোখে ওসব ছিল স্থানীয় জঙ্গি গোষ্ঠীর কাজ৷
গুলশানে হামলায় ১৭ বিদেশিসহ কমপক্ষে ২৮ ব্যক্তির প্রাণহানির পরও পুলিশ কিন্তু বিষয়টি সেদিকেই নিতে চেয়েছিল৷ শুরুতে জঙ্গি হামলায় অংশ নেয়া জঙ্গিদের নাম বলেছিল আকাশ, বিকাশ, ডন, বাঁধন ও রিপন৷ কিন্তু ইসলামিক স্টেটের সংবাদসংস্থা ‘আমাক' পুলিশের বক্তব্যকে গুরুত্বহীন করে দিয়েছিল পাঁচ জঙ্গির ছবি প্রকাশ করে৷ সেসব ছবি প্রকাশের কিছুক্ষণের মধ্যেই ফেসবুকে তাদের খুঁজে বের করে ফেলে সাধারণ ইন্টারনেট ব্যবহারকারীরা৷ জানা যায়, গুলশান হামলায় জড়িতদের পরিচয় সম্পর্কে পুলিশের বক্তব্যের সঙ্গে বাস্তবের কোনো মিলই নেই৷ বরং বাংলাদেশের পরিচয় ঘটে উচ্চবিত্তের ঘরে বেড়ে ওঠা জঙ্গিদের সঙ্গে, যারা আন্তর্জাতিক জঙ্গি গোষ্ঠীর হয়ে কাজ করছে৷
অন্যান্য আন্তর্জাতিক জঙ্গি গোষ্ঠীর সঙ্গে ‘ইসলামিক স্টেটের' পার্থক্য হচ্ছে এটির মিডিয়া উইং বেশ চতুর এবং অত্যন্ত সক্রিয়৷ প্রতিটি হামলার আগে, হামলা চলাকালে এবং পরবর্তীতে তারা অনলাইন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন তথ্য প্রকাশ করে যা সেসব হামলা যে সুপরিকল্পিত তা পরিষ্কার করে দেয়৷ ঢাকায় গুলশান হামলার সময়ও গোষ্ঠীটি বিভিন্ন প্রমাণ দিয়েছে৷ জঙ্গিদের ছবি প্রকাশের পর এক ভিডিও প্রকাশ করেছে জঙ্গি গোষ্ঠীটি, যেখানে তিন বাংলাদেশি জঙ্গিকে দেখা গেছে বাংলা, ইংরেজি এবং আরবি ভাষায় বক্তব্য দিতে৷ সেসব বক্তব্যে বাংলাদেশে আরো হামলার হুমকি রয়েছে৷
জিহাদিদের অনলাইন চ্যানেলের দিকে নজর রাখা সাংবাদিক তাসনিম খলিলের সঙ্গে কয়েকদিন আগে কথা হয়েছিল এই বিষয়ে৷ সুইডেনে বসবাসরত খলিল জঙ্গি গোষ্ঠীর বাংলাদেশ বিষয়ক সর্বশেষ ভিডিওটি পর্যালোচনা করেছেন৷ তিনি জানান, ভিডিওতে পরিষ্কার বোঝা গেছে জঙ্গি গোষ্ঠীটি চাচ্ছে বাংলাদেশি জঙ্গিরা সেটির নেতৃত্বে বাংলাদেশেই জিহাদে অংশ নিক৷ অথচ আগে এটি চেয়েছিল বাংলাদেশ বা বিভিন্ন দেশ থেকে সিরিয়াতে গিয়ে জিহাদে অংশ নিক উগ্রপন্থিরা৷
এটাকে জঙ্গি গোষ্ঠীর অবস্থানে একটি পরিবর্তন বলে মনে করেন খলিল৷ ব্লগার আরিফুর রহমানও মনে করেন, জঙ্গি গোষ্ঠীটি চায় গুলশানের মতো আরো হামলা চালাক জঙ্গি গোষ্ঠীটির অনুসারীরা৷
বাংলাদেশে জঙ্গি তৎপরতা নিয়ে ‘ইসলামিক স্টেট' মাঝেমাঝেই বিভিন্ন তথ্য প্রকাশ করে এটির প্রপাগান্ডা ম্যাগাজিন ‘দাবিক' এবং সংবাদসংস্থা ‘আমাক' এর মাধ্যমে৷ বাংলাদেশের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর উচিত এসব তথ্য দ্রুত সংগ্রহ করে পর্যালোচনার ব্যবস্থা করা৷ এজন্য তারা প্রয়োজনে ‘সাইট ইন্টেলিজেন্স গ্রুপ' বা ‘টেরর মনিটর ডটঅর্গ'-এর মতো আন্তর্জাতিক সংস্থার সহায়তা নিতে পারে৷ এতে করে জঙ্গি গোষ্ঠীটির অশুভ তৎপরতার সম্পর্কে সতর্ক যেমন থাকা যাবে, তেমনি বোঝা যাবে সেটির সঙ্গে বাংলাদেশে সম্পৃক্ত কারা, কীভাবে গোষ্ঠীটি নতুন নতুন জঙ্গি জোগাড় করছে৷
বর্তমান সময়ে অফলাইনের পাশাপাশি অনলাইনেও জঙ্গি গোষ্ঠীর উপর নজরদারি বাড়ানো ছাড়া গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর আর কোনো উপায় নেই৷ গুলশান হামলা ভালোভাবেই তা বুঝিয়ে দিয়েছে৷
আপনার কি কিছু বলার আছে? লিখুন নীচের মন্তব্যের ঘরে৷