বাঁধ নির্মাণে হুমকিতে তুরস্কের প্রাচীন শহর
টাইগ্রিস নদীর ওপর বাঁধ তৈরি করছে তুরস্ক সরকার৷ এতে বিপুল পরিমাণ বিদ্যুৎ উৎপন্ন হবে বটে, কিন্তু ডুবে যাবে ১২ হাজার বছরের ঐতিহ্যবাহী শহর হাসানকেইফ৷ বাস্তুহারা হবেন লাখ লাখ মানুষ৷
লিসু বাঁধ ও বিদ্যুৎকেন্দ্র
টাইগ্রিস নদীতে বাঁধ দিয়ে ১২শ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপন্ন করার কথা ভাবছে তুরস্ক সরকার৷ এর ফলে ক্রমবর্ধমান বিদ্যুতের যে চাহিদা, তার বেশ খানিকটা অংশ মেটানো যাবে বলে আশা করছে সরকার৷
ভাটিতে খরা
উজানে বাঁধ দিলে ভাটিতে খরা দেখা দেবে, এটাই স্বাভাবিক৷ লিসু বাঁধও এর ব্যতিক্রম নয়৷ টাইগ্রিস নদী তুরস্ক থেকে ইরাকের মধ্য দিয়ে বয়ে গেছে৷ ফলে ইরাকেও নদী অঞ্চলে খরা দেখা দেয়ার আশংকা দেখা দিয়েছে৷ তবে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার শংকায় তুরস্ক নিজেই৷ বাঁধের ভাটিতে যেমন খরা দেখা দেবে, উজানে জলমগ্নতার কারণে বাস্তুচ্যূত হবেন লাখো মানুষ৷
বাসিন্দাদের হতাশা
প্রত্নসামগ্রী নতুন শহরে সরিয়ে নিলেও হাসানকেইফে বাস করা কয়েকশত মানুষের ভাগ্য এত সুপ্রসন্ন নয়৷ দেশটির বসতি আইনে বাধা থাকায় আশেপাশের পাহাড়ে চাইলেই বাসা বানাতে পারছেন না বাসিন্দারা৷ শুরুতে সবাইকে নতুন স্থানে বাসা দেয়ার কথা থাকলেও এখন নানা কারণে বাদ পড়ছেন অনেকেই৷ ফলে বাধ্য হয়ে অনেককে নামতে হচ্ছে আইনি লড়াইয়ে৷
ডুবে যাবে প্রত্ন-ঐতিহ্য
এই বাঁধের ফলে পর্যাপ্ত বিদ্যুৎ উৎপন্ন হলেও ডুবে যাবে টাইগ্রিস নদীর দুই পাশের বিশাল এলাকা৷ সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হবে দক্ষিণ-পূর্বের শহর হাসানকেইফ৷ ১২ হাজার বছরের পুরোনো এই শহরটির প্রায় পুরোটাই ডুবে যাবে টাইগ্রিসে৷
নতুন হাসানকেইফ
প্রত্নসামগ্রী রক্ষায় এরই মধ্যে কাজ শুরু করেছে সরকার৷ শহরজুড়ে ছড়িয়ে থাকা বিভিন্ন দালানকোঠাও সরিয়ে নেয়া হচ্ছে নতুন করে তৈরি করা এক ট্যুরিস্ট পার্কে৷ নতুন এ শহরের নাম দেয়া হয়েছে নিউ হাসানকেইফ৷
নতুন বাস্তবতা
ছবিতে দেখা যাচ্ছে ষোড়শ শতাব্দীতে নির্মিত জেয়নাল বে সমাধিকে আগের জায়গা থেকে নতুন হাসানকেইফে স্থানান্তর করা হয়েছে৷ কিন্তু সব ঐতিহ্যবাহী ভবন সরিয়ে আনা সম্ভব হচ্ছে না৷ ফলে অনেক কিছুই হারাবে চিরতরে৷
পর্যটন ব্যবসায় ক্ষতির শংকা
আগের আসল হাসানকেইফে প্রতিদিনই সকাল-সন্ধ্যা পর্যটকদের ভিড় লেগেই থাকতো৷ পর্যটনকে কেন্দ্র করে খাবার, স্যুভেনিরসহ নানা ধরনের ব্যবসাও জমে উঠেছিল৷ কিন্তু নতুন স্থানে সরিয়ে নেয়ায় পর্যটনে প্রভাব পড়বে বলে আশংকা করছেন স্থানীয়রা৷ তাঁদের ধারণা, আসল স্থান থেকে সরিয়ে ফেলায় আগ্রহ হারাবেন পর্যটকরা৷