বাংলাদেশের বিভিন্ন বাহিনীর এক ধরনের পোশাকি গুরুত্ব আছে৷ কোনো এলাকায় পুলিশ, ব়্যাব কিংবা সেনাবাহিনীর উপস্থিতি ভিন্ন ভিন্ন প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে৷ সাধারণ মানুষ পুলিশ দেখে অভ্যস্থ৷ ঘুসখোর এবং দুর্বল হিসেবে পুলিশ মোটামুটি পরিচিত৷ তাদের উপস্থিতি তাই সাধারণের মনে বাড়তি কোনো প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে না৷ তবে ব়্যাবের বিষয়টি ভিন্ন৷ কালো পোশাকে এই বিশেষ বাহিনী কোথাও গেলে তীব্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়৷ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়৷ যারা পুলিশকে বিশেষ গুরুত্ব দিতে চান না, তারা নড়েচড়ে বসেন৷ ব়্যাবের মধ্যে একটা কঠোর, গুরুত্বপূর্ণ এবং ক্ষমতাবান ব্যাপার আছে৷ যা সাধারণ পুলিশের মাঝে তেমন নেই৷
ব়্যাব কেন দরকার?
ব়্যাবের মতো বিশেষ বাহিনী বিশ্বের আরো অনেক দেশে আছে৷ সন্ত্রাসী হামলা দ্রুত মোকাবিলা থেকে শুরু করে বিশেষ পরিস্থিতিতে নিরাপত্তা নিশ্চিতে কিংবা জঙ্গিবাদ দমনের মতো অপারেশনে এমন বাহিনীর গুরুত্ব অপরিসীম৷ তাই বাংলাদেশেরও পুলিশের পাশাপাশি ব়্যাবের মতো বিশেষ বাহিনীর প্রয়োজন অবশ্যই রয়েছে৷ ২০০৬ সালে জঙ্গিবাদ দমন করে সেই প্রয়োজনীয়তা প্রমাণও করেছে বাহিনীটি৷
সমস্যা রাজনৈতিক ব্যবহারে
সমস্যা বাঁধে ব়্যাব যখন রাজনৈতিক স্বার্থসিদ্ধিতে ব্যবহার হয়৷ বর্তমান ক্ষমতাসীন দল ব়্যাবকে ব্যবহার করছে বিরোধী দল দমনে৷ ছোটখাট অভিযোগে বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের গায়েব করা থেকে শুরু করে কথিত বন্ধুকযুদ্ধের নামে হত্যার অজস্র অভিযোগ এখন এই বাহিনীর বিরুদ্ধে৷ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলো ব়্যাবের বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড নিয়ে অত্যন্ত সরব৷ হিউম্যান রাইটস ওয়াচ-এর ওয়েবসাইটে ব়্যাব নিয়ে বিশেষ একটি পাতাই রয়েছে৷ গত বছর এই বাহিনীকে ‘ডেথ স্কোয়াড' আখ্যা দিয়ে তা ভেঙে দেয়ার সুপারিশ করেছে আন্তর্জাতিক সংগঠনটি৷ এইচআরডাব্লিউ-র হিসেব অনুযায়ী, ২০০৪ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে দশ বছরে কমপক্ষে আটশো হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে ব়্যাব৷
আরেক মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালও ব়্যাবের বিভিন্ন কর্মকাণ্ড নিয়ে একাধিকবার প্রশ্ন তুলেছে৷ গত বছরের সেপ্টেম্বরে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে বিরোধী দলীয় নেতাকর্মীদের অপহরণ, গুমের পেছনে বিশেষ এই বাহিনীর ভূমিকা রয়েছে, দাবি করেছে সংগঠনটি৷ তারা সুনির্দিষ্ট কিছু ঘটনা তদন্তের প্রেক্ষিতে বলেছে একথা৷
সমালোচনায় সীমাবদ্ধ আন্তর্জাতিক সমাজ
সর্বশেষ কয়েকদিন আগে বাংলাদেশ সফরকালে ব্রিটেনের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ডেসমন্ড সোয়ানি জানিয়েছেন, বাংলাদেশের মতো গণতান্ত্রিক দেশে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড গ্রহণযোগ্য নয়৷ তিনি দোষীদের বিচারের আওতায় আনার আহ্বান জানিয়েছেন৷ ইউরোপীয় ইউনিয়নও ব়্যাবের সমালোচনা করেছে একাধিকবার৷
লক্ষ্যণীয় ব়্যাব নিয়ে আন্তর্জাতিক সমাজের অবস্থান অনেকটা সমালোচনার মধ্যেই সীমাবদ্ধ৷ এসব সমালোচনা বাংলাদেশ সরকার কিংবা বাহিনীটি বিশেষ আমলে নিচ্ছে বলে মনে হচ্ছে না৷ বরং আবারো নিয়মিত হয়ে উঠেছে ‘ক্রসফায়ার'৷ আর এ সব বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বিশেষ বাহিনী হিসেবে ব়্যাবের প্রয়োজনীয়তাকে ম্লান করে দিচ্ছে৷
ব্লগ পোস্টটিতে কি আরো কিছু যোগ করার আছে? আপনার মতামত লিখুন নীচের মন্তব্যের ঘরে৷