বহুমুখী চাপে হেফাজত
৮ এপ্রিল ২০২১এসব মামলায় শীর্ষ নেতাদের আসামি করা হয়েছে। পাশাপাশি হেফাজতের পক্ষে সোচ্চার থাকা "শিশু বক্তা” হিসেবে পরিচিত রফিকুল ইসলাম মাদানীকে গ্রেফতার করেছে র্যাব। তার বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা দিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
হেফাজতে ইসলামের সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা আজিজুল ইসলাম ইসলামাবাদী ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘মামলা-গ্রেফতার সবই আন্দোলনের অংশ। এগুলোতে হেফাজত ভয় পায় না। হেফাজতের একটা গণভিত্তি তৈরি হয়েছে। সেই গণভিত্তিকে সরকার ভয় পায়। এ কারণে মিথ্যা মামলা দিয়ে হেফাজত নেতাদের গ্রেফতারের চেষ্টা করা হচ্ছে। শিশু বক্তা বলে পরিচিত রফিকুল ইমলাম মাদানী সরকারের বিরুদ্ধে উচ্চকন্ঠে কথা বলেন। তিনি এমন কোন নেতা নন যে, তিনি রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করতে পারেন। সরকার তার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে তাকে কারাগারে পাঠিয়ে একটি ভবিষ্যতকে নষ্ট করে দিয়েছে।''
গত ২৬ মার্চ ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বাংলাদেশ সফরের বিরুদ্ধে বায়তুল মোকাররমে আন্দোলন ও সহিংসতার ঘটনায় হেফাজত নেতা মামুনুল হকসহ শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। পাশাপাশি সোনারগাঁওয়ে রিসোর্টে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনায় দু'টি মামলা হয়েছে। এই মামলায় মামুনুল হককে গ্রেফতার করা হতে পারে বলে বুধবার খবর ছড়িয়ে পড়ে। এই খবরে মোহাম্মদপুরে মামুনুল হকের মাদ্রাসার সামনে অবস্থান নেন ছাত্ররা। যদিও সরকারের কোন সংস্থা তাকে গ্রেফতার করেনি।
হেফাজত নেতাদের গ্রেফতারের বিষয়ে জানতে চাইলে পুলিশের মতিঝিল বিভাগের উপ-কমিশনার সৈয়দ নুরুল ইসলাম ডয়চে ভেলেকে বলেন, "গ্রেফতারের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন। কাউকে গ্রেফতার করতে গেলে সহিংসতার আশঙ্কা থাকলে বিকল্প ব্যবস্থা নিতে হয়। আমরা মামলার তদন্ত করছি। কৌশলগতভাবে গ্রেফতারের চেষ্টা করছি।”
এদিকের গ্রেফতারের খবরের মধ্যে হেফাজতে ইসলামের নেতা মামুনুল হক বৃহস্পতিবার ফেসবুক লাইভে আসেন। সেখানে তিনি বলেছেন, "স্ত্রীকে সন্তুষ্ট করতে, স্ত্রীকে খুশি করতে প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে সীমিত পরিসরে কোনো সত্যকে গোপন করারও অবকাশ রয়েছে। আমি একাধিক বিয়ে করেছি। ইসলামি শরিয়ত অনুযায়ী ও বাংলাদেশের আইনে একাধিক বিয়ের ক্ষেত্রে কোনো বাধা নেই। একজন পুরুষ চারটি বিয়ে করতে পারেন। চারটি বিয়ে করলে কার কী? যারা আমার ব্যক্তিগত আলাপ, কথা জনসম্মুখে এনেছেন; তাদের বিরুদ্ধে ব্যক্তিগত গোপনীয়তা লঙ্ঘনের অভিযোগে মামলা করব। তবে ওই দিন অসাবধানতা ও নিজস্ব নিরাপত্তা না নিয়ে রয়্যাল রিসোর্টে ঘুরতে যাওয়া উচিত হয়নি। ব্যক্তিগত অসাবধানতা ও পদক্ষেপ না নেওয়ায় আমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি।”
অপরদিকে "শিশু বক্তা” হিসেবে পরিচিত রফিকুল ইসলাম মাদানীকে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে গ্রেফতার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। গাজীপুরে তার মাদ্রাসাটিতেও তালা ঝুলছে। মাদানীকে গত বুধবার নেত্রকোণায় তার বাড়ি থেকে গ্রেফতারের পর বৃহস্পতিবার তাকে গাজীপুরের গাছা থানায় হস্তান্তর করে র্যাব। গত ১০ ফেব্রুয়ারি এক ওয়াজ মাহফিলে উসকানিমূলক বক্তব্য দেওয়ার তার বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করা হয়। মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, আসামি গত ১০ ফেব্রুয়ারি রাত ৯টা থেকে ১০টায় গাজীপুরের গাছা থানাধীন বোর্ড বাজারের কলমেশ্বরর এলাকার শীতক ফ্যাক্টরির ভেতর ওয়াজ মাহফিলে বক্তা হিসেবে বিভিন্ন ধরনের রাষ্ট্র তথা সরকারবিরোধী ও আইন শৃঙ্খলা পরিপন্থি বিদ্বেষমূলক বক্তব্য ডিজিটাল মাধ্যমে প্রদান করে, যা তার নির্দেশে ইউটিউবসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ পেলে দ্রুত ভাইরাল হয়ে যায়। তার এই উসকানিমূলক বক্তব্যের ফলে ২৬ মার্চ ঢাকায় বায়তুল মোকাররম, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ, নাশকতা ও ব্যাপক ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপ সংগঠিত হয়।
ওয়াজ মাহফিলে গিয়ে রাজনৈতিক বা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট হয় এমন বক্তব্য দেওয়া যায় কি-না? জানতে চাইলে চট্টগ্রামের ফটিকছড়ির জামিয়া উবাইদিয়া নানুপুর মাদ্রাসার পরিচালক মাওলানা সালাহউদ্দিন নানুপুরী ডয়চে ভেলেকে বলেন, "এটা কোনভাবেই উচিৎ নয়। কেউ সেটা করতেও পারেন না। তবে রফিকুল ইসলাম মাদানীর বিরুদ্ধে যেভাবে অভিযোগ আনা হয়েছে সেটা আমার মনে হয় ঠিক হয়নি।''
হেফাজতকে কী সরকার ছাড় দিচ্ছে? না-কি কঠোর অবস্থানে যাচ্ছে? জানতে চাইলে শিক্ষা উপমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল ডয়চে ভেলেকে বলেন, "হেফাজতকে ছাড় দেওয়ার কোন সুযোগ নেই। যাদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা হয়েছে তাদের অবশ্যই গ্রেফতার করা হবে। কাউকে এখনও ছাড় দেওয়া হয়নি, হবেও না। চট্টগ্রাম শহরে হেফাজতের কোন অবস্থান নেই। আমার বিশ্বাস স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মামলার আসামি হেফাজত নেতাদের দ্রুত গ্রেফতারের জন্য নির্দেশনা দেবেন।”