বর্ণবাদ বিরোধী সম্মেলনে আহমাদিনেজাদের বক্তব্য নিয়ে হট্টগোল
২০ এপ্রিল ২০০৯যুক্তরাষ্ট্র জার্মানি সহ ৯টি দেশ আগেই সম্মেলন বর্জনের সিদ্ধান্ত নেয়৷
সুইজারল্যান্ডের জেনেভা শহরে অনুষ্ঠিত এ সম্মেলন চলবে ৫ দিন ধরে৷ পৃথিবীতে বিভিন্ন ধরণের বর্ণবাদ এখনও বিদ্যমান থাকা সত্ত্বেও পশ্চিমা দেশগুলো এ সম্মেলন বর্জন করায় মহাসচিব বান কি-মুন নিজেকে ‘গভীরভাবে হতাশ' বলে উল্লেখ করেন৷ তিনি বলেন, আমরা নতুন দিকে চলতে চাই কিন্তু এখনও কেউ কেউ পুরনো অতীতকে আঁকড়ে ধরে থাকে৷ বান বলেন, সময়ের দাবি অনুযায়ী আমরা নতুন ঐক্যের পথ খোঁজার চেষ্টা করছি৷ তবুও আমরা অতীতের দুর্বলতা এবং অনৈক্য থেকে বেরিয়ে আসতে পারছি না৷ তিনি আক্ষেপ করে বলেন, যেসব দেশগুলো সুন্দরতর ভবিষ্যত নির্মাণের পথ তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারতো তারা আজ এখানে নেই৷
সম্মেলনে ইরানের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আহমাদিনেজাদ তাঁর বক্তৃতায় ইসরায়েলকে ‘সবচেয়ে নিষ্ঠুর এবং বর্ণবাদী গোষ্ঠী' বলে উল্লেখ করেন৷ এছাড়া তিনি সারা বিশ্বকে অস্থিতিশীল করার জন্য সুস্পষ্টভাবে আমেরিকা, ইউরোপ এবং ইসরায়েলকে দায়ী করেন৷ আহমাদিনেজাদের বক্তৃতার সময় ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধিরা সভাস্থল ছেড়ে বেরিয়ে যান৷ এমনকি বেশ কিছু প্রতিবাদকারী এসময় আহমাদিনেজাদকে উদ্দেশ্য করে ‘রেসিস্ট, রেসিস্ট' বলে চিৎকার দিতে থাকে৷ বর্ণবাদ বিরোধী এ সম্মেলন বর্জন প্রসঙ্গে আহমাদিনেজাদ বলেন, একথা স্বীকার করতে হবে যে এ ধরণের একটা অধিবেশন বর্জন করাটা বর্ণবাদ সমর্থন করারই সংকেত৷ মনবাধিকার রক্ষার ক্ষেত্রে যে বিষয়টা বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ তা হলো সকল দেশের অধিকার সুরক্ষায় এগিয়ে আসতে হবে৷ যাতে তারা কিছু সুনির্দিষ্ট বিশ্ব শক্তির প্রভাব ছাড়া সমান অধিকার নিয়ে সকল গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে পারে৷
উল্লেখ্য, সম্মেলনের জন্য প্রণীত খসড়া দলিলটি কয়েকবার সংশোধন করা হলেও বেশ কিছু পশ্চিমা দেশ এখনও সম্মেলনকে ঘিরে নানা অভিযোগ ও আপত্তি তুলে তা বর্জন করার সিদ্ধান্ত নেয়৷ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, ইসরায়েল, কানাডা, জার্মানি, ইটালি, নেদারল্যান্ডস, নিউজিল্যান্ড এবং সর্বশেষ পোল্যান্ড ঐ সম্মেলন বর্জনের ঘোষণা দেয়৷ এছাড়া ফ্রান্স হুমকি দেয়, যে ইরানি প্রেসিডেন্ট সম্মেলনে ইহুদিবাদের বিরুদ্ধে কোন বিদ্বেষমূলক মন্তব্য করলে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সকল দেশ সম্মেলন বর্জন করবে৷ তাদের আশংকা, এবারের সম্মেলনটিও ২০০১ সালের মতো ইসরায়েলের সমালোচনার প্লাটফর্ম হিসাবে ব্যবহৃত হতে পারে৷ এছাড়া মুসলিম দেশগুলি 'ধর্মীয় উস্কানি' এবং 'ধর্মের মানহানি' নিষিদ্ধ করার লক্ষ্যে জাতিসংঘের এই ফোরামকে কাজে লাগাতে পারে বলে উদ্বেগ এসব দেশের৷ ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানিয়াহু এবং জার্মান কেন্দ্রীয় ইহুদি পরিষদ এ সম্মেলন বর্জনকারী দেশসমূহকে সাধুবাদ জানিয়েছেন৷ তবে রাশিয়া এ সম্মেলন বর্জনকারী দেশগুলোর সমালোচনা করেছে৷ এছাড়া অস্ট্রিয়া সম্মেলন বর্জনকারী জার্মানিসহ ইইউভূক্ত অন্যান্য দেশগুলোর সমালোচনা করেছে৷
এদিকে, দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের সময় সংঘটিত ইহুদি নিধনযজ্ঞ তথা হলোকস্ট স্মরণ দিবসও সোমবার৷ হলোকস্ট স্মরণ দিবস উপলক্ষ্যে জাতিসংঘের এক বিবৃতিতে মহাসচিব বান কি-মুন হলোকস্ট অস্বীকার করা কিংবা এটাকে হাল্কাভাবে দেখার তীব্র নিন্দা করেছেন৷ যদিও, এ সম্মেলনের অন্যতম বিতর্কিত ব্যক্তি ইরানের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আহমেদিনেজাদ ইতিপূর্বে হলোকস্টকে ‘কাল্পনিক রূপকথা' বলে উল্লেখ করে বিশ্বব্যপী তুমুল ঝড় তোলেন৷ এছাড়া তিনি ইসরায়েলকে পৃথিবীর মানচিত্র থেকে মুছে দেয়ার ডাক দিয়ে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েন৷
উল্লেখ্য ৮ বছর আগে ২০০১ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার ডারবান শহরে বর্ণবৈষম্য বিরোধী প্রথম সম্মেলন ইহুদি বিদ্বেষের অভিযোগের ফলে প্রবল বিতর্কের মুখে পড়ে৷ তাই সেসময় কোনো রকম মতৈক্য ছাড়াই শেষ হয়েছিল ঐ সম্মেলন৷ ডারবানে আরব দেশগুলি ইহুদিবাদকে বর্ণবাদ হিসেবে আখ্যা দেয়ার চেষ্টা করলে, যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল সম্মেলন থেকে বেরিয়ে যায়৷
প্রতিবেদক: হোসাইন আব্দুল হাই, সম্পাদনা: আবদুল্লাহ আল-ফারুক