1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বর্ণনার ভিত্তিতেই ছবি সৃষ্টি করছে এআই

১৮ মে ২০২৩

প্রযুক্তির বেলাগাম অগ্রগতির অনেক ভালোমন্দ পরিণাম আমাদের জানা আছে৷ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ছবি সৃষ্টির ক্ষেত্রে যে বিপ্লব আনছে, তার বিভিন্ন দিক বিশ্লেষণ করেও নানা রকম মত উঠে আসছে৷

https://p.dw.com/p/4RY6m
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তায় ছবি সৃষ্টি (ফাইল ফটো)
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তায় ছবি সৃষ্টি (ফাইল ফটো)ছবি: Sebastian Gollnow/Geisler-Fotopress/picture alliance

সম্প্রতি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই ইমেজ প্রসেসিং ও সৃষ্টির ক্ষেত্রে দ্রুত অগ্রগতি ঘটাচ্ছে৷ ‘ড্যাল-ই' বা ‘মিডজার্নি'-র মতো প্রণালী টেক্সট থেকে ছবিতে রূপান্তর ঘটিয়ে প্রবল আলোড়ন সৃষ্টি করেছে৷ এর আগে কখনো এত সহজে, এত দ্রুত এবং এত সস্তায় ডিজিটাল ইমেজ সৃষ্টি করা সম্ভব হয় নি৷

বার্লিনের শিল্প বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিনসেন্ট ব্রিৎস ‘আর্টিফিশিয়াল ক্রিয়েটিভিটি' সেমিনারে তাঁর ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে সর্বশেষ গতিপ্রকৃতি নিয়ে আলোচনা করেন৷ তিনি মনে করেন, ‘‘এটা অনেকটা ক্লাসিকাল পেইন্টিং-এর যুগের পর প্রথম ফটোগ্রাফারদের আবির্ভাবের সঙ্গে তুলনীয়৷ অবশ্যই প্রতিরোধ দেখা গিয়েছিল৷ মানুষ বলেছিল, এটা শিল্প নয়, নকল বা অন্য কিছু৷ তারপর কয়েক বছর ও দশকের পর আলোকচিত্র শিল্পীর আইডিয়াও প্রতিষ্ঠা পায়৷ আমার মতে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ক্ষেত্রেও একই প্রবণতা দেখা যাবে৷''

আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ঐতিহাসিক সাদাকালো ফিল্ম নিমেষের মধ্যে রঙিন করে তুলতে পারে৷ কিন্তু জটিল শিল্পকীর্তির ক্ষেত্রে অবশ্য এই প্রযুক্তির সীমা স্পষ্ট হয়ে যায়৷ ভিনসেন্ট ব্রিৎস বলেন, ‘‘আমার মতে সমস্যা হলো এই যে, কোনো আর্টিস্টিক ভিডিওতে ইচ্ছাকৃতভাবে ঘাসের রং গোলাপি রাখলে এআই সেই রং বদলে সবুজ করে দেবে, কারণ সেটি গড় হিসেব অনুযায়ী কাজ করে৷''

সর্বশেষ প্রজন্মের এআই-ভিত্তিক গ্রাফ্রিক প্রোগ্রামগুলিতে শেডিং বা লাইটিং-এর মতো জটিল ইমেজ প্রসেসিং কোনো সমস্যা নয়৷ আগে যে কাজ করতে কয়েক দিন বা ঘণ্টা সময় লাগতো, এখন তা কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে করা সম্ভব হচ্ছে৷ ভিসুয়াল কমিউনিকেশনসের ছাত্র হিসেবে অ্যার্নস্ট আউগুস্ট গ্রেফে মনে করেন, ‘‘এটা সত্যি বেশ হুমকির মতো৷ আরও বেশি মানুষ অনন্ত ছবি সৃষ্টি করতে পারছে৷ আমি এত সময় ব্যয় করে যে ছবি সৃষ্টি করছি, সেগুলির মূল্য আর আগের মতো নেই৷ কিন্তু একই সঙ্গে নতুন টুলগুলি রপ্ত করে বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে বৃহত্তর কনসেপ্টে প্রয়োগ করার প্রয়োজন আছে৷''

ছবি সৃষ্টিতে বিপ্লব এনেছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা

‘ড্যাল-ই' বা ‘মিডজার্নি'-র মতো প্রোগ্রাম প্রথাগত সৃজনশীল প্রক্রিয়ায় বিঘ্ন ঘটাচ্ছে৷ সেই সব টুল অত্যন্ত সহজে ব্যবহার করা যায়৷ প্রোগ্রামে বর্ণনা হিসেবে কিছু লিখলেই এআই সেই নির্দেশকে ছবি হিসেবে তুলে ধরে৷ শৈল্পিক মান কখনো ভালো না হলেও সৃজনশীলতার কোনো সীমা নেই৷ ভিসুয়াল কমিউনিকেশনসের ছাত্র হিসেবে ফিলিপ ডলিঙার বলেন, ‘‘শিল্পী হিসেবে আমি নতুন পদ্ধতি ও টুল দিয়ে নতুন ইমেজারি ও নতুন কিছু করার সুযোগকে বাড়তি ক্ষমতায়ন হিসেবে দেখি৷ আমি এখনো এটিকে আরও বড় সুযোগ মনে করছি৷''

এমন প্রবণতা সম্পর্কে বার্লিন শিল্প বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিনসেন্ট ব্রিৎস বলেন, ‘‘কীভাবে ছবি আঁকবে, একজন ডিজাইনারকে যে আর সেটা ভাবতে হচ্ছে না, সেটা সত্যি রোমাঞ্চকর৷ তার বদলে কত ভালোভাবে বর্ণনা দেওয়া যায়, সেটা ভাবতে হচ্ছে, যাতে কম্পিউটার সহজে আঁকতে পারে৷ কাজটা প্রায় একই থাকলেও পদ্ধতি সম্পূর্ণ ভিন্ন৷''

ইন্টারনেটে বাস্তব মানুষের কোটি কোটি ছবি থেকে এআই-এর সংগৃহিত পিক্সেল দিয়ে এমন মানুষের ছবি সৃষ্টি করা হচ্ছে, যাদের কোনো অস্তিত্বই নেই৷ এর উদাহরণ তুলে ধরে ভিনসেন্ট ব্রিৎস বলেন, ‘‘ভাবুন, আমি আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে সব ছবি ডাউনলোড করে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সে সেগুলি ঢুকিয়ে আপনার ছবি সৃষ্টির নির্দেশ দিলাম৷ এআই শুধু সে সব ছবি দেখে আপনার একটি ছবি সৃষ্টি করবে৷ আগের কোনো ছবি কিন্তু প্রক্রিয়াজাত করবে না৷ আপনার ছবি প্রত্যেকটি পিক্সেলের ভিত্তি হলেও সেটা তার নিজস্ব সৃষ্টি৷ তখন ব্যক্তিগত অধিকারের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা কঠিন হয়ে উঠবে৷''

তথ্য সংরক্ষণ, কপিরাইট ও নৈতিক বিষয় নিয়ে ছাত্রছাত্রীদের মনে সংশয় রয়েছে৷ তাছাড়া এআই তাঁদের নিজস্ব পেশাজীবনে হুমকি বয়ে আনতে পারে, এমন দুশ্চিন্তাও থেকে যাচ্ছে৷

ক্রিস্টিনে লেবার্ট/এসবি