বরিস জনসনের ‘গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে অভ্যুত্থান'
২৯ আগস্ট ২০১৯‘পথের কাঁটা' হিসেবে সংসদকে নিষ্ক্রীয় করে নিজের লক্ষ্য পূরণ করতে চান ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন৷ ৩১শে অক্টোবর যে কোনো মূল্যে ব্রেক্সিট কার্যকর করার পথে কোনোরকম বাধা বরদাস্ত করতে প্রস্তুত নন তিনি৷ চুক্তিহীন ব্রেক্সিট প্রতিরোধ করতে আইন অনুমোদনের প্রচেষ্টার এক দিন পরই তিনি এমন পদক্ষেপ নিলেন, যাতে ব্রেক্সিটের সময় পর্যন্ত সংসদের ক্ষমতা খুবই সীমিত হয়ে পড়ে৷ অধিবেশনের সময় সঙ্কুচিত করে তিনি সংসদ সদস্যদের পালটা পদক্ষেপের পথ কার্যত বন্ধ করে দিলেন৷ রীতি অনুযায়ী রানি এলিজাবেথও সরকারের এই প্রস্তাব অনুমোদন করেছেন৷
এই অবস্থায় চুক্তিহীন ব্রেক্সিট এড়াতে সংসদের হাতে মাত্র কয়েক সপ্তাহ সময় থাকবে৷ আগামী সপ্তাহে অধিবেশন শুরু হবার পর সেপ্টেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে সংসদ মুলতুবি রাখা হবে৷ ১৪ই অক্টোবর রানির ভাষণের মাধ্যমে আবার অধিবেশন শুরু হবে৷ ফলে সময় নষ্ট না করে বিরোধীরা আগামী সপ্তাহেই প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনতে পারেন বলে অনুমান করা হচ্ছে৷
বরিস জনসনের এই বিতর্কিত সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে৷ লন্ডন, ম্যানচেস্টার, এডিনবরা ও অন্যান্য শহরে হাজার হাজার মানুষ বিক্ষোভ দেখিয়েছে৷ একটি পিটিশনে বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত ১০ লাখেরও বেশি মানুষ স্বাক্ষর করেছেন৷ লন্ডন শহরে সংসদের সামনে মানুষ ‘অভ্যুত্থান বন্ধ করো' লেখা পতাকা নিয়ে বিক্ষোভ দেখিয়েছে৷ তাদের হাতে ইইউ পতাকা শোভা পাচ্ছিল৷
বিরোধী লেবার দলের নেতা জেরেমি কর্বিন প্রধানমন্ত্রীর পদক্ষেপকে গণতন্ত্র-বিরোধী হিসেবে বর্ণনা করেছেন৷ তিনি ও উদারপন্থি দলের নেতা জো সুইনসন রানিকে চিঠি লিখে এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেছেন৷ প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী ফিলিপ হ্যামন্ড চুক্তিহীন ব্রেক্সিটের বিরুদ্ধে সংগ্রাম চালিয়ে যাবার অঙ্গীকার করেছেন৷ তাঁর মতে, জাতীয় সংকটের এই সময়ে সরকারের কার্যকলাপের উপর সংসদ নজর রাখতে না পারলে, তা সংবিধানের অবমাননা হবে৷ ৭০ জনেরও বেশি সংসদ সদস্য প্রধানমন্ত্রীর এই পদক্ষেপকে অবৈধ ঘোষণার আবেদন নিয়ে স্কটল্যান্ডের সর্বোচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন৷ ইংল্যান্ডের আদালতেও একাধিক আবেদন জমা পড়ছে৷
স্কটল্যান্ডের ফার্স্ট মিনিস্টার নিকোলা স্টার্জন জনসনের ‘স্বৈরাচারী' আচরণের কড়া সমালোচনা করে মৌলিক গণতান্ত্রিক নীতির অবমাননার অভিযোগ করেছেন৷ স্কটল্যান্ডে টোরি দলের নেতাও এই পদক্ষেপের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ দেখিয়ে বৃহস্পতিবার পদত্যাগ করতে চলেছেন৷
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জনসনের প্রশংসা করে এক টুইট বার্তা লিখেছেন৷ তাঁর মতে, কর্বিনের পক্ষে অনাস্থা ভোটের মধ্যে জনসনকে ক্ষমতাচ্যুত করা অত্যন্ত কঠিন হবে৷
প্রধানমন্ত্রী জনসন জানিয়েছেন, ইইউ শীর্ষ সম্মেলনের আগে ও পরে সংসদ ব্রেক্সিট নিয়ে আলোচনার জন্য যথেষ্ট সময় পাবে৷ উল্লেখ্য, আগামী ১৭ ও ১৮ই অক্টোবর ইউরোপীয় ইউনিয়নের শীর্ষ সম্মেলনে ব্রিটেনের সঙ্গে বিচ্ছেদের বিষয়টি প্রাধান্য পাবে৷
এসবি/ডিজি (এএফপি, ডিপিএ)