বন্যপ্রাণী রক্ষায় নতুন আইন হচ্ছে, আইন ভাঙ্গলে সর্বোচ্চ শাস্তি যাবজ্জীবন কারাদণ্ড
২০ মে ২০১০আইন অনুযায়ী বড়জোর মাত্র ৫০০ থেকে দুই হাজার টাকা জরিমানা এবং সর্বোচ্চ ছয় মাস থেকে দুই বছর জেল হতে পারে সেই ব্যক্তির৷ এই শাস্তির বিষয়টি যে কেবল বাঘ বা বড় প্রাণীর ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য, তাই নয়৷ অন্য প্রাণীর বেলাতেও একই শাস্তির বিধান রয়েছে ১৯৭৪ সালে প্রণীত বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইনে৷
তবে শুধু বাংলাদেশেই নয়, পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে চলছে চোরা শিকারি এবং অবৈধ বন্যপ্রাণী ব্যবসায়ীদের আনাগোনা৷ প্রাণীর মাংস, লোম, চামড়া পাচার হচ্ছে দেদারসে৷ ওষুধ বা সুগন্ধি প্রস্তুত করার উপাদান হিসাবে এসব প্রাণী কেনাবেচা হয় বলেই জানা যায়৷ ফি বছর চীন, যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপের বিভিন্ন দেশ ও জাপানের মতো দেশগুলো বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের বন্যপ্রাণী ক্রয় করে৷ আর এ সকল প্রাণীর সংগ্রহ স্থল কিন্তু দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মতো বন্যপ্রাণীতে সমৃদ্ধ অঞ্চলগুলোই৷ ভাবলে আরও অবাক হতে হয় যে, পাচারের দিক থেকে মাদকদ্রব্য এবং অস্ত্র কিংবা বিস্ফোরকের পরেই বন্যপ্রাণীর অবস্থান৷ বলা হয়, অপরাধ ও শাস্তির মাত্রা কম হওয়ায় বন্যপ্রাণী পাচারের দিকে ঝুঁকছে মাদক ও অস্ত্র পাচারকারীরাও৷ জীববৈচিত্র্যে সমৃদ্ধ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া বৈধ ও অবৈধভাবে বন্যপ্রাণী ও তাদের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ বিক্রয়ের ক্ষেত্রে বিশ্বের শীর্ষে অবস্থান করছে৷
২০০৮ সালে আসিয়ান দেশগুলোর নেতারা এক বৈঠকে বন্যপ্রাণী পাচারকারীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছিলেন৷ কিন্তু আদতে এই যুদ্ধের কোন চিত্র কিন্তু দেখা যাচ্ছে না বলেই মনে করেন প্রানীবিদরা৷ তাই বন্যপ্রাণী নিধনের জন্য সর্বোচ্চ যাবজ্জীবন সাজার বিধান রেখে তিন যুগ পর বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইন সংশোধন করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ সরকার৷ প্রস্তাবিত সংশোধনীতে বন্যপ্রাণী শিকার, হত্যা এবং আইন লঙ্ঘনের জন্য সর্বোচ্চ তিন লাখ টাকা জরিমানার বিধানও রাখা হয়েছে৷
প্রসঙ্গত, ১৯৭৪ সালের আইনের আলোকে ১৯৮০ সাল থেকে বন্যপ্রাণীর নিরাপদ বংশবৃদ্ধি, গবেষণা ও চিত্তবিনোদনের সুযোগ সৃষ্টির লক্ষ্যে রক্ষিত বন তথা জাতীয় উদ্যান এবং বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য রিজার্ভ ঘোষণার কার্যক্রম শুরু হয়৷ এ যাবৎ ঘোষিত ১৯টি রক্ষিত বনের আওতায় ২ লাখ ৪৫ হাজার ৮১৩ হেক্টর বনভূমিকে সংরক্ষণ করা হচ্ছে৷ ১৯৯৮ সালের জুন মাসে এক নির্বাহী আদেশে পরবর্তী পাঁচ বছরের জন্য যে কোনো ধরনের বন্যপ্রাণী শিকার নিষিদ্ধ করা হয় বাংলাদেশে৷ তবে এ পর্যন্ত বন্যপ্রাণী শিকার, ধরা বা হত্যার জন্য বড় ধরনের কোনো আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ রয়েছে৷
এদিকে ইতিমধ্যে গণ্ডার, বুনো মহিষ, নীলগাই, বনছাগলসহ অনেক বন্যপ্রাণীই হারিয়ে গেছে বাংলাদেশ থেকে৷ আন্তর্জাতিক প্রকৃতি সংরক্ষণ সংস্থা আইইউসিএন-এর রেড ডাটা বুক ২০০০ -এ আট প্রজাতির উভচর, ৫৮ প্রজাতির সরীসৃপ, ৪১ প্রজাতির পাখি এবং ৪০ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণীসহ অনেক বন্যপ্রাণীকে বিপদাপন্ন ও বিলুপ্তপ্রায় হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে৷ এখন প্রশ্ন হলো, নতুন আইন কি পারবে এই বিলুপ্তি ঠেকাতে ?
প্রতিবেদন: সাগর সরওয়ার
সম্পাদনা: দেবারতি গুহ