বন্ধু ভাবলে বাংলাদেশ সীমান্তে বিএসএফ কেন?
১৬ জুন ২০১৯বাংলাদেশ ও ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর মহাপরিচালক পর্যায়ের বৈঠকে আবারো সীমান্ত হত্যা নিয়ে উদ্বেগ ও দু:খ প্রকাশ করা হয়েছে৷ কিন্তু ভারতীয় ও বাংলাদেশের বিশ্লেষকরা বলছেন সীমান্তে বিএএসফ ‘গুলি করে হত্যাকেই’ প্রাধান্য দেয়৷
বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) এবং ভারতের বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্সের (বিএসএফ) মহাপরিচালক পর্যায়ে ঢাকায় তিনদিনের বৈঠক গত শনিবার শেষ হয়৷ বৈঠকে সীমান্ত হত্যা বেড়ে যাওয়ার কথা স্বীকার করা হয়৷ বিএসএফের মহাপরিচালক রজনীকান্ত মিশ্র নিহতের এ ঘটনাকে ‘অনাকাঙ্খিত মৃত্যু’ বলে উল্লেখ করেন৷ তাঁর মতে, নিজেদের প্রাণ বাঁচাতে গুলি করে বিএসএফ৷
বিজিবি'র মহাপরিচালক মো. সাফিনুল ইসলাম সীমান্তে এই হত্যাকান্ডের বিষয়ে উদ্বেগ জানিয়েছেন৷ বৈঠকে জানানো হয়, এই বছরের প্রথম ৫ মাসে সীমান্তে ১৫ জন বাংলাদেশি নিহত হয়েছেন৷ আর বিএসএফ মহাপরিচালক দাবি করেন, গত বছর ভারতীয় ভূখন্ডে সাতজনের মৃত্যু হয়েছে৷ তাঁদের মধ্যে একজন বাংলাদেশি ও ছয়জন ভারতীয়৷
ভারতের মানবাধিকার সংগঠন মানবাধিকার সুরক্ষা মঞ্চের (মাসুম) সাধারণ সম্পাদক কিরিটি রয় ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘সীমান্ত হত্যা ভারতীয় আইনে কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়৷ কিন্তু বিএসএফ হত্যা করছে এবং তারা এর জন্য বিচারের মুখোমুখি হচ্ছেনা৷ তাদের ইমপিউনিটি দেয়া হচ্ছে৷ তারা ট্রিগার হ্যাপি৷’’
নতুন সরকারের সময়ে এই পরিস্থিতির কোনো উন্নতি হবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘ভারতের এ সরকার নতুন নয়, পুরনো সরকার৷ একই সরকার৷ আমি দুর্ভাগ্যজনক হলেও একজন ভারতীয় হিসেবে বলতে বাধ্য হচ্ছি যে, বাংলাদেশ একটি বন্ধু রাষ্ট্র হলেও যেহেতু এখানে মুসলমানরা বেশি, তাই তারা বাংলাদেশকে বন্ধু রাষ্ট্র মনে করেনা৷ তাই বাংলাদেশ সীমান্তে বিএসএফ (বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্স) আছে৷ কিন্তু নেপাল বা ভুটান সীমান্তে কোনো বিএসএফ নেই৷ সেখানে আছে এসএসবি (সশস্ত্র সীমা বল)৷’’
তিনি বলেন, ‘‘১৯৬৮ সালে বিএসএফ-এর জন্ম৷ পাকিস্তান সীমান্তেও বিএসএফ আছে৷ একাত্তরে পূর্ব পাকিস্তান স্বাধীন হয়ে বাংলাদেশ হলো৷ শেখ মুজিব সরকারের সময়ই থেকেই বাংলাদেশের সাথে ভারতের সুসম্পর্ক, খালেদা জিয়া সরকারের সময় ভালো সম্পর্ক ছিলো৷ হাসিনা সরকারের সময়ও সুসম্পর্ক৷ কিন্তু বাংলাদেশ সীমান্তে বিএসএসএফ-ই আছে৷ সীমান্তে দুর্ভাগ্যজনকভাবে হত্যা চলছে৷ ধর্ষণ চলছে৷’’
ভারতের এ মানবাধিকার কর্মী আরো বলেন,‘‘ শুধু বাংলাদেশীদেরই নয়, বিএসএফ ভারতীয়দেরও গুলি করে মারছে৷’’
বাংলাদেশের মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) সাবেক নির্বাহী পরিচালক নূর খান বলেন, ‘‘বিএসএফ-এর যে সকল সদস্যকে বাংলাদেশের সীমান্তে নিয়োগ দেয়া হয় তারা বাংলা ভাষা বোঝেন না৷ সময়ে সময়ে পাকিস্তান সীমান্ত থেকে এনে তাঁদের বাংলাদেশ সীমান্তে দায়িত্ব দেয়া হয়৷ যাদের মধ্যে উগ্রতা আছে৷ লক্ষ্যনীয় যে, পাকিস্তান সীমান্তে দায়িত্ব পালনের সময়ও কিন্তু তারা এতটা উগ্রতা দেখায় না, যেটা বাংলাদেশ সীমান্তে তারা করে থাকে৷ তারা হয়তো সামরিক শক্তির সামর্থ্য বিবেচনা করে৷’’
তিনি বলেন, ‘‘ভারতে আরেকটি নির্বাচন হলেও এখনো কিন্তু সীমান্তে প্রাণঘাতী অস্ত্রের ব্যবহার কমছেনা৷ নিরীহ বাংলাদেশিদেরকে হত্যা করা হচ্ছে৷ বার বার সীমান্ত হত্যাকান্ড বন্ধে ভারতের সরকার প্রতিশ্রুতি দিলেও বিএসএফ কিন্তু তা আমলে নিচ্ছে না৷ এখানে আসলে রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি এবং বাস্তবতার অনে ফারাক আছে৷’’
তিনি বলেন, ‘‘ভারত যে আন্তরিক নয় তা বিএসএফ-এর মহাপরিচালকের কথায়ই বোঝা যায়৷ তিনি সীমান্ত হত্যায় উদ্বেগ ও দু:খ প্রকাশ করছেন, আবার বলছেন বাধ্য হয়ে গুলি ছুড়ছে৷ আসলে সীমান্তে চোরাচালানই বড় ঘটনা৷ এর জন্য গুলি করার কোনো দরকার নেই৷ আমরা বলছি, অপরাধ করলে আটক করো৷ কিন্তু তারা গুলিতেই সামাধান বেছে নিয়েছে৷’’