বড়দিনের উপহার পেতে দেরি হবে
১৬ ডিসেম্বর ২০২০করোনা শুরু হওয়ার পরে এই বন্দরের কাজ প্রথমদিকে একেবারে থেমে যায়। অথচ, এই বন্দর থেকেই যুক্তরাজ্যে আসা ৪০ শতাংশ কন্টেনারের মাল খালাস হয়। ফলে দেখা দিয়েছিল অভূতপূর্ব সংকট। পড়ে আছে হাজার হাজার খালি শিপিং কন্টেনার। আবার পিপিই, ডাক্তারি গ্লাভস, মাস্ক ও প্রয়োজনীয় অন্যান্য চিকিৎসা সরঞ্জাম এসেছে জরুরি ভিত্তিতে। যুক্তরাজ্যে করোনা শুরুর ১১ মাস পরেও পিপিই-র পাহাড় পড়ে আছে এই বন্দরে।
অতিমারিতে রক্ষা নেই, ব্রিটেনে তার উপর জুড়েছে ব্রেক্সিট। সুপারমার্কেট, ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিস, উৎপাদক সকলেই এখন খাবার, ওষুধ, যন্ত্রাংশ মজুত করতে ব্যস্ত। কারণ, করোনা ও ব্রেক্সিটের জন্য আমদানিতে দেরি হলে এই মজুত কাজে লাগবে।
যুক্তরাজ্যের ফ্রেইট ট্র্যান্সপোর্ট অ্যাসোসিয়েশনের পলিসি ম্যানেজার জো ম্যাকলেমন ডিডাব্লিউকে জানিয়েছেন, নিউ ইয়ারের জন্য কোম্পানিগুলি বেশি করে স্টক রাখতে চাইছে। তার প্রভাব যুক্তরাজ্যের ওই সব বন্দরেও পড়ছে, যেখানে ভোগ্যপণ্য খুব একটা আসে না।
এর প্রতিক্রিয়া হচ্ছে বিভিন্ন ক্ষেত্রে। জাপানের প্রখ্যাত গাড়ি প্রস্তুতকারক হন্ডা সাময়িকভাবে যুক্তরাজ্যে তাদের উৎপাদন বন্ধ রেখেছে। কারণ, গাড়ির যন্ত্রাংশ পাওয়া যাচ্ছে না। তাঁরা ক্রেতাদের কাছে ক্ষমা চেয়ে জানিয়ে দিয়েছে, গাড়ি পেতে কিছুটা দেরি হবে।
আর ব্রিটেনের বাচ্চারা বড়দিনের উপহার সময়ে না পেলে অনুযোগ করতেই পারে। কারণ, উপহারসামগ্রী তো কন্টেনারভর্তি হয়ে বন্দরে পড়ে আছে। তা বাজারে আসতে দেরি হবে।
খেলনা প্রস্তুতকারক অ্যাসোসিয়েশন বিটিএইচএ জানিয়ে দিয়েছে, খেলনা ও গ্যাজেট রটারডামে ডেলিভারি করা হবে। তারপর সেখান থেকে ট্রাকে করে তা আনতে হবে। ফলে সময় লাগবে। বড়দিনের আগে তা নাও পৌঁছতে পারে।
সিডনি, লস এঞ্জেলেসর মতো বন্দরের ছবিটা একই। সেখানেও করোনার জন্য তড়িঘড়ি করে সবকিছু থেমে গেছিল। তার ধাক্কা এখনো সামলে ওঠা যায়নি।
বিশ্বে ৬০ শতাংশ জিনিসই জলপথে কন্টেনার ভর্তি হয়ে যায়। করোনার ফলে সেই কন্টেনার থেকে মাল বের করার জন্য আগের তুলনায় দ্বিগুণের বেশি সময় লাগছে। এই হিসাব চায়না কন্টেনার সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের।
চীনই হলো বিশ্বের এক নম্বর কন্টেনার প্রস্তুতকারক দেশ। চীনেই প্রথম করোনা ভাইরাস দেখা দেয়। তারপর তাদের অর্থনীতির হাল খারাপ হয়েছিল। কিন্তু এখন তারা সামলে নিয়েছে। চীনের রপ্তানি বেড়েছে ২১ শতাংশ। কারখানায় উৎপাদন পাল্লা দিয়ে বেড়েছে।
ইউরোপ ও অ্যামেরিকায় এখন চীনে তৈরি আসবাব, ফিটনেস যন্ত্র, ইলেকট্রনিক্সের জিনিসের চাহিদা অনেক বেড়েছে। কারণ, মানুষ এখন ঘরে বসে বেশি কাজ করছেন। অফিসে কম যাচ্ছেন।
এর ফলে নানা ধরনের সমস্যা তৈরি হচ্ছে। হাপাগ লয়েড যেমন অ্যামেরিকা থেকে খালি কন্টেনার চীনে পাঠিয়ে দিচ্ছে। অথচ, তাদের ওই কন্টেনার করে সোয়াবিন চীনে নিয়ে যাওয়ার কথা। ফলে সোয়াবিন চাষিদের মাথায় হাত। কোম্পানির দাবি, সাধারণ সময়ের থেকে আটগুণ বেশি সময় লাগছে। ফলে তারা আর অপেক্ষা না করে কন্টেনার চীনে পাঠিয়ে দিচ্ছেন সেখান থেকে মাল আনার জন্য।
বন্দরের এই সমস্যার জন্য বিমান ও রেলে মাল পাঠানোর চাহিদা বেড়েছে। ইউরোপের মার্কেটে এখন ট্রাকে করে জিনিস পৌঁছে দিচ্ছে অনেক শিপিং ফার্ম। কিন্তু জলপথে যতটা মাল পাঠানো সম্ভব, ট্রাকে করে ততটা সম্ভব নয়। বিমানে করে মাল পাঠানোরও একটা সীমা আছে। অতিমারির সময় অনেক যাত্রী বিমানকে মাল পরিবহনের কাজে লাগানো হয়েছে। এই বছর বিশ্ব জুড়ে যাত্রীবাহী প্লেন ৬০ শতাংশ কম চলেছে। কিন্তু যাত্রী বিমানে মাল পাঠানোর অসুবিধা প্রবল। বড় কন্টেনার সেখানে ধরে না। তাছাড়া বিমানে খরচও অনেক বেশি।
বিকল্প হলো রেল। চীনের সঙ্গে পশ্চিম ইউরোপের রেলসংযোগ আছে। কিন্তু ট্রেনে করে মাল পাঠানোরও একটা সীমা আছে। একটা জাহাজে যা মাল আসে, তা পাঠাতে ৩০০টি ট্রেন লাগবে। তার উপর ট্রেনের মালভাড়াও বাড়ছে।
আগামী বছর গোড়ার দিকে বন্দরের এই জটিলতা কাটতে পারে। তবে নো ডিল ব্রেক্সিট হলে যুক্তরাজ্যে আরো সময় লাগতে পারে। ম্যাকলেমনের মতে, জটিলতা কাটতে ২০২১-ও শেষ হয়ে যেতে পারে।
মাইকেল মার্টিন/জিএইচ