বঞ্চিত চা-শ্রমিকদের মুখ
দীর্ঘদিন চা বাগানে পরিশ্রমের পর তারা অবসর পেয়েছেন। কিন্তু মেলেনি পাওনার টাকা। সংসার টানার টাকা নেই উত্তরবঙ্গের এই চা শ্রমিকদের।
নন্দা লামা
উত্তরবঙ্গে ভারত-ভুটান সীমান্তে অবস্থিত ছবির মতো সুন্দর তুরতুরি চা বাগান। ২০০৩ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত সেখানে কাজ করেছেন নন্দা লামা। ৬০ বছর হয়ে যাওয়ায় অবসর নিতে হয়েছে। কিন্তু এখনো প্রভিডেন্ট ফান্ড, গ্র্যাচুইটির টাকা মেলেনি। বাড়িতে নুন আনতে পান্তা ফুরোয়।
কালী লামা
১৯৮১ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত বাগানে খেটেছেন এই প্রৌঢ়া। মাসে মাসে সামান্য দৈনিক মজুরি থেকে মালিক প্রভিডেন্ট ফান্ড এবং গ্র্যাচুইটির টাকা কেটেছে। অবসরের পর যা একসঙ্গে পাওয়ার কথা ছিল। আজও সে টাকা ঘরে ঢোকেনি কালী লামার।
বিনোদিনী রাও
ময়নাবাড়ি চা বাগানের এই শ্রমিক ২০২০ সালে অবসর নিয়েছেন। প্রভিডেন্ট ফান্ড আর গ্র্যাচুইটির টাকা চাইতে গেলে মালিক অফিস থেকে তাড়িয়ে দেয় বলে অভিযোগ।
ফুলকুমারী লামা
চা বাগানে ৪১ বছর টানা কাজ করেছেন এই বৃদ্ধা। তিনিও প্রভিডেন্ট ফান্ড, গ্র্যাচুইটির চাকা পাননি। বাগান মাঝে বন্ধ হয়ে গেছিল। এখন নতুন মালিক এসেছে। পুরনো শ্রমিকদের ফাইল নিয়ে তারা চিন্তিত নয় বলে অভিযোগ।
গোপাল ছেত্রী
১৯৮৬ থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত কাজ করেছেন এই বৃদ্ধ। ১৫ বছর কেটে গেছে, পাওনার এক পয়সাও হাতে পাননি তিনি। গোপালের অভিযোগ, ইচ্ছে করে মালিকরা প্রভিডেন্ট ফান্ডের অফিসে শ্রমিকদের ভুল নাম দিয়েছে।
মধু মুন্ডা
২০১৯ সালে অবসর নিয়েছেন মধু। তার অ্যাকাউন্টেও এক পয়সা ঢোকেনি। নতুন মালিকের কাছে গ্র্যাচুইটির টাকা চাইলে তারা পুরনো মালিকের ঘাড়ে দোষ চাপিয়ে দেয় বলে অভিযোগ।
রুপা লামা
৫৮ বছর ধরে তুরতুরি চা বাগানে কাজ করেছেন তিনি। প্রভিডেন্ট ফান্ডের টাকা কিছুদিন আগে হাতে পেয়েছেন তিনি। কিন্তু গ্র্যাচুইটির টাকা এখনো মেলেনি। রুপার আশঙ্কা, মৃত্যুর আগে সে টাকা মিলবে না। তার বহু সহকর্মী বিনা চিকিৎসায় মারা গেছেন। মৃত্যুর পরেও তাদের পরিবার কোনো টাকা পায়নি।
নকুল গনদেন
১৯৮৬ সাল থেকে বাগানে কাজ করেছেন নকুল। শ্রমিকের কাজ করেছেন, পরে সর্দার হয়েছেন। কিন্তু টাকা পাননি। মালিকেরা পারিশ্রমিক থেকে পাই পয়সা কেটে নিয়েছে। কিন্তু এক পয়সাও ফেরত দিচ্ছে না বলে তার অভিযোগ।
প্রেম লামা
২০১৪ সালে অবসর নিয়েছেন প্রেম লামা। কারখানায় পাতা প্রসেসিংয়ের কাজ করতেন তিনি। প্রভিডেন্ট ফান্ড, গ্র্যাচুইটি কিছুই পাননি তিনি। চা বাগানের ন্যূনতম পারিশ্রমিক নিয়ে প্রশ্ন উঠলেই মালিকরা বলেন, শ্রমিকদের আরো অনেক সুবিধা দেওয়া হয়। কিন্তু বাস্তবে দেখা গেল, সুবিধা কেবল খাতায় কলমে। অবসরের পরেও পাওনা টাকা পান না শ্রমিকরা।