বজ্রপাত: আতঙ্কের কারণ নেই
২৬ জুন ২০১৮একের পর এক বজ্রপাতের ঘটনা, সারা রাজ্য জুড়ে৷ গত মে মাসে প্রথম কালবৈশাখী ঝড়ের সময় থেকেই বজ্রপাত শুরু হয়েছে এবং এই বছর সেই বজ্রপাতের প্রাবল্য যেন একটু বেশি৷ গ্রামাঞ্চলে বরাবরই বাজ পড়ে বেশি, কিন্তু গত দু'মাসেপশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় বজ্রাঘাতে মৃত্যুর সংখ্যা এর মধ্যেই ৫০ পেরিয়ে গেছে৷ এর মধ্যে সবথেকে নজরকাড়া দুর্ঘটনাটি ঘটেছে চলতি মাসের মাঝামাঝি খাস কলকাতা শহরে৷ দক্ষিণ কলকাতার ঢাকুরিয়া লেক এলাকার এক ক্রিকেট আকাডেমির মাঠে বাজ পড়ে মারা যায় হুগলির বাসিন্দা এক তরুণ ক্রিকেটার৷ হঠাৎ বৃষ্টি শুরু হওয়ায় খেলা বন্ধ রেখে তাঁবুর দিকে এগোচ্ছিল খেলোয়াড়রা৷ তখনই বাজ পড়ে৷
ওই একই সময় সংলগ্ন এক রাস্তায় বার বার বাজ পড়ে পুড়ে যায় পাশাপাশি অন্তত ১০টি বাড়ির যাবতীয় বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম৷ একই সময়ে বাজ পড়ে আগুন ধরে যায় এক বহুতল বাড়ির ফ্ল্যাটে৷ আতঙ্ক ছড়ায় শহরের সমস্ত আবাসিক এলাকায়৷ এই আতঙ্ক এখনও পুরোমাত্রায় বহাল৷ অনেকেই বলছেন, এমন ব্যাপক এবং জোরাল বজ্রপাতের ঘটনা শহরাঞ্চলে এর আগে কখনও দেখা যায়নি৷
নানা রকম তত্ত্ব উঠে আসছে বজ্রপাতের হার বেড়ে যাওয়ার সম্ভাব্য কারণ হিসেবে৷ যদিও সেগুলি কোনোটাই বৈজ্ঞানিক তথ্য সমর্থিত, বা প্রামাণ্য তথ্য নয়৷ তার মধ্যে সবথেকে জনপ্রিয় হয়েছে এক দূষণ তত্ত্ব৷ বলা হচ্ছে, দূষণের কারণেই কার্বন কণায় পরিপূর্ণ বায়ুস্তর এত সহজে বিদ্যুৎকে টেনে আনছে৷ এবং গ্রামের তুলনায় শহরে যেহেতু দূষণ বেশি, বেড়ে গেছে বজ্রপাতের ঘটনা৷ ডয়চে ভেলের পক্ষ থেকে এর সত্যতা যাচাই করতে যোগাযোগ করা হয়েছিল কলকাতার আলিপুরে আঞ্চলিক আবহাওযা দপ্তরের অধিকর্তা বি কে মন্ডলের সঙ্গে৷ তিনি প্রথমেই সরাসরি দূষণ তত্ত্বকে খারিজ করে দিলেন৷ বললেন, আবহাওয়া বিজ্ঞানীরা এখনও এমন কোনো প্রমাণ পাননি, যে থেকে পরিবেশ দূষণের সঙ্গে বজ্রপাতের সংযোগ প্রতিষ্ঠিত হয়৷ বরং এখনও পর্যন্ত বজ্রপাত নিছকই একটি প্রাকৃতিক ঘটনা, যা অনুকূল পরিবেশ পেলেই ঘটে থাকে৷ এবং যেহেতু বজ্রপাত সাধারণভাবে এক নির্দিষ্ট ক্ষেত্রের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে, তার তীব্রতাও মাত্রাতিরিক্ত বলে অনুভূত হয়৷ কিন্তু স্রেফ সেই কারণে শহরে বজ্রপাত বেড়েছে, বা আবহাওয়ার ব্যাপক রদবদল ঘটেছে, এমন দাবি করা যায় না৷
তবে এটাও ঘটনা যে চলতি মরশুমে বজ্রপাতে মৃত্যুর ঘটনা স্বাভাবিক হার ছাড়িয়ে গেছে৷ যে বিষয়টি নিয়ে রাজ্য এবং কেন্দ্র সরকার সমান উদ্বিগ্ন৷ যে কারণে শুরু হয়েছে গণমাধ্যমে সচেতনতা প্রচার৷ যেমন পরামর্শ দেওয়া হয়েছে, বৃষ্টির থেকে বাঁচতে গাছের তলায় না দাঁড়াতে৷ কারণ এবারই দু'টি জেলায় দু'টি ঘটনা ঘটেছে, যেখানে বাজ পড়ে গাচের তলায় দাঁড়ানো একাধিক লোকের একসঙ্গে মৃত্যু হয়েছে৷