1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যকে ‘মূর্তি’ বলে নির্মাণ বন্ধের দাবি

১৫ নভেম্বর ২০২০

ঢাকার ধোলাইপাড়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের একটি ভাস্কর্যকে ‘মূর্তি’ আখ্যা দিয়ে তা অপসারণের দাবি করছে কিছু ইসলামিক গোষ্ঠী৷

https://p.dw.com/p/3lKAs
Bangladesch Mujibur Rahman 1972
ছবি: picture-alliance/AP Photo

তাদের এ দাবিকে ‘কট্টর’ আখ্যা দিয়ে সরকারের মন্ত্রী এবং বুদ্ধিজীবীরা বলেছেন, ‘‘মৌলবাদীদের এই আস্ফালনকে কোনোভাবেই মেনে নেয়া হবে না৷''

অন্তত দুইজন রাজনীতিক-মাওলানা বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য অপসারণের দাবি জানিয়ে সমাবেশ করেছে৷ তাদের একজন হলেন চরমোনাই'র পীর ও ইসলামী আন্দোলন-এর সিনিয়র নায়েবে আমির মুফতি সৈয়দ মোহাম্মদ ফয়জুল করীম৷ তিনি শুক্রবার ভাস্কর্য নির্মাণের স্থল ঢাকার ধোলাইপাড় এলাকায় এক সমাবেশে বলেছেন, ‘‘ভাস্কর্যের নামে মূর্তি স্থাপনের চক্রান্ত তৌহিদি জনতা রুখে দেবে৷ রাষ্ট্রের টাকা খরচ করে মূর্তি স্থাপনের অপরিণামদর্শী সিদ্ধান্ত থেকে সরকারকে ফিরে আসতে হবে৷''

তিনি আরো বলেন, ‘‘মূর্তি স্থাপনের সিদ্ধান্ত বাতিল না হওয়া পর্যন্ত তৌহিদি জনতার আন্দোলন চলবে৷ সরকার যদি ভাস্কর্যের নামে মূর্তি স্থাপন থেকে সরে না আসে, তাহলে কঠোর কর্মসূচি দিতে বাধ্য হব৷''

একই দিনে, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব ও হেফাজতে ইসলামের নেতা মাওলানা মামুনুল হক ঢাকার বিএমএ মিলনায়তনে খেলাফত যুব মজলিস ঢাকা মহানগরীর এক অনুষ্ঠানে বলেন, ‘‘বঙ্গবন্ধুর মূর্তি স্থাপন বঙ্গবন্ধুর আত্মার সঙ্গে গাদ্দারি করার শামিল৷ যারা বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যের নামে মূর্তি স্থাপন করে তারা বঙ্গবন্ধুর সু-সন্তান হতে পারে না৷ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একজন মুসলিম হিসেবে পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছেন৷ তাঁর মূর্তি তৈরি করে রাস্তার মোড়ে মোড়ে স্থাপন করা হলে তা হবে বঙ্গবন্ধুর আত্মার সঙ্গে বেইমানি৷''

এই দুই ইসলামী নেতার বক্তব্যের ব্যাপারে সরকার এখনও কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া না দেখালেও মন্ত্রীরা এরইমধ্যে এ নিয়ে কথা বলেছেন কেউ কেউ৷ শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বলেছেন, ‘‘যতটুকু বলেছেন ক্ষমা চেয়ে সাবধান হয়ে যান, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করলে ঘাড় মটকে দেবো৷''

‘বাংলাদেশ কোনো মৌলবাদী গোষ্ঠীর আস্ফালনের জায়গা নয়’: শ ম রেজাউল করিম

আর মৎস ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ. ম. রেজাউল করিম ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘বঙ্গবন্ধু স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি৷ যারা এই ভাস্কর্য পছন্দ করেন না, তারা বাংলাদেশের স্বাধীনতা, সংবিধান এবং আইনের বিরুদ্ধে কথা বলছেন৷ বাংলাদেশ কোনো মৌলবাদী গোষ্ঠীর আস্ফালনের জায়গা নয়৷''

আর নৌ প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘‘ওদের তো এই শিক্ষা নেই৷ ওরা কী বলল তাই তা নিয়ে মন্তব্য করতে চাই না৷''

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, ‘‘বঙ্গবন্ধুরভাস্কর্য দেশের স্বাধীনতা ও ইতিহাসের অংশ৷ এই প্রজন্ম ভাস্কর্য দেখে শিখবে৷ ইতিহাস জানবে৷ এটা মূর্তি কেন হবে? এখানে তো কেউ পূজা করতে যাবে না৷''

তিনি বলেন, ‘‘বাংলাদেশ একটি অসাম্প্রদায়িক চেতনার দেশ৷ মৌলবাদী-সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীকে কোনোভাবে আশকারা দেওয়া ঠিক হবে না৷''

এ বিষয়ে কথা বলার জন্য মাওলানা মামুনুল হককে পাওয়া যায়নি৷

তবে ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলনের প্রধান মুফতি সৈয়দ মোহাম্মদ ফয়জুল করীমের পক্ষে সংগঠনের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা গাজী আতাউর রহমান বলেন, ‘‘ভাস্কর্য আর মূর্তি একই৷ ইসলামে মূর্তি স্থাপন হারাম৷ তারপরও সরকার যদি বঙ্গবন্ধুর মূর্তি স্থাপন করে তবে তৌহিদি জনতা তা মেনে নেবে না৷''

কিন্তু ওলামা লীগের মহাসচিব মাওলানা আবুল হাসান শাহ শরিয়তপুরী বলেন, ‘‘বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নিয়ে ইসলামে কোনো সমস্যা নাই৷ এটা সবাই দেখবে সেই জন্য বানানো হচ্ছে৷ হেফাজত ও জামাত শিবির এর বিরোধিতা করছে৷ তারা অশান্তি সৃষ্টি করতে চায়৷ বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য বানানো হচ্ছে, সেটা হোক৷ কোরানের আয়াত দিয়েও অন্য জায়গায় বানানো যাবে৷ এটা নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি করার কোনো দরকার নাই৷''

‘বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নিয়ে ইসলামে কোনো সমস্যা নাই’: আবুল হাসান শাহ শরিয়তপুরী

সরকারের প্রশ্রয়ে কট্টরপন্থীরা এমন সুযোগ পাচ্ছে কিনা জানতে চাইলে  খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘‘বিষয়টি ঠিক নয়৷ মৌলবাদী কোনো গোষ্ঠীকেই সরকার সুযোগ দেবে না৷'' আর শ. ম. রেজাউল করিম বলেন, ‘‘ধর্মের নামে কোনো উসকানি এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্টের যে কোনো চেষ্টা রুখে দেবে সরকার৷''