কতটা কাজ করে ‘টামিফ্লু’?
৫ মে ২০১৪প্রায় কোনো কাজেই আসে না
গবেষণা-নেটওয়ার্ক ‘ককরেন-রিভিউ'-এর গবেষকরা জানিয়েছেন, রোগ নিরাময়ে টামিফ্লু প্রায় কোনো কাজেই আসে না৷ ওষুধটি সম্পর্কে বিভিন্ন সমীক্ষার ফলাফল বিশ্লেষণ করে গবেষকরা এই সিদ্ধান্তে এসেছেন৷
নেটওয়ার্কটির পরিচালক প্রফেসর গ্যার্ড আন্টেস বলেন, ‘‘প্রতিটি সমীক্ষার তথ্য বিশ্লেষণ করে এই সিদ্ধান্তে আসা হয়েছে৷'' এই ওষুধ নেওয়ার পরও অসুখ কমার তেমন লক্ষণ দেখা যায় না৷ তার ওপর ওষুধটির পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও কম নয়৷ যেমন এটি নিলে দেখা দেয় বমিবমি ভাব৷
সুইজারল্যান্ডের ফার্মাসিটিউক্যাল প্রতিষ্ঠান ‘রশ' টামিফ্লু উৎপাদন করে থাকে৷ ককরেন-এর পর্যালোচনার ফলাফলকে সমালোচনা করে প্রতিষ্ঠানটির তরফ থেকে বলা হয়, মাত্র কয়েকটি সমীক্ষার ফলাফলের ওপর ভিত্তি করে গবেষকরা এই ধরনের সিদ্ধান্তে এসেছেন৷ এর প্রতিবাদে প্রফেসর আন্টেস বলেন, ‘‘সমীক্ষা নির্বাচনের ক্ষেত্রে কিছু মানদণ্ড দেখা হয়েছে৷ তার ওপর নির্ভর করেই এই সিদ্ধান্তে আসা হয়েছে৷ গবেষণায় ৭৭ সমীক্ষার সবগুলিকেই আমলে আনা হয়নি৷ কেননা ঐগুলিতে ওষুধটির কার্যকারিতা ও ক্ষতিকর দিকটি তেমন বিবেচনায় আনা হয়নি৷''
স্বাস্থ্যব্যবস্থায় ইতিবাচক ভূমিকা
ককরেন সাধারণত বিদ্যমান সমীক্ষার ফলাফল মূল্যায়ন করে থাকে৷ এর ফলে স্বাস্থ্যব্যবস্থায় ভালো সিদ্ধান্ত নিতে সুবিধা হয়৷ সব তথ্য উপাত্ত ককরেন লাইব্রেরির অনলাইন ডাটাবেসে প্রকাশ করা হয়৷
ইউরোপীয় ঔষধ সংস্থা ইএমএ, টামিফ্লুকে বাজারে ছাড়ার অনুমোদন দিয়েছে৷ ককরেন-রিভিউ গবেষণা নেটওয়ার্কের ৫৫০ পৃষ্ঠার মূল্যায়নটি প্রকাশ হওয়ার পর ইএমএ জানায়, ‘‘টামিফ্লুর ঝুঁকির চেয়ে সুবিধাগুলিই বেশি৷ ১০ বছরেরও বেশি সময় ধরে ওষুধটি ব্যবহার করা হচ্ছে৷ অন্যান্য ওষুধের মতোই নতুন তথ্য উপাত্তগুলি ইএমএ বিবেচনায় আনবে এবং সে অনুযায়ী পদক্ষেপ নেবে৷''
সংক্রমণরোগ গবেষণাকেন্দ্র হেল্মহলৎস-সেন্টারের বিজ্ঞানী রুথ স্ট্রিকার ইনফ্লুয়েঞ্জা নিয়ে গবেষণা করছেন৷ তিনি বলেন, ‘‘আমি মনে করি বিশেষজ্ঞরা এই ফলাফলে খুব বিস্মিত হয়নি৷''
বার্ডফ্লু দেখা দেওয়ায় বিক্রি বৃদ্ধি
খুব সীমিত ক্ষেত্রে টামিফ্লু কাজ করে৷ ইনফ্লুয়েঞ্জা নিয়ে কেউ ডাক্তারের কাছে গেলে তিনি বলেন, ‘‘দুই সপ্তাহ বিছানায় শুয়ে বিশ্রাম নিন৷ ভালো হয়ে যাবে অসুখ৷'' এক্ষেত্রে টামিফ্লুর মতো ভাইরাসকে দমন করার কোনো ওষুধ থাকলে তো ভালোই হয়৷ কিন্তু ঠিক কোন সময়ে ওষুধটি দেওয়া উচিত, সেটা স্পষ্ট নয়৷ বিজ্ঞানী রুথ বলেন, টামিফ্লু বিপজ্জনক নয়৷ তাঁর ভাষায়, ‘‘এর কার্যকারিতা এত ক্ষীণ যে, ওষুধটি খেলেও প্রায় কোনো পার্থক্যই বোঝা যায় না৷''
২০০৩ সালে বার্ড ফ্লু দেখা দিলে ফ্লুর ওষুধটির বিক্রি হুহু করে বেড়ে যায়৷ শুধু অ্যামেরিকাতেই টামিফ্লু বিক্রি হয় ১.৩ বিলিয়ন ডলারের বেশি৷ জার্মানিতে এই ওষুধ বিক্রি হয় প্রায় ৫০০ মিলিয়ন ইউরোর৷ এইভাবে সুইজারল্যান্ডের ওষুধপ্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান রশ-এর লাভের অঙ্কটাও ফুলেফেঁপে ওঠে৷