ফ্রান্সের ঘরে বিশ্বকাপ
১৫ জুলাই ২০১৮শেষ যে দু'টি দল প্রথমবার ফাইনাল খেলেছে বিশ্বকাপের আসরে, তারা হলো ফ্রান্স ১৯৯৮ সালে এবং স্পেন ২০১০ সালে৷ দু'দলই বিশ্বকাপ জিতেছে৷ এবার ফুটবল ইতিহাসের ১৩তম ও ইউরোপের ১০ম নতুন দল হিসেবে বিশ্বকাপের ফাইনাল খেলেছে ক্রোয়েশিয়া৷
পুরো বিশ্বকাপ জুড়ে মদ্রিচ-রাকিটিচরা একের পর এক বাধা পেরিয়ে মন জয় করেছেন কোটি ফুটবলপ্রেমীর৷ তাই শক্তির বিচারে দিদিয়ে দেশঁ'র ফ্রান্সকে এগিয়ে রাখলেও সমর্থকদের অনেকের মন জুড়ে ছিল ক্রোয়াটরা৷
তুলনামূলক নবীনদের নিয়ে গড়া দল ফ্রান্স৷ সেখানে আছেন পরীক্ষিত ও উদীয়মান তারকারা৷ বিশ্বকাপ জুড়ে তাঁরা নৈপুণ্যে সবাইকে ছাপিয়ে না গেলেও শক্তিশালী দল হিসেবে সমীহ আদায় করেছে৷ এছাড়া পরিসংখ্যানেও এগিয়ে ছিল তারা৷ আগের পাঁচবারের মুখোমুখিতে ক্রোয়াটদের তিনবার হারিয়েছে ফ্রান্স৷ বাকি দুই ম্যাচ ড্র হয়েছে৷ তবে ক্রোয়েশিয়া যেভাবে ফাইনাল পর্যন্ত এসেছে, তাতে তারাও যে ছেড়ে কথা বলবে না, তা অনুমিতই ছিল৷
তাই মনের মতো এক ফাইনাল দেখার অপেক্ষায় থাকা সমর্থকদের হতাশ করেনি দুই দল৷ শুরু থেকেই টান টান উত্তেজনা৷ সেই উত্তেজনায় প্রথম কয়েক মিনিট একটু ছন্নছাড়া খেলা হলেও হঠাৎ করেই খেলা বদলে যায় ১৮ মিনিটের মাথায়৷ ফ্রান্সের প্রথম শট অন টার্গেটটিই গোলে পরিণত হয়৷ তবে এতে ক্রোয়াট ফরোয়ার্ড মানসুকিচের অবদান ছিল বেশি৷ তাঁর হেড দিয়ে বল ক্লিয়ার করার প্রচেষ্টাটি বিফলেই শুধু যায়নি, বরং খুঁজে নিয়েছে নিজেদের জালকেই৷
তবে এর আট মিনিটের মধ্যেই দুর্দান্তভাবে খেলায় ফিরে আসে ক্রোয়াটরা৷ টানা চতুর্থ ম্যাচে পিছিয়ে থেকেও সমতায় ফেরার কীর্তি গড়েন তারা৷ মাঝমাঠের কাছাকাছি থেকে মদ্রিচের ফ্রি কিক ডান প্রান্ত হয়ে আবার ফ্রেঞ্চ ডি-বক্সে এলে সেখান থেকে বাঁ পায়ের চমৎকার শটে প্রতিপক্ষের ডিফেন্স ভেঙে গোল আদায় করেন পেরিসিচ৷ অসাধারণ সেটপিস গোল৷
তবে এই সুখ বেশিক্ষণ টেকেনি মদ্রিদের৷ এই পেরিসিচই এবার নিজেদের পেনাল্টি বক্সের ভেতরে বলে হাত লাগিয়ে বিপাকে ফেলেন দলকে৷ স্পটকিক থেকে ‘কুল কাস্টমার' গ্রিসমান সহজেই এগিয়ে নেন ফ্রান্সকে৷ ২-১-এ এগিয়ে থেকে প্রথমার্ধ শেষ করে '৯৮-এর বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা৷
প্রথমার্ধে ফ্রান্স ২-১ গোলে এগিয়ে থাকলেও ক্রোয়াটদেরই বেশি ভালো মনে হচ্ছিলো৷ কিন্তু দ্বিতীয়ার্ধে দেশঁ তাঁর শিষ্যদের পাঠান আরো উজ্জ্বীবিত করে৷ লুঝনিকির মাঠে একের পর এক ঝলক দেখিয়ে ফ্রান্স ছয় মিনিটের ব্যবধানে আদায় করে নেয় আরো দুই গোল৷ একটি ৫৯ মিনিটে পল পগবা আর আরেকটি ৬৫ মিনিটে টিনএজ তারকা এমবাপ্পে৷ দু'টি গোলেই সুবাসিচ পরাস্ত খুব সহজেই৷
শেষ গোলটি করে এমবাপ্পে ইতিহাসে নিজের নাম লেখালেন পেলের সঙ্গেই৷ কারণ, ‘প্রাপ্তবয়স্ক' হবার আগে কোনো বিশ্বকাপের ফাইনালে গোল করার যোগ্যতা এর আগে দেখিয়েছেন ফুটবল মায়েস্ত্রো পেলেই৷
<iframe src="https://www.facebook.com/plugins/video.php?href=https%3A%2F%2Fwww.facebook.com%2Fdw.bengali%2Fvideos%2F10155561636280978%2F&show_text=0&width=560" width="560" height="315" style="border:none;overflow:hidden" scrolling="no" frameborder="0" allowTransparency="true" allowFullScreen="true"></iframe>
তবে যেই মানসুকিচ আত্মঘাতী গোল করে দলকে শুরুতেই ডুবিয়েছিলেন, তিনিই এরপর ফ্রেঞ্চ গোলরক্ষক লরিসের ভুলকে নিজের ভুলের প্রায়শ্চিত্ত হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেন৷ এর আগে বিশ্বকাপের কোনো ফাইনালে একই ব্যক্তি আত্মঘাতী ও দলের পক্ষে গোল দু'টো একসঙ্গে করেননি৷ তাই বলা যায়, তিনিও ইতিহাসের অংশ৷ শেষ পর্যন্ত ৪-২ ব্যবধানেই শেষ হয় ২০১৮ বিশ্বকাপের ফাইনাল৷ এর আগে ছয় গোলের ফাইনাল হয়েছিল ১৯৬৬ সালে৷ সেই ফাইনালে জার্মানিকে ৪-২ গোলে হারিয়েছিল ইংল্যান্ড৷
সব মিলিয়ে একটি তীব্র উত্তেজনাপূর্ণ, নানা ঘটনায় সাজানো এক ফাইনাল উপহার দিয়েছে রাশিয়া বিশ্বকাপ৷ পুরো ম্যাচে ফ্রেঞ্চ প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাক্রোঁর শিশুসুলভ উচ্ছ্বলতা ছিল চোখে পড়ার মতো৷ ছিলেন ক্রোয়াট প্রেসিডেন্ট কলিন্ডাও৷ অভিনন্দন দিয়েছেন প্রতিপক্ষকে৷ সান্ত্বনা দিয়েছেন দলকে৷
আর একটি সফল বিশ্বকাপের আয়োজক রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুটিনও সঙ্গ দিয়েছেন তাঁদের৷
এদিকে, টুর্নামেন্ট জুড়ে দুর্দান্ত খেলা ক্রোয়াট তারকা লুকা মদ্রিচের হাতে যোগ্য হিসেবেই তুলে দেয়া হয়েছে গোল্ডেন বলের পুরস্কার৷ আর ছয় গোল নিয়ে গোল্ডেন বুট জিতেছেন ইংলিশ ফরোয়ার্ড হ্যারি কেন৷ উদীয়মান সেরা তারকা হয়েছেন ফ্রান্সের এমবাপ্পে৷
প্রিয় পাঠক, ফ্রান্সের বিশ্বকাপ জয়ে আপনার প্রতিক্রিয়া কী? লিখুন নীচের মন্তব্যের ঘরে৷