ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় ইসরায়েল-হামাস সংঘাতের প্রভাব
১৮ অক্টোবর ২০২৩ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলার পরিচালক য়্যুর্গেন বুজ এক বিবৃতিতে ইসরায়েলে হামাসের ‘বর্বর' হামলার নিন্দা করেছেন৷ বইমেলা কর্তৃপক্ষ ‘ইসরায়েলের পক্ষে পূর্ণ সংহতি প্রকাশ করছে' বলেও বিবৃতিতে জানানো হয়৷ মেলা চলাকালীন ইসরায়েলের কণ্ঠস্বর আরও বেশি করে শোনার ব্যবস্থা করা হবে বলেও অঙ্গীকার করেন তিনি৷
এর জবাবে মুসলিমপ্রধান কয়েকটি দেশের বিভিন্ন সংগঠন মেলা থেকে সরে দাঁড়ায় বলে জানিয়েছে এএফপি৷ এর মধ্যে আছে ইন্দোনেশিয়ান পাবলিশার্স অ্যাসোসিয়েশন, সংযুক্ত আরব আমিরাতের শারজাহ বুক অথরিটি, এমিরেটস পাবলিশার্স অ্যাসোসিয়েশন ও মিশরের আরব পাবলিশার্স অ্যাসোসিয়েশন৷
ইন্দোনেশিয়ান পাবলিশার্স অ্যাসোসিয়েশন এক বিবৃতিতে বলেছে, ইসরায়েলের পক্ষ নেওয়ার আয়োজকদের সিদ্ধান্ত ‘সংলাপের আদর্শ এবং পারস্পরিক বোঝাপড়া গড়ে তোলার প্রচেষ্টাকে ক্ষুন্ন করেছে'৷ সংগঠনের প্রধান আরিস হিলম্যান নু্গ্রাহা বলেছেন, ‘‘ফিলিস্তিনি জনগণের দুঃখ-কষ্ট ভুলে ইসরায়েলের পাশে দাঁড়ানো, পুরো বিশ্বকে বোঝার জন্য একটিমাত্র বই পড়ার মতো মনে হয়৷''
মালয়েশিয়ার শিক্ষা মন্ত্রণালয় এএফপিকে জানিয়েছে, ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলা থেকে সরে দাঁড়ানোর কারণ আয়োজকদের ‘ইসরায়েলপন্থি অবস্থান'৷
‘পুরো বিপর্যয়'
ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলার পরিচালক য়্যুর্গেন বুজ পরে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘ভূরাজনীতির কারণে' কিছু অংশগ্রহণকারী আসতে না চাওয়ায় তিনি ‘খুব হতাশ'৷ ‘‘এটি আমাদের জন্য, নিজের জন্য একটি বিপর্যয়৷ আমি চাই মানুষ এখানে আসুক, সবার মধ্যে অকপট আলোচনা হোক, বিতর্কিত হলেও আলোচনা চলুক৷''
হামলার পর শোক পালন করতে ইসরায়েলের অনেক অংশগ্রহণকারীও বইমেলায় যোগ দিচ্ছেন না৷
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিতর্ক
৭৫ তম ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় এবারের ‘গেস্ট অফ অনার' দেশ স্লোভেনিয়া৷ মঙ্গলবার মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে স্লোভেনিয়ার দার্শনিক স্লাভোই জিজেক ইসরায়েলে হামাসের সন্ত্রাসী হামলার নিন্দার পাশাপাশি সংঘাতের কারণ বুঝতে পেছনের কথা ও ফিলিস্তিনিদের কথা শোনা প্রয়োজন বলেও মন্তব্য করেন৷ তিনি হামাসের ধ্বংসাত্মক নীতির সঙ্গে ইসরায়েলের বসতি স্থাপন নীতিরও তুলনা করেন, যা দর্শকদের মধ্যে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে৷
ফ্রাঙ্কফুর্ট যে রাজ্যে অবস্থিত সেই হেসে রাজ্যের ইহুদিবিদ্বেষ বিষয়ক কমিশনার উভে বেকার তার বক্তৃতায় জিজেকের সমালোচনা করেন৷
পুরস্কার প্রদান স্থগিত
বইমেলা চলার সময় ফিলিস্তিনি লেখিকা আদানিয়া শিবলিকে এ বছরের ‘লিবেরাটুর প্রাইজ' দেওয়ার কথা ছিল৷ কিন্তু গত শুক্রবার এটি স্থগিত করার ঘোষণা দেওয়া হয়৷ ‘লিটপ্রম' নামের একটি সংগঠন আফ্রিকা, এশিয়া, ল্যাটিন অ্যামেরিকা ও আরব বিশ্বের একজন লেখিকাকে এই পুরস্কার দিয়ে থাকে৷
এই পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠান স্থগিত করার সিদ্ধান্তের সমালোচনা করে একটি খোলা চিঠি প্রকাশ করা হয়েছে৷ এতে নোবেলজয়ী কয়েকজনসহ এক হাজারের বেশি মানুষ সই করেছেন৷ ‘‘মেলা কর্তৃপক্ষ যে সময় বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছে যে, তারা ইসরায়েলি কণ্ঠস্বরকে ‘মেলায় বিশেষভাবে দৃশ্যমান' করতে চায়, সেই সময় তারা (লিটপ্রম) ফিলিস্তিনি কণ্ঠের জন্য জায়গা বন্ধ করে দিচ্ছে,'' বলে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়৷
বইমেলা চলবে রোববার পর্যন্ত৷ সেদিন সালমান রুশদিকে জার্মানির প্রকাশক ও বইবিক্রেতাদের সংগঠন ‘জার্মান বুক ট্রেড'-এর ২০২৩ সালের শান্তি পুরস্কার দেওয়া হবে৷
এলিজাবেথ গ্রেনিয়ার/জেডএইচ