এবোলা-বিরোধী প্রস্তুতি
২ সেপ্টেম্বর ২০১৪গত কয়েক মাসে এবোলা ভাইরাসে সংক্রমিত হওয়ার ফলে জ্বরে ভুগে অন্তত ১৫'শ মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন৷ রোগটির প্রাদুর্ভাব শুরুর পর থেকেই সতর্কাবস্থায় রয়েছে বিভিন্ন দেশের বিমানবন্দর৷ ব্রিটেনের বিমান কর্তৃপক্ষ ‘ব্রিটিশ এয়ারওয়েজ' এবং ফ্রান্সের ‘এয়ার ফ্রান্স' তো লাইবেরিয়া, গিনি, সিয়েরা লিওন এবং নাইজেরিয়ায় সব ফ্লাইট বাতিলই করে দিয়েছে৷
লাইবেরিয়া, গিনি, সিয়েরা লিওন এবং নাইজেরিয়ার মতো পশ্চিম আফ্রিকার হাতে গোনা কয়েকটি দেশে ভয়াবহ আকারে দেখা দিলেও বিশ্বের অনেক দেশেই ছড়িয়ে পড়েছে এবোলা-আতঙ্ক৷ ইউরোপও রয়েছে আতঙ্কে৷ জার্মানির ফ্রাংকফুর্ট বিমানবন্দর ব্যবহার করে প্রতি বছর কমপক্ষে ৫ কোটি ৮০ লাখ মানুষ বিমানে যাতায়াত করেন৷ এখন সেখানেও লেগেছে আতঙ্কের ঢেউ৷ বিমানবন্দরের বাইরে অপেক্ষমান অনেক ট্যাক্সিচালক যাত্রীর কাছ থেকে তিনি কোন দেশ থেকে এসেছেন তা না জেনে গাড়িতেই উঠতে দিচ্ছেন না৷ এমন ট্যাক্সি চালকের সংখ্যা এখনো অবশ্য খুবই কম৷
জার্মানির বন শহরের সাংবাদিক আবু-বাকার জালোহ মনে করেন, ফ্রাংকফুর্ট বিমানবন্দরে এবোলার বিরুদ্ধে যতটা জোরালো ব্যবস্থা নেয়া দরকার আদতে তা নেয়া হয়নি৷ তিনি জানান, সম্প্রতি সাংবাদিকের দায়িত্ব পালন করতে সিয়েরা লিওনের ফ্রি টাউনে গিয়েছিলেন তিনি৷ ফিরে এসে অসুস্থ বোধ করায় মনে হয়েছিল তিনি নিজেও এবোলা ভাইরাসে সংক্রমিত হয়ে থাকতে পারেন৷ এই আশঙ্কা দূরে ঠেলার জন্য গিয়েছিলেন স্বাস্থ্য কেন্দ্রে৷ কিন্তু কাঙ্খিত স্বাস্থ্যসেবা পেতে কয়েক ঘণ্টা লেগে যায়৷ আবু-বাকারের দাবি, অন্য সবার স্বার্থেও তাঁকে জরুরি ভিত্তিতে চিকিৎসা সেবা দেয়া জরুরি – দায়িত্বরত ডাক্তারদের এ কথা বোঝাতে তিনি ব্যর্থ হন৷ তাঁর অনুরোধের জবাবে চিকিৎসকরা জানান, সত্যিকার অর্থেই যেসব রোগীর অবস্থা খারাপ তাঁরাই অগ্রাধিকার পাবেন৷ এ অভিজ্ঞতা একটি উপলব্ধির জন্মও দিয়েছে বনভিত্তিক এ সাংবাদিকের মনে আর তা হলো, ‘‘দেখে যদি মনে হয় আপনি এই মুহূর্তে মারা যেতে পারেন, তাহলেই কেবল ডাক্তারদের কাছে অগ্রাধিকার পাবেন৷''
ফ্রাংকফুর্ট বিমানবন্দরের স্বাস্থ্য কর্মকর্তা রেনে গটশাল্ক অবশ্য মনে করেন, সংক্রমিত রোগীর মাধ্যমে জার্মানিতে এবোলা ভাইরাসের প্রবেশ রুখতে পর্যাপ্ত উদ্যোগ নেয়া হয়েছে৷ ডয়চে ভেলেকে তিনি জানান, বিমান বন্দরের স্বাস্থ্য কর্মীরা তাঁদের মোট কর্মঘণ্টার শতকরা ৩০ ভাগই ব্যয় করছেন এবোলা-বিরোধী তৎপরতার পেছনে৷ এ লক্ষ্যে গঠন করা হয়েছে ‘এবোলা সংকট ব্যবস্থাপনা বিভাগ'৷ গটশাল্ক সেই বিভাগের প্রধান স্বাস্থ্য উপদেষ্টা৷ বিভাগটি তাঁর নেতৃত্বে বিমানবন্দরে আগতদের প্রতি নজর রাখছে বলেও জানিয়েছেন তিনি৷
গটশাল্ক আরো জানান, ‘এবোলা সংকট ব্যবস্থাপনা বিভাগ'-এর সংক্রামক ব্যধির বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক এবং সংকট ব্যবস্থাপনা বিশেষজ্ঞরা প্রতিনিয়ত পুলিশ এবং দমকল বাহিনীর সাথে যোগাযোগ রাখছেন৷ কোনো বিমান যাত্রীকে এবোলায় সংক্রমিত মনে হলে সেই বিমান বিমানবন্দরের বাইরে অবতরণের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে৷ সেখানেই সব যাত্রীকে একে একে পরীক্ষা করে দেখা হবে৷ কোনো যাত্রীকে সংক্রমিত মনে হলে তাঁকে চিহ্নিত করা হবে লাল রংয়ের চিহ্ন দিয়ে৷ পুরোপুরি সংক্রমণের আশঙ্কার বাইরে নয় এমন যাত্রীদের চিহ্নিত করা হবে হলুদ রংয়ের প্রতীক দিয়ে৷ যাঁরা একেবারে সন্দেহের বাইরে তাঁদের দেয়া হবে সবুজ চিহ্ন৷ গটশাল্ক জানিয়েছেন, সবুজ চিহ্নিত যাত্রীরাই কেবল সরাসরি বিমানবন্দরে প্রবেশ করতে পারবেন৷ হলুদ চিহ্নিতদের বিমানবন্দরে ঢোকানো হবে বিশেষ প্রহরায়, বিশেষ রাস্তা দিয়ে৷ লাল চিহ্নিতদের জন্য রয়েছে বিশেষ গাড়ি৷ সেই গাড়িতেই তাঁদের নিয়ে যাওয়া হবে ফ্রাংকফুর্ট বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে৷
এবোলায় সংক্রমিত রোগীর চিকিৎসার জন্য ফ্রাংকফুর্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬৮ নম্বর ওয়ার্ড সদা প্রস্তুত৷ গত ১৫ই আগস্ট আদ্দিস আবাবা থেকে আগত এক যাত্রীকে এবোলা ভাইরাসে আক্রান্ত বলে সন্দেহ করা হয়৷ যাবতীয় স্বাস্থ্য পরীক্ষার পর জানা যায়, তাঁর দেহ সম্পূর্ণ সংক্রমণমুক্ত৷