ফেসবুকে হুমকি, শিক্ষকের জেল
২৭ জুন ২০১৩গত বছরের এপ্রিল মাসে বুয়েটের প্রভাষক হাফিজুর রহমান রানা ফেসবুকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার হুমকি দেন৷ তিনি তাঁর ফেসবুক স্ট্যাটাসে প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে লেখেন, ‘হায়েনা, ওই হায়েনা, তুই দেশকে খেয়েছিস, এখন বুয়েটকে খাবি....পারবি না৷ আমরা বুয়েটের শিক্ষক এবং সাধারণ শিক্ষার্থীরা হলাম শিকারি৷'
এখানেই শেষ নয়৷ হাফিজুর রহমান রানা আরো লেখেন, ‘প্রথমে তোর মাথায় গুলি করবৌ, পরে পেটে৷ তারপর মাথা কেটে বুয়েটের সামনে টানিয়ে রাখবো৷ যাতে আর কোনো হায়েনার আক্রমণে বুয়েট আক্রান্ত না হয়৷'
গত বছরের ২৩শে এপ্রিল এ ব্যাপারে ঢাকার শাহবাগ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়, যা পরে মামলায় রূপান্তরিত হয়৷ পুলিশ তদন্ত শেষে তথ্য প্রযুক্তি আইন ও দণ্ডবিধিতে হাফিজুর রহমানকে আসামি করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করে৷ অভিযোগ গঠনের পর মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ ও শুনানি শেষে ঢাকার বিশেষ জজ জহুরুল হক হাফিজুর রহমানের সাত বছর কারাদণ্ডের রায় দেন বৃহস্পতিবার৷ আদালত গ্রেপ্তারি পরওয়ানা জারির পর, হাফিজুর রহমান হাইকোর্ট থেকে জামিন নিয়ে আর আদালতে হাজিরা দেননি৷ তাই তাঁর অনুপস্থিতিতেই বিচারকাজ শেষ হয়৷
ঢাকা মহানগর পুলিশের যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম ডয়চে ভেলেকে জানান, তথ্য প্রযুক্তি আইনে তাঁর জানা মতে এই প্রথম সাইবার অপরাধে বাংলাদেশে কারুর সাত বছরের কারাদণ্ড হলো৷ এর আগে এই ধরণের অপরাধে কারুর সাজা হয়েছে বলেও তাঁদের জানা নেই৷ তিনি জানান, সাইবার অপরাধ দমনে এখন পর্যাপ্ত আইন আছে৷ নতুন সন্ত্রাস দমন আইনেও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের তত্পরতা আইনের আওতায় আনা সম্ভব৷ তবে সমস্যা হলো, গুগলের সঙ্গে বাংলাদেশের কোনো চুক্তি না থাকায় আইনি প্রক্রিয়ায় ফেসবুক ব্যবহারকারীর তথ্য পাওয়ার সুযোগ নেই পুলিশের৷ চুক্তি করার জন্য তাঁরা বিটিআরসি-কে অনুরোধ করেছেন৷ এদিকে, তথ্য পাওয়ার সুযোগ না থাকায় অনকে সময় অভিযোগ পেলেও তদন্ত এগিয়ে নেয়া যায় না৷ তাই মনিরুল ইসলামের কথায়, সাইবার অপরাধ দমনে এখন পুলিশের প্রযুক্তি এবং দক্ষ জনবল থাকলেও অনেকেই অভিযোগ করতে চান না সামাজিক কারণে৷
ওদিকে তথ্য প্রযুক্তিবিদ জাকারিয়া স্বপন ডয়চে ভেলেকে বলেন, ফেসবুক বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী কেন, যে কোনো ব্যক্তিকে হত্যার হুমকি দেয়া অপরাধ৷ তাই আদালত প্রধানমন্ত্রীকে হত্যার হুমকিদানকারীকে কারাদণ্ড দিয়ে ন্যায় বিচারই করেছে৷ এতে অন্যরাও সতর্ক হবেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারে আইনি ব্যবস্থার কথা মাথায় রাখবেন৷ তবে তিনি নতুন সন্ত্রাস দমন আইন নিয়ে আশঙ্কাও প্রকাশ করেন৷
জাকারিয়া স্বপন বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কেউ সরকারের কাজ, নীতি বা সিদ্ধান্তের সমালোচনা করলে এই আইনে তাঁকে বিচারের আওতায় আনা যাবে৷ তিনি মনে করেন, সরকার কেন, প্রধানমন্ত্রীসহ যে কোনো ব্যক্তির সমালোচনার অধিকার সাংবিধানিক অধিকার, এটা মত প্রকাশের স্বাধীনতা৷ কিন্তু এই আইনে তা খর্ব হবে৷ এর ফলে মত প্রকাশ নিয়ন্ত্রিত হয়ে পড়বে, যা গণতন্ত্রের জন্য ক্ষতিকর৷ তিনি মনে করেন, সরকারের বোঝা উচিত যে সমালোচনা তাদের ক্ষতি নয় বরং উপকারই করে৷