ফেসবুক লাইক বাণিজ্য
১১ জানুয়ারি ২০১৪ফেসবুকের বয়স প্রায় ১০ বছর হতে চললো৷ পৃথিবীর সবচেয়ে বড় সামাজিক যোগাযোগ সাইট এটি৷ আর এই সাইট ঘিরে বাণিজ্যেরও শেষ নেই৷ ফেসবুকের সুবিধা শুধু জাকারবার্গ নয়, নিচ্ছে বিশ্বের প্রায় সব বড় প্রতিষ্ঠান৷ হলিউড, বলিউড তারকারাও এক্ষেত্রে পিছিয়ে নেই৷
মজার বিষয় হচ্ছে ফেসবুক, টুইটার, ইউটিউব এবং অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ সাইটে নিজেদের শক্ত অবস্থান বোঝাতে অনেকে ‘ভুয়া লাইকও' কিনছেন৷ খুব সস্তায় ইন্টারনেটে বিকাচ্ছেও তা৷ কিন্তু নৈতিকতার প্রশ্নে ‘ভুয়া লাইক' কেনাটা প্রতিষ্ঠান বা তারকা সবার ক্ষেত্রেই ক্ষতিকর৷
ইটালির নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ এবং ব্লগার আন্দ্রেয়া স্ট্রোপা এবং কার্লা ডি মিশায়েলি হিসেব করে দেখেছেন, ২০১৩ সালে ভুয়া টুইটার ‘ফলোয়ার' বিক্রি করে ৪০ থেকে ২৩০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের মতো আয় করেছে অনেক প্রতিষ্ঠান৷ ফেসবুকের ক্ষেত্রে এই সংখ্যা ২০০ মিলিয়নের মতো৷ শুধু লাইকই নয়, টাকার বিনিময়ে ওয়েবসাইট কিংবা ভিডিও-র জন্য ক্লিকও কিনছে অনেক প্রতিষ্ঠান৷
টাকা দিয়ে লাইক কেনার তালিকায় রয়েছে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও৷ তাদের ফেসবুক পাতায় লাইকের সংখ্যা চার লাখের বেশি৷ লাইক বাড়াতে এই মন্ত্রণালয় কয়েক লাখ মার্কিন ডলার খরচ করেছে৷ ২০১৩ সালে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ফেসবুক পাতা সবচেয়ে জনপ্রিয় ছিল কায়রোতে৷
মার্কিন বার্তাসংস্থা অ্যাসোসিয়েটস প্রেস (এপি) এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা হচ্ছে লাইক বা ‘ক্লিক বাণিজ্যের' আন্তর্জাতিক কেন্দ্র৷
ইউনিক আইটি ওয়ার্ল্ড নামের ঢাকার একটি সংস্থার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম জানিয়েছেন, তিনি তাঁর খদ্দেরের সামাজিক যোগাযোগ পাতা ‘লাইক' করার জন্য অন্যদের পয়সা দিয়ে থাকেন৷ ফলে ফেসবুক, টুইটার বা গুগলের পক্ষে এসব লাইক ভুয়া হিসেবে গণ্য করা বেশ কঠিন৷
সাইফুল ইসলাম দাবি করেন, ‘‘যেসব একাউন্ট থেকে লাইক বা ক্লিক করা হয় – সেগুলো ভুয়া নয়, আসল৷''
ফেসবুকের সাম্প্রতিক হিসেবে দেখা গেছে, সাইটটি থাকা অনেক পাতাই সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় ঢাকা শহরে৷ ফুটবল তারকা লিওনেল মেসির ফেসবুক পাতায় ভক্তের সংখ্যা প্রায় ৫১ মিলিয়ন৷ এই পাতা সবচেয়ে জনপ্রিয় ঢাকায়৷ একইভাবে ফেসবুকের নিজস্ব নিরাপত্তা পাতা এবং গুগলের ফেসবুক পাতাও লাইকের বিচারে সবচেয়ে জনপ্রিয় ঢাকায়৷
অবশ্য, ফেসবুক বা টুইটারে ব্যাপক জনপ্রিয় অধিকাংশ পাতা ‘ভুয়া লাইকে' ভরা – এমনটা ভাবার কোনো কারণ নেই৷ বরং লাইক বাড়ার পেছনে যৌক্তিক এবং বিশ্বাসযোগ্য কারণও থাকে৷ উদাহরণস্বরূপ বলা যেতে পারে, বার্গার কিংয়ের কথা৷ এই ফাস্ট ফুড চেইনের ফেসবুক পাতা কয়েক সপ্তাহ লাইকের বিচারের সবচেয়ে জনপ্রিয় ছিল পাকিস্তানের করাচিতে৷ মূলত পাকিস্তানে বার্গার কিং-এর কয়েকটি শাখা চালু হওয়ার পর এমনটা হয়েছিল৷
উল্লেখ্য, ডয়চে ভেলে বাংলা বিভাগের ফেসবুক পাতায় গত এক মাসে লক্ষাধিক নতুন ‘লাইক' যোগ হয়েছে৷ ‘ফেসবুক ইনসাইটস' অনুযায়ী, এসব লাইকের অন্যতম উৎস হচ্ছে ‘পেজ সাজেশন্স'৷ মূলত বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে প্রকাশিত বিভিন্ন প্রতিবেদন নিয়ে ডয়চে ভেলের ফেসবুক পাতায় ব্যাপক আলোচনার সঙ্গে এই বৃদ্ধির সম্পর্ক রয়েছে৷