ফেসবুক বিপ্লবের শুরুটা মিশরে, না বাংলাদেশে!
২০ জুন ২০১১গত বছরের জুন মাসের ঘটনা৷ মিশরের আলেকজান্দ্রিয়া শহরের সিদি গাবার এলাকার এক যুবককে বেধড়ক মারধর করল দুই পুলিশ৷ কখনো দেয়ালের সঙ্গে তরুণটির মাথা ঠুকে দেওয়া, কখনো সিঁড়ির উপরে নির্যাতন৷ পাশবিক নির্যাতনের পর তাঁকে ফেলে যাওয়া হয় একটি হাসপাতালের সামনে৷
সাইদের মৃত্যু
যুবকটি হাসপাতালের সামনেই মারা যান৷ তাঁকে চিকিৎসার সুযোগ পায়নি ডাক্তারা৷ তখন তাঁর বয়সই বা কত? মাত্র ২৮৷ সেই বয়সেই ঝরে গেল একটি যুবকের প্রাণ৷ যুবকটির নাম খালিদ মোহাম্মদ সাইদ৷ পুলিশ জনসমক্ষে তাঁর উপর নির্যাতন চালিয়েছিল৷ অনেক মানুষ সেই বর্বরতায় কেঁপে ওঠে সেদিন৷
মিশরে সরকার পতন
সাইদের মৃত্যু বৃথা যায়নি৷ বরং তাঁর মরণের মধ্য দিয়ে রচিত হয়েছিল মিশরের শাসকগোষ্ঠীর পতন৷ মিশরীয়রা জরুরি আইনের অন্তরালে নিজেদের অধিকার আর হারাতে চায়নি৷ ফলাফল মুবারকের বহু বছরের শাসনের পতন৷
ফেসবুক
খালেদ সাইদকে নির্যাতনের গল্প আর ছবি মানুষের মধ্য ছড়িয়েছিল ফেসবুকের বদৌলতে৷ এই সামাজিক নেটওয়ার্কিং সাইটে একটি পাতা আছে, নাম ‘‘উই আর খালেদ সাইদ''৷ এই পাতার ভক্তের সংখ্যা প্রায় ১৫ লাখ৷ মিশর সরকারের পতনে বিশেষ ভূমিকা রাখে এই পাতা৷ ডয়চে ভেলের সেরা ব্লগ অনুসন্ধান প্রতিযোগিতার বেস্ট সোশ্যাল অ্যাক্টিভিজম ক্যাম্পেইন বিভাগে জুরি অ্যাওয়ার্ড জয় করেছে ‘‘উই আর খালেদ সাইদ''৷
সামাজিক সচেতনতায় ফেসবুক
সামাজিক সচেতনতায় ফেসবুকের এমন ব্যবহার সম্পর্কে বাংলা ব্লগার আরিফ জেবতিক বলেন, ফেসবুকের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের কথা বলার জায়গাটুকু তৈরি হচ্ছে৷ এবছর ব্যবহারকারীদের ভোটে সেরা বাংলা ব্লগ নির্বাচিত হয় আরিফ জেবতিক'এর ব্লগ৷ তিনি বলেন, ফেসবুকের মাধ্যমে মিশরে গণআন্দোলনের কয়েক বছর আগেই বাংলাদেশে ফেসবুক বিপ্লব হয়েছিল৷ একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে সরকারের উপর চাপ সৃষ্টি করতে সক্ষম হয় বাংলাদেশের তরুণরা৷ এজন্য তারা বেছে নিয়েছিল ইন্টারনেট, বিশেষ করে ফেসবুক৷
ব্লগার ও সাংবাদিক আরিফ জেবতিক মনে করেন, সমাজ সচেতনতায় ফেসবুকের এই ব্যবহার আরো বাড়বে৷ স্বাধীন মত প্রকাশে প্রচলিত গণমাধ্যমের চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে ইন্টারনেট৷
জন্ম ২০০৪ সালে
যে ফেসবুক নিয়ে এত আলোচনা, সেটির জন্ম কিন্তু খুব বেশিদিন আগে নয়৷ ২০০৪ সালে ফেব্রুয়ারি মাসে মার্কিন তরুণ মার্ক জাকারবার্গ তাঁর আরও তিন বন্ধুসহ ফেসবুক শুরু করেন৷ শুরুতে এটির পরিধি বেশ ছোট ছিল৷ এর ব্যবহার বলতে ছিল বন্ধুত্বের আদানপ্রদান আর অনলাইন আড্ডা৷ সেই ফেসবুকের ব্যবহারকারী বর্তমানে ৬০ কোটির বেশি৷ বর্তমানে সামাজিক আন্দোলন, গণজোয়ার কিংবা মানবাধিকার তথা গণমানুষের মুখপাত্র হয়ে উঠেছে ফেসবুক৷ মিশর, টিউনিশিয়া, লিবিয়া, সিরিয়ায় গণআন্দোলনের পেছনে শক্তি এই ফেসবুকই৷
প্রতিবেদন: আরাফাতুল ইসলাম
সম্পাদনা: দেবারতি গুহ