ক্ষুব্ধ বাংলাদেশ
৮ সেপ্টেম্বর ২০১৩মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মিজানুর রহমান ডয়চে ভেলের কাছে এই বিচারকে ‘তামাশা' বলে উল্লেখ করেছেন৷ তিনি বলেন, ফেলানী হত্যা মামলার রায়ে কনস্টেবল অমিয় ঘোষের বেকসুর খালাস কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না৷ এটি অনাকাঙ্খিত এবং অনভিপ্রেত৷ এখানে বিচারের নামে ‘তামাশা' করা হয়েছে৷ এতে শুধু ফেলানীর আত্মার সঙ্গে নয়, তার পরিবারের সঙ্গে এবং পুরো জাতির সঙ্গে প্রতারণা করা হয়েছে৷ ন্যায়বিচারের পরিপন্থী এই রায় নতুন ক্ষতের সৃষ্টি করেছে৷
তিনি বলেন এই বিচার হয়েছে ভারতের অভ্যন্তরীণ প্রক্রিয়ায়৷ বাংলাদেশের আইনি পদক্ষেপ নেয়ার কোনো সুযোগ নেই৷ তাই ভারতকেই আপিলের ব্যবস্থা করতে হবে৷ তিনি দাবি করেন আপিলের কাজে যেন ভারতীয় মানবাধিকার কমিশনকে সম্পৃক্ত করা হয়৷ বাংলাদেশের জাতীয় মানবাধিকার কমিশন তাদের সহায়তা করবে৷
আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ এই রায় প্রত্যাখ্যান করেছেন৷ তিনি সাংবাদিকদের বলেন, এই রায়ে ন্যায়বিচারের প্রতিফলন ঘটেনি৷ এর বিরুদ্ধে আপিল হওয়া দরকার৷ তবে এ বিষয় নিয়ে কাজ করবে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়৷
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মহীউদ্দিন খান আলমগীর রায়ের প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন, ফেলানী হত্যার ঘটনা দুই দেশের জন্যই দুঃখজনক, লজ্জাজনক৷ তিনি বলেন ফেলানী হত্যার ব্যাপারে বাংলাদেশ ভারতীয় কর্তৃপক্ষের কাছে সুবিচার চেয়েছিল৷ আইন অনুযায়ী বিএসএফ এর আদালতে তার বিচার কাজও হয়েছে৷ কিন্তু তাতে ফেলানীর ব্যাপারে বাংলাদেশ যে সুবিচার আশা করেছিল তা পাওয়া যায়নি৷ তিনি বলেন ফেলানী হত্যার রায়সহ মামলা সংক্রান্ত প্রাথমিক তথ্য পাওয়া গেলেও বিস্তারিত বিবরণ এখনো পাওয়া যায়নি৷ পাওয়া গেলে সরকার তার অবস্থান জানাবে৷
এদিকে ফেলানী হত্যা মামলার চূড়ান্ত রায় পাওয়া পর্যন্ত ধৈর্য্য ধরার আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশে ভারতের হাই কমিশন৷ ভারতীয় হাই কমিশনের মুখপাত্র ঢাকায় সংবাদ মাধ্যমকে জানান, এটি ফেলানী হত্যার বিচারের ‘প্রথম ধাপ'৷ রায়ের বিষয়টি এখন যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে৷ চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের জন্য অপেক্ষা করা উচিত৷
২০১১ সালের ৭ জানুয়ারি ভোরে বাংলাদেশের কুড়িগ্রাম সীমান্তে ভারতের কুচবিহার জেলার চৌধুরী হাট সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়ার ওপর ১৪ বছর বয়সের ফেলানীকে এক বিএসএফ সদস্য গুলি করে হত্যা করে৷ তার লাশ দীর্ঘক্ষণ কাঁটাতারের বেড়ার ওপর ঝুলে ছিল৷ সেই ছবি স্থানীয় এবং আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশ পেলে শুধু এই অঞ্চলেই নয়, সারা বিশ্বে নিন্দা ও প্রতিবাদের ঝড় ওঠে৷ এরপর শুক্রবার ভারতের কুচবিহারে বিএসএফ এর বিশেষ আদালত হত্যা মামলার একমাত্র আসামি কনস্টেবল অমিয় ঘোষকে বেকসুর খালাস দেন৷