ফেলানী হত্যার বিচার
২ আগস্ট ২০১৩২০১১ সালের ৭ই জানুয়ারি বাংলাদেশের কুঁড়িগ্রাম সীমান্তে ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ-এর হাতে নিহত হয় কিশোরী ফেলানী৷ হত্যাকাণ্ডের পর তার লাশ সীমান্তের কাঁটাতারের ওপর ঝুলে থাকে৷ সেই ছবি দেশি-বিদেশি সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ হলে শুধু বাংলাদেশেই নয়, সারা দুনিয়ায় এ নিয়ে সমালোচনার ঝড় ওঠে৷ নিন্দা ও প্রতিবাদ জানায় আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলো৷
শুরু থেকেই বাংলাদেশ এই হত্যাকাণ্ডের বিচার দাবি করে আসছিল৷ ভারত ইতিমধ্যেই এই ঘটনায় জড়িত বিএসএফ সদস্যের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নিয়ে এফআইআর দাখিল করেছে৷ এখন শুরু হবে বিচার৷ আর এই বিচার করতে কুচবিহারে বিএসএফ-এর বিশেষ আদালত গঠন করা হয়েছে৷ মামলায় আইনজীবী হিসেবে থাকছেন কুঁড়িগ্রাম জেলা আদালতের সরকারি কৌঁসুলি আব্রাহাম লিংকন, সাক্ষী হিসেবে ফেলানীর বাবা নুরুল ইসলাম, মামা আব্দুল হানিফ এবং বিজিবি-র প্রতিনিধি হিসেবে লে. কর্ণেল জিয়াউল হক খালেদ কুচবিহারে যাবেন৷
সরকারি কৌঁসুলি আব্রাহাম লিংকন ডয়চে ভেলেকে জানান, ফেলানীর লাশের সুরতহাল এবং পোস্টমর্টেম রিপোর্ট, সেই সময়ে কাঁটাতারের বেড়ায় ফেলানীর ঝুলন্ত লাশের ছবি ছাড়াও ফেলানীর বাবা এবং মামা হত্যাকাণ্ডের প্রত্যক্ষদর্শী৷ এছাড়া বিএসএফ এই ঘটনায় সেখানে এফআইআর দাখিল করেছে৷ তাতে একজনকে অভিযুক্ত করে ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ দেয়া হয়েছে৷ এছাড়া, হত্যাকাণ্ডের সময় কুঁড়িগ্রাম সীমান্তে দায়িত্বরত বিএসএফ সদস্যদের ‘ডিউটি রস্টার'-ও আছে৷ এ সব দিয়েই মামলার অপরাধী এবং অপরাধ প্রমাণ করা যাবে৷
তিনি বলেন, বিএসএফ-এর বিশেষ আদালতে তাঁর প্রধান যুক্তি হবে ফেলানী যদি কোনো অপরাধও করে থাকত তাহলে তাকে আটক করে বিএসএফ তাদের আইন এবং ১৯৭৪-এর সীমান্ত চুক্তি অনুযায়ী শাস্তি বা ব্যবস্থা নিতে পারত৷ কিন্তু কেন একজন কিশোরীর জীবন কেড়ে নেয়া হলো?
লিংকন জানান, তাঁরা ন্যায় বিচার আশা করেন৷ ভারত বিচারের উদ্যোগ নিয়ে তাদের সদিচ্ছার পরিচয় দিয়েছে৷ আর এই বিচারের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক আরো সুদৃঢ় হবে৷ সাধারণ মানুষের মধ্যে আস্থার ভাব ফিরে আসবে৷ কমে আসবে সীমান্ত হত্যাকাণ্ড৷ বিএসএফ সদস্যরা বুঝতে পারবেন গুলি করলে তাদের জবাবদিহি করতে হবে৷ তিনি জানান, তাঁদের চারজনকেই ভারতের ভিসা দেয়া হয়েছে৷ তাঁদের কাছে পাঠানো হয়েছে প্রয়োজনীয় কাগজ-পত্রও৷ ঈদের পরই তাঁরা মামলার জন্য কুচবিহার যাবেন৷
এদিকে ফেলানীর বাবা নুরুল ইসলাম ডয়চে ভেলেকে জানান, তিনি আর কখনোই তাঁর ফেলানীকে ফিরে পাবেন না৷ কিন্তু হত্যাকাণ্ডের বিচার হলে তিনি শান্তি অবশ্যই পাবেন৷ তিনি চান আর যেন কোনো ফেলানীকে জীবন দিতে না হয়৷ তিনি জানান, হত্যাকাণ্ডের পর সরকারের পক্ষ থেকে তাদের তিন লাখ টাকা অর্থ সহায়তা দেয়া হয়েছে৷ এছাড়া আর কোনো সহায়তা তাঁরা পাননি৷