1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ফুল, কৃত্রিম মেরুদণ্ড হাতে ডাক্তারদের মিছিল আটকালো পুলিশ

২ সেপ্টেম্বর ২০২৪

পুলিশ কমিশনারের ইস্তফার দাবিতে সোমবার লালবাজার অভিযান করেন জুনিয়র ডাক্তাররা৷ পুলিশের বাধা৷ রাস্তায় বসলেন তারা৷

https://p.dw.com/p/4kB92
কলকাতায় পুলিশ কমিশনারের দাবিতে জুনিয়র ডাক্তারদের মিছিল।
প্রতীকী মেরুদণ্ড হাতে জুনিয়র ডাক্তারদের লালবাজার অভিযান। ছবি: Satyajit Shaw/DW

মিছিলের সামনে থাকা জুনিয়র ডাক্তারদের অনেকের হাতে ছিল একটা কৃত্রিম মেরুদণ্ড৷ জুনিয়র ও সিনিয়র চিকিৎসকদের হাতে ছিল লাল গোলাপ ফুল৷ আর তাদের গলায় ছিল স্লোগান, ‘বিনীত তুমি লজ্জা কর/ এবার তুমি গদি ছাড়'৷ বিনীত মানে কলকাতা পুলিশের কমিশনার বিনীত গোয়েল, যার পদত্যাগের দাবিতে বিশাল মিছিল করলেন জুনিয়র ডাক্তাররা৷

এক নারী জুনিয়র ডাক্তার বললেন, ‘‘ওই মেরুদণ্ডটা প্রতীকী৷ আপনারা দেখলেই বুঝতে পারবেন৷'' অন্যরা বলেন, ‘‘আমরা পুলিশ কমিশনারের হাতে তার ইস্তফার দাবিতে স্মারকলিপি দিতে চাই৷''

এই লালবাজার অভিযানের ডাক দিয়েছিল জুনিয়র ডাক্তারস ফ্রন্ট৷ তাদের অভিযোগ, কলকাতা পুলিশ প্রমাণ লোপের চেষ্টা করেছে, প্রথমে আরজি কর হাসপাতালে ধর্ষণ ও হত্যা এবং তারপর হাসপাতালে ঢুকে দুষ্কৃতীদের তাণ্ডব বন্ধ করতে পুলিশি ব্যর্থতার দায় নিয়ে পুলিশ কমিশনারকে পদত্যাগ করতে হবে৷

কিন্তু লাল গোলাপ হাতে কেন এই অভিযান? জুনিয়র ডাক্তাররা বলেছেন, লাল গোলাপ এই জন্য যে পুলিশ কমিশনার অন্তত যেন বুঝতে পারেন, তিনি ও তার বাহিনীর সদস্যরা যা করেছেন তা ঠিক নয়৷ ৷ তাদের আটকানো হলে তারা পুলিশের হাতে গোলাপ ধরিয়ে দেবেন৷ বলা যেতে পারে, জুনিয়র ডাক্তাররা প্রতিবাদ করতে গান্ধীগিরির পথে হেঁটেছেন৷ আর মিছিলে পা মেলানো সিনিয়র ডাক্তাররা বলেছেন, পুলিশ যাতে তাদের কাজ করতে পারে সেই ব্যবস্থা করতে হবে৷ দুর্নীতিগ্রস্তদের সরাতে হবে৷

বৌবাজারে পুলিসের ব্যারিকেড।
জুনিয়র ডাক্তারদের লালবাজার অভিযান আটকাতে এভাবেই রাস্তা বন্ধ করে রাখে পুলিশ। ছবি: Satyajit Shaw/DW

জুনিয়র ও সিনিয়র ডাক্তারদের অভিযোগ, কলকাতা পুলিশ যে সুচতুরভাবে তদন্ত ধামাচাপা দিতে চাইছে, তা সুপ্রিম কোর্টের শুনানি থেকে স্পষ্ট৷ তাই তারা পুলিশ কমিশনারের অপসারণ চান৷

মিছিল থেকে স্লোগান উঠলো, ‘এই লড়াই জিতবে কে, তুমি আমি আবার কে', ‘লক্ষ কণ্ঠে একই স্বর, জাস্টিস ফর আরজি কর'৷

জুনিয়র ডাক্তাররা প্রথমেই জানিয়েছিলেন, তাদের আন্দোলন শান্তিপূর্ণ থাকবে৷ যেখানে পুলিশ থামাবে, সেখানে তারা বসে পড়বেন৷ পুলিশ অনেক আগে থেকেই বৌবাজারের রাস্তা বন্ধ করে দেয়৷ একের পর এক জায়গায় ব্যারিকেড লাগানো হয়৷ তার মধ্যে একটি ব্যারিকেড ছিল নয় ফুট উঁচু৷ সেই লোহার খাঁচার মতো ব্যারিকেড চেন দিয়ে আটকে তালাবন্ধ করে দেয়া হয়েছিল৷ তার পিছনে ঢাল হাতে পুলিশ লাঠি নিয়ে প্রস্তুত ছিল৷ প্রস্তুত ছিল জলকামান৷ তৈরি ছিল কাঁদানে গ্যাস ছোড়ার ব্যবস্থা৷ এভাবেই লালবাজারকে সুরক্ষিত দুর্গ করে তোলা হয়েছিল৷

জুনিয়র ডাক্তারদের প্রশ্ন ছিল, একটা শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ মিছিলকে আটকানোর জন্য এত কাণ্ড করা হলো৷ অথচ, ১৪ অগাস্ট রাতে সেই পুলিশ দুষ্কৃতীদের তাণ্ডব বন্ধ করতে পারলো না কেন?

বিক্ষোভকারীদের রুখতে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়৷ সেখানে জুনিয়র ডাক্তারদের ঢুকতে দেয়া হবে না পুলিশ জানিয়ে দেয়৷

পুলিশ কমিশনারের ইস্তফার দাবিতে জুনিয়র ডাক্তারদের বিশাল মিছিল কলকাতায়।
জুনিয়র ডাক্তারদের মিছিলকে লালবাজারের অনেক আগে আটকে দেয় পুলিশ। ছবি: Satyajit Shaw/DW

জুনিয়র ডাক্তারদের পুলিশ আটকে দেয়ার পর তারা পুলিশ কমিশনারের কুশপুতুল পুড়িয়েছেন৷ পুলিশকে বারবার অনুরোধ করেছেন, তাদের পুলিশ কমিশনারের কাছে যেতে দেয়া হোক৷ পুলিশের তরফ থেকে বারবার ঘোষণা করা হলো, সিসিটিভি ক্যামেরা চালু আছে, সেটা যেন জুনিয়র ডাক্তাররা খেয়াল রাখেন৷

বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে তখন প্রশ্ন তোলা শুরু হয়ে যায়, ১৪ অগাস্ট যখন রাতে দুষ্কৃতীদের ঠেকাতে পুলিশ কেন কোনো ব্যবস্থা নিতে পারেনি? আন্দোলনকারীরা তারপর রাস্তায় বসে পড়েন৷ তারা কেউ ব্যারিকেডে ধাক্কা মারেননি, পুলিশের সঙ্গে মারামারি করেননি৷ তারা স্লোগান দিয়ে গেছেন, নিজেদের দাবি জানিয়ে গেছেন৷

পুলিশ তখন বলে, জুনিয়র ডাক্তারদের প্রতিনিধিদলকে তারা লালবাজারে যেতে দেবে৷ তারাই লালবাজারে প্রতিনিধিদলকে নিয়ে যাবেন৷ কিন্তু জুনিয়র ডাক্তাররা বলেন, এতদূরে মিছিল আটকানো যাবে না৷ তারা তাদের সঙ্গীদের এতদূরে রেখে যাওয়াটা নিরাপদ বলে মনে করছেন না৷ তাদের মিছিলকে লালবাজারের কাছে যেতে দিতে হবে৷ তারপর প্রতিনিধিরা লালবাজারে গিয়ে পুলিশ কমিশনারের হাতে তার ইস্তফা চেয়ে দাবিপত্র পেশ করবেন৷

এক ছাত্র নেতা বলেন, ‘‘আমাদের শিরদাঁড়ায় জোর আছে৷ আমরা যাবই৷ আপনারা দেখুন৷ আমরা মনে করি, গণতান্ত্রিক কর্তব্য আমরা পালন করেছি৷ পুলিশ তাদের দায়িত্ব পালন করুক৷''

জুনিয়র ডাক্তারদের মিছিলে পুলিশ কমিশনারকে নিয়ে প্রচুর পোস্টার ছিল।
জুনিয়র ডাক্তারদের দাবি ছিল, পুলিশ কমিশনারকে দায় নিয়ে ইস্তফা দিতে হবে। ছবি: Satyajit Shaw/DW

জিএইচ/জেডএইচ (এবিপি আনন্দ, টিভি৯)