‘রোবোকাপে’ চ্যাম্পিয়ন ইরান
১৭ এপ্রিল ২০১৪রোবোটরা ফুটবল খেলছে শুনলে জাপান কিংবা দক্ষিণ কোরিয়ার কথা মনে হওয়াটাই স্বাভাবিক৷ অথচ এই নবম রোবোকাপে ঐ দু'টি দেশ থেকে কোনো টিমই ছিল না৷ সবুজ ফেল্টের উপর লাল বল, সেটিকে ঠেলে গোলে পাঠাতে হবে৷ রোবোটগুলোর উচ্চতা দুই ফুট কিংবা ৬০ সেন্টিমিটার৷ দু'বার করে ১০ মিনিটের খেলা, মোট ২০ মিনিট৷
আসল কথা হলো, রোবোটগুলোকে খেলা শুরু হওয়ার আগেই প্রোগ্রাম করে দিতে হবে৷ ‘‘খেলা একবার শুরু হলে রোবোটগুলো সম্পূর্ণ স্বনির্ভর,'' বলেছেন বিজয়ী দলের নভিন শরহৌদি, যিনি আবার তেহরানের কাসভিন আজাদ ইউনিভার্সিটির সফ্টওয়্যার ও কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং-এর ছাত্র৷
পেশাদারি ফুটবলে রেস্ত থাকলে ক্লাব যে-কোনো নামি-দামি প্লেয়ার কিনতে পারে৷ ফর্মুলা ওয়ান মোটর রেসিং-এ মার্সিডিজ বা ফেরারিও টাকার খেলা দেখাতে পারে৷ কিন্তু রোবোকাপে সে উপায় নেই: সব রোবোটই এক, সব ক'টি আল্ডেবারান রোবোটিক্স নামধারী একটি ফরাসি কোম্পানির ডিজাইন৷ কোম্পানিটি রোবোকাপ দলগুলির প্রোগ্রামারদের শুধুমাত্র কাঁচা প্রযুক্তিটুকু দেয়৷ রোবোটের ‘লোকোমোশন', অর্থাৎ নড়াচড়া, ‘পরিবেশ সম্পর্কে অনুভূতি', অর্থাৎ পারিপার্শ্বিকের খবরাখবর নেওয়া এবং রোবোটের আচরণ সংক্রান্ত ‘ফাইন টিউনিং' করে থাকেন প্রোগ্রামাররা নিজে৷ প্রত্যেকটি রোবোটে দু'টি করে ক্যামেরা লাগানো আছে: একটি তার মাথায়, অপরটি তার থুতনিতে৷ এই দুই ক্যামেরা দিয়ে রোবোট বলটাকে দেখে৷ দলের অন্যান্য ‘খেলোয়াড়দের' সঙ্গে আলাপচারি চলে ‘ওয়্যারলেস নেটওয়ার্কিং'-এর মাধ্যমে৷
তেহরানের এমআরএল দল জিতল ইরানের বিরুদ্ধে সব শাস্তিমূলক ব্যবস্থা সত্ত্বেও৷ ‘‘আমরা সব আপগ্রেড পাই না; নতুন রোবোট কিংবা তার পার্টস কিনতে পারি না,'' বলেছেন ২০ বছর বয়সের শরহৌদি৷ যেহেতু রোবোটগুলোর সৃষ্টিকর্তা ফরাসি কোম্পানিটি এবার রোবোকাপে আসেনি, কাজেই ভাঙা রোবোটগুলো মেরামতেরও ব্যবস্থা করা যায়নি৷ তা সত্ত্বেও জিতেছে এমআরএল, কেননা ফুটবল ফুটবলই, তার মতিগতি, মর্জিমেজাজ বোঝা কম্পিউটার বিশেষজ্ঞদের পক্ষেও সবসময় সম্ভব নয়৷
যেমন এবারকার রোবোকাপে জার্মানির লাইপজিগ থেকে এসেছিল এইচটিডাবলিউকে দল৷ তাদের রোবোটগুলো বারংবার অন্যান্য রোবোটদের সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে উল্টে যাচ্ছিল – তা সে নিজের দলেরই হোক আর বিপক্ষ দলেরই হোক৷ কাজেই সাইডলাইনে বসে ‘‘টাইম আউট'' করতে হচ্ছিল তাদের৷
তবে সত্যিকারের ‘বিউটিফুল গেমের' সঙ্গে রোবোকাপের মূল পার্থক্য এই যে, রোবোটদের ভুলভ্রান্তি পর্যন্ত ভবিষ্যৎ গবেষণার কাজে লাগে৷ রোবোকাপই ধরুন: একটি রোবোটের পক্ষে একটা বল খুঁজে পাওয়া আর কোনো ত্রাণ অভিযানে একজন বিশেষ ব্যক্তি কিংবা বস্তু খুঁজে পাওয়ার মধ্যে কোনো তফাত আছে কি?
এসি/ডিজি (এএফপি, এপি)