1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ফুকুশিমা এখনও যন্ত্রণাকর এক স্মৃতি

৩ জানুয়ারি ২০১২

গত বছরের মার্চ মাসে জাপানে ঘটেছিল ভয়াবহ ভূমিকম্প ও সুনামি৷ তার চেয়েও ভয়াবহ ছিল ফুকুশিমার পরমাণু বিপর্যয়৷ দুর্গতদের অনেকেই এখনো অস্থায়ী বাড়িতে বাস করছে সেখানে৷ অনেক কিছুই হারিয়ে ফেলেছে তারা৷

https://p.dw.com/p/13cyU
ফুকুশিমা বিদ্যুৎ কেন্দ্রছবি: picture alliance/Kyodo

ফুকুশিমার মানুষরা স্বজন হারানোর বেদনা এখনো ভুলতে পারেনি, মানসিকভাবে অনেকেই এখনো বিপর্যস্ত৷ বৃদ্ধা মহিলা হিডেকো ইয়ামাডা কাঁদতে কাঁদতে জানালেন,‘‘আমি এখনো বিশ্বাস করতে পারছি না ওরা সবাই মারা গেছে৷ কেউই বেঁচে নেই৷''

অস্থায়ী বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে কথাগুলো বললেন ইয়ামাডা৷ তাঁর সামনে রাখা দুই নাতনির ছবি৷ ছবিগুলোকে ঘিরে রয়েছে অসংখ্য খেলনা এবং ফুলের তোড়া৷ তবে ঐ খেলনা দিয়ে খেলার জন্য আজ দুজনের একজনও বেঁচে নেই৷

ইয়ামাডার সুখের দিন এবং সুন্র স্মৃতিগুলো ভেঙে গেছে, ভাসিয়ে নিয়ে গেছে সুনামি৷ সেন্ডাই প্রদেশে ছিল তাঁর বাড়ি৷ তার স্বামী ছিলেন ব্যবসায়ী৷ সবকিছুই কেড়ে নিয়েছে সর্বনাশা সুনামি৷

তখনকার সেই ইয়ামাডার সঙ্গে এখনকার ইয়ামাডার কোন মিল নেই৷ জীবন যাত্রায় আকাশ পাতাল তফাৎ৷ ইয়ামাডা এবং তাঁর স্বামী এখন এধরণের অস্থায়ী বাড়িতে বসবাস করেন৷ সুনামির পর হাজার মানুষ তাদের ঘড়বাড়ি ছাড়তে বাধ্য হয়েছিল৷ বিশেষ করে ফুকুশিমার পরমাণু কেন্দ্রে বিস্ফোরণের পর জাপান সরকার আর কোন ধরণের ঝুঁকি নিতে রাজি হয়নি৷ সবাইকে সরিয়ে অন্যত্র নিয়ে যাওয়া হয়েছে৷

Flash-Galerie Japan Erdbeben Tsunami Evakuierte
দুর্ঘটনার পরপর এভাবে থাকতে হয়েছিল জাপানিদেরছবি: AP/Kyodo News

তাদের এই অস্থায়ী বাড়িতে মাত্র দুটি কামরা৷ তবে বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের জন্য এ ধরণের বাড়িতে থাকা খুবই সমস্যার৷ এই বাড়িগুলোর স্থানীয় নাম ‘কাসেটসু জুটাকু'৷ স্বামী কায়োকো কাওয়াসাকি জানান,‘‘আমরা পুরোদমে হিটার চালাচ্ছি৷ সারাক্ষণই তা চলছে৷ চুলা জ্বলছে রাত-দিন৷ বাড়িগুলো তাপ ধরে রাখার উপযোগী হিসাবে তৈরি করা হয়নি৷''

যদিও তাদের এই বাড়িতে থাকার জন্য ভাড়া দিতে হচ্ছে না, কিন্তু বিদ্যুতের খরচ তারাই দিচ্ছে৷ তার প্রয়োজন আছে৷ নয়তো গরম পানি পাওয়া যাবে না এবং হিটিং সিস্টেমও চালু করা যাবে না৷

স্বেচ্ছাসেবীরা এক ধরণের ফয়েল জানালায় লাগিয়ে দিচ্ছে যাতে করে ঠাণ্ডা বাতাস ঘরে প্রবেশ করতে না পারে৷ ইয়ামাডা জানান,‘‘এর ফলে ঠাণ্ডার হাত থেকে নিজেকে কিছুটা রক্ষা করা যায়৷''

কাওয়াসাকির প্রতিবেশী কিয়োকো মিয়াহারা অভিযোগ করেন থাকার এই ব্যবস্থা সম্পর্কে৷ দুই কামরার বাড়িতে তিনি তার ছেলেকে নিয়ে থাকেন৷ তিনি জানান, চাপাচাপি করে থাকতে হয়৷ দুই কামরার আয়তন ১৪ বর্গ ফুট৷ তবে মিয়াহারার সবচেয়ে বড় অভিযোগ হল, কেউই নির্দিষ্ট করে বলতে পারছে না কবে বা কখন তারা তাদের নিজের বাড়িতে ফিরে যেতে পারবে৷ তারা বসবাস করতো নামিতে৷ ফুকুশিমা দায়চি প্ল্যান্ট থেকে তা খুব কাছে৷ তিনি জানান,‘‘আমি এখন স্পষ্ট কিছু উত্তর চাই৷ আমরা মাঝে মাঝে শুনি বাড়িতে ফিরে যেতে পারবো আবার পরের দিনই শুনি যাওয়া ঠিক হবে না, নিরাপদ নয়৷''

তাদাও সাতোয়াহ শরণার্থীদের জন্য এই কমপ্লেক্স তৈরি করেছেন৷ প্রায় ৯০টি পরিবার এখানে থাকতে পারে৷ তিনি জানান,‘‘আমরা যখন আমাদের নিজের বাড়িতে ফিরে যেতে পারবো শুধুমাত্র তখনই ফুকুশিমার পরমাণু বিপর্যয় আমাদের কাছে অতীত হয়ে যাবে৷''

এই কমপ্লেক্সে যারা বসবাস করেন তাদের বেশির ভাগই বৃদ্ধ-বৃদ্ধা এবং এরা দিনের বেশিরভাগ সময়েই বাড়ির ভেতরে কাটান৷ বাইরে বার হননা৷

তবে স্বেচ্ছাসেবীরা মানসিকভাবে বিপর্যন্ত এসব মানুষকে সাহায্য করার চেষ্টা করছে৷ সাহায্যের হাত বাড়িতে দিয়েছে এসব বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের প্রতি৷ চেষ্টা করছে তাদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে৷ যা সত্যিই কঠিন এক কাজ৷

প্রতিবেদন: মারিনা জোয়ারদার

সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য