ফিলিস্তিনের মা-ভাই-বোন হারানো সেই শিশুটি
পরিবারের কেউ বেঁচে নেই ভেবে তার বাবাও মরতে চেয়েছিলেন৷ ভেবেছিলেন, ‘‘নিষ্ঠুর এ পৃথিবীতে থেকে কী লাভ!’’ ছয় বছরের সুজি সাতঘণ্টা পর ধ্বংসস্তূপ থেকে উঠে আসায় তিনিও ফিরে পেয়েছেন বাঁচার আনন্দ৷ দেখুন ছবিঘরে...
সুজি ছিল ‘নিরাপদ’ ঘরে
গত রোববার গাজার সেই এলাকাটি তখন ইসরায়েল থেকে উড়ে আসা রকেটের আঘাতে বারবার সশব্দে কাঁপছে৷ রিয়াদ এশকুন্তানা আর তার স্ত্রী নিজেদের সন্তানদের একটা ঘরে রেখে এলেন৷ তাদের মনে হয়েছিল সেই ঘরটিই সবচেয়ে নিরাপদ, রকেটের আওতার সবচেয়ে বাইরে৷ অন্য ভাই-বোনদের সঙ্গে সুজিও ছিল সেখানে৷
হঠাৎ ধসে পড়ে সব
কিন্তু এত করেও সন্তানদের নিরাপত্তা দিতে পারেননি রিয়াদ এশকুন্তানা৷ রকেটের আঘাতে প্রথমে দুটি দেয়াল, তারপর ছাদও ধসে পড়ে৷ ও ঘর থেকে স্পষ্ট শোনা যায় ছেলে জাইন-এর চিৎকার, ‘‘আব্বা! আব্বা!’’সুজিও ডাকে৷ কিন্তু মাঝে দেয়াল ভেঙে পড়ে ধংসস্তূপের দেয়াল গড়ে দেয়ায় সন্তানদের উদ্ধার করতে যেতে পারেননি রিয়াদ৷ ওপরে উদ্ধারকাজ চলার সময়ের ছবি৷
রিয়াদের বেঁচে যাওয়া
ভবনটি ধসে পড়ার পর প্রতিবেশীরা এসে ইট-সুরকির নীচ থেকে চেনা মানুষগুলোকে উদ্ধারের চেষ্টা করে ব্যর্থ হন৷ রিয়াদ খুব চেষ্টা করেও নিজের বেঁচে থাকার খবরটা তাদের জানাতে পারেননি৷ প্রায় ত্রিশ মিনিট পর প্রতিবেশীদের উদ্যোগেই পুলিশ আসে, উদ্ধারকর্মীরা আসে৷ ততক্ষণে কিছুটা শক্তি ফিরে পেয়েছেন রিয়াদ৷ ফলে তার কাতর আর্তনাদ শুনতে পান উদ্ধারকর্মীরা৷ বেঁচে যান রিয়াদ৷
রিয়াদের জীবনের সবচেয়ে নিঃসঙ্গ মুহূর্তগুলো
উদ্ধার করে শিফা হাসপাতালে নেয়া হলো রিয়াদকে৷ সেখানে তখন স্বজনদের ভীড়৷ এক শিশুকে আনতে দেখে নারীরা সেদিকে ছুটে যান, ‘‘ইয়াহিয়া নাকি? ইয়াহিয়া!’’ চার বছরের ইয়াহিয়া তখন আর বেঁচে নেই৷ শুনে দুজন নারী সেখানেই অজ্ঞান৷ তারপর জাইনের খবর, মেয়ে ডানার খবর, স্ত্রীর খবরও জেনে রিয়াদের মনে হলো আর কেউ বেঁচে নেই৷ মনে হলো, সবাইকে হারিয়ে একা একা বেঁচে থাকার কী দরকার! ওপরে গাজার ধসে পড়া ভবনের সামনে এক নারীর কান্না৷
সাত ঘণ্টা পর প্রাণের সাড়া!
বাড়ির সবাইকে চিনতেন বলে প্রতিবেশীরা জানতেন এখনো সুজি আছে ইট-সুরকির নীচে৷ তাই ভবন ধসে পড়ার সাত ঘণ্টা পরও চলছিল তাকে উদ্ধারের চেষ্টা৷ উদ্ধারকর্মীরা ধংসস্তূপের ফাঁকফোকরে মুখ রেখে ‘‘আল্লাহু আকবর’’ বলে করছেন৷ এখানে ওখানে খুঁজে খুঁজে হঠাৎ এক জায়গা থেকে শোনা গেল শিশুর দুর্বল কণ্ঠের মৃদু চিৎকার, ‘‘আল্লাহু আকবর!’’
‘আমাকে ক্ষমা করো’
উদ্ধার করে সুজিকেও নেয়া হয় শিফা হাসপাতালে৷ রিয়াদের পাশের বেডেই রাখা হয় তাকে৷ ছয় বছরের মেয়েটিকে দেখে রিয়াদ আবার ফিরে পেয়েছেন জীবনের মানে৷ একটু হলে সুজিকেও হারাতে হতো- এই ভেবে বুক কাঁপে তার৷ সুজির হাত ধরে বলেন, ‘‘আমার মেয়ে, আমাকে তুমি ক্ষমা করো! তুমি তখন ডেকে তোমার কাছে যেতে বলেছিলে৷ অনেক চেষ্টা করেও আমি তোমার কাছে যেতে পারিনি৷’’
সুজি ভালো আছে
পুরো ভবন ধসে পড়লেও, ধসে পড়া ভবনের নীচে সাত ঘণ্টা থাকলেও এক্স-রে রিপোর্ট বলছে, সুজি ভালো আছে৷ মাথাসহ এখানে-ওখানে একটু কেটে যাওয়া ছাড়া তেমন কিছুই হয়নি ছয় বছরের ফুটফুটে মেয়েটির৷