ফিনিক্স এখন মঙ্গলে
২৬ মে ২০০৮অনেক উত্কন্ঠা আর প্রতিক্ষার অবসান ঘটিয়ে মঙ্গল গ্রহের উত্তর মেরুতে সফলভাবে অবতরণ করেছে মার্কিন মহাকাশযান ফিনিক্স৷ রোববার গ্রিনিচ মান সময় ২৩.৫৩ ঘণ্টায় মহাকাশযানটি মঙ্গলগ্রহে অবতরণ করে৷ গ্রহটিতে পানির অস্তিত্ব খুঁজতে এবং সেখানে জীবন ধারণের প্রয়োজনীয় অবস্থা মূল্যায়ন করতেই এ মহাকাশযান পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন নাসার কর্মকর্তারা৷
ইতিমধ্যে ফিনিক্স মঙ্গলগ্রহের ছবি পাঠাতে শুরু করেছে৷ প্রথম ছবিটি মঙ্গলগ্রহের উত্তর মেরুর৷ ছবিটি পাথুরে, প্রচন্ড শৈত্যে জমাটবাধাঁ মাটির৷ মঙ্গলের উত্তর মেরুর এমন ছবি আগে কখনো দেখা যায়নি৷
এরপরের ছবিগুলোতে ফিনিক্স এর অবস্থান নিশ্চিত করা হয়েছে৷ ফিনিক্স এর চালিকা শক্তি হচ্ছে সৌর বিদ্যুত৷ আর এই বিদ্যুত পেতে ফিনিক্স এর গায়েই রয়েছে সোলার প্যানেল৷ একটি ছবিতে দেখা যাচ্ছে সোলার প্যানেলটি সঠিকভাবে অবস্থান করছে৷ এছাড়া ফিনিক্স এর স্টোরিও ক্যামেরা এবং আবহাওয়া স্টেশনও ঠিকঠাক আছে৷
কয়েকটি ছবিতে মঙ্গলের একটি উপত্যকা দেখা যাচ্ছে, যেখানে জমাটবাধা পানি আছে বলে ধারণা করছেন বিজ্ঞানীরা৷ এই উপত্যকাটি ফিনিক্স এর রোবোটিক বাহুর নাগালের মধ্যে রয়েছে৷
তবে এই রোবোটিক বাহু এখনো সচল করা হয়নি৷ আশা করা হচ্ছে মঙ্গলবার এই বাহু্টি কাজ শুরু করবে৷ বাহুটি লম্বায় সাত দশমিক সাত ফিট৷ মঙ্গলের মাটির তিনফুট গভীর পর্যন্ত এই বাহুটি ঢুকতে পারবে৷ মুলত মাটি এবং পানির নমুনা সংগ্রহ ও পরীক্ষার জন্য ব্যবহৃত হবে এই রোবোটিক বাহু৷ বাহুটিতে একটি ৩৫ মিলিমিটার সমমানের ল্যান্সযুক্ত শক্তিশালী ক্যামেরাও রয়েছে৷
পৃথিবী থেকে নয় মাসের যাত্রা শেষে এ মহাকাশযানটি মঙ্গল গ্রহে পৌছাঁয়৷ পৃথিবী থেকে তার যাত্রাপথের দুরত্ব ছিলো প্রায় ৬ লক্ষ ৭৫ হাজার কিলোমিটার৷ ফিনিক্স নামের এই মার্কিন মহাকাশযানটিই প্রথম কোনো মহাকাশযান হিসেবে, কোনো গ্রহের মেরু অঞ্চলে সফলভাবে অবতরণ করল৷
নাসা'র প্রধান মহাকাশ বিজ্ঞানী এড ওয়েইলার এ অভিযান সম্পর্কে বলেন, আগের দুইটি মঙ্গল অভিযানের চেয়ে এটা অনেক বেশি দুঃসাধ্য ছিল৷
২০০২ সালে বিজ্ঞানীরা মঙ্গলের মেরু অঞ্চলে মাটির নীচে বরফজমা তরলের সন্ধান পায়৷ এই তরলের নমুনা সংগ্রহ এবং জীবনের জন্য অন্যান্য প্রয়োজনীয় উপাদানের খোঁজে ২০০৭ সালের আগস্টে ফিনিক্সকে মঙ্গলের উদ্দেশ্যে পাঠানো হয়৷
এর আগে ১৯৯৯ সালে নাসা মঙ্গলের দক্ষিণ মেরুতে মহাকাশযান অবতরণের চেষ্টা চালায়৷ কিন্তু মিশনের একেবারে চূড়ান্ত পর্যায়ে গিয়ে সমস্যা দেখা দেওয়ায় তা আর সফল হয়নি৷ এর পরের মহাকাশযানের মিশনও বাতিল করে নাসা৷
তবে 'স্পিরিট' এবং 'অপরচুনিটি' কে পানির সন্ধানের জন্য মঙ্গলে পাঠাতে সক্ষম হয় তারা৷ আর তাই ফিনিক্স মঙ্গলে একা নয়, স্পিরিট আর অপরচুনিটিকে সঙ্গে নিয়ে আগামী বছর তিনেক মঙ্গলে থাকবে সে, এমন প্রত্যাশাই করছেন বিজ্ঞানীরা৷