1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ফাঁস করা প্রশ্নে ভর্তি ডাক্তারদেরও ধরা হবে

১৪ আগস্ট ২০২৩

১৬ বছর ধরে মেডিকেল কলেজে ভর্তির প্রশ্নপত্র ফাঁসের মাধ্যমে একটি চক্র শত শত শিক্ষার্থীকে মেডিকেল কলেজে ভর্তি করিয়েছে। তার চিকিৎসকও হয়েছেন।

https://p.dw.com/p/4V8hu
ফাইল ছবি: বাংলাদেশ ঢাকায় চারটি মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীদের চীনা-উত্পাদিত COVID-19 ভ্যাকসিন দেওয়া শুরু করেছে।
ফাইল ছবিছবি: Rashed Mortuza/DW

এখন প্রশ্ন উঠেছে ওইসব চিকিৎসককে কি চিহ্নিত করা সম্ভব? আর যদি সম্ভব হয় তাহলে তাদের বিরুদ্ধেও কি ব্যবস্থা নেয়া হবে?

পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) বিশেষ পুলিশ সুপার মুহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম ডয়চে ভেলেকে জানান,"যারা ফাঁস করা প্রশ্নপত্রের সুবিধা নিয়ে মেডিকেল কলেজে ভর্তি হয়েছেন, চিকিৎসক হয়েছেন তাদেরও আমরা চিহ্নিত করার চেষ্টা করছি। তাদেও বিরুদ্ধেও আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।” আর চিকিৎসক নেতারাও তাদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন।

সিআইডি ২০২০ সালের  ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের একটি মামলার তদন্ত করতে গিয়ে ১৬ বছর ধরে মেডিকেলের প্রশ্ন ফাঁসের ওই চাঞ্চল্যকর ঘটনা জানতে পেরেছে। ২০০১ সাল থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত প্রশ্ন ফাাঁসের তথ্য তারা পেয়েছে। গ্রেপ্তার করেছে ১২ জনকে। তাদের মধ্যে সাতজন চিকিৎসক । যারা গ্রেপ্তার হয়েছেন তারা হলেন, ডা. ময়েজ উদ্দিন আহমেদ, তার স্ত্রী ডা. সোহেলী জামান, ডা. মো. আবু রায়হান, ডা. জেড এম সালেহীন ওরফে শোভন, ডা. মো. জোবাইদুর রহমান ওরফে জনি, ডা. জিলুর হাসান ওরফে রনি, ডা. ইমরুল কায়েস ওরফে হিমেল, জহিরুল ইসলাম ভূঁইয়া ওরফে মুক্তার, রওশন আলী ওরফে হিমু, আক্তারুজ্জামান তুষার, জহির উদ্দিন আহমেদ ওরফে বাপ্পী ও আব্দুল কুদ্দুস সরকার।

ডাক্তাররা আইনের আওতায় আসবেন: তৌহিদুল

প্রথমে একজনকে গ্রেপ্তারের পর তার দেয়া তথ্য ধরে গত ৩০ জুলাই থেকে ৯ আগস্ট পর্যন্ত ঢাকা, টাঙ্গাইল, কিশোরগঞ্জ ও বরিশালে অভিযান চালিয়ে সিআইডি তাদের গ্রেপ্তার করে। চিকিৎসক ছাড়াও গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে আছেন কয়েকটি কোচিং সেন্টারের মালিক।

সিআইডি জানিয়েছে, চক্রের মুল হোতা ডা. জেড এম সালেহীন। তিনি মামলার এজাহারভুক্ত আসামি এবং স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে পাস করেছেন। তিনি থ্রি-ডক্টরস নামে একটি কোচিং সেন্টারের মাধ্যমে প্রশ্নপত্র ফাঁসের সঙ্গে জড়িত হন। ২০১৫ সালেও তিনি একবার র‌্যাবের হাতে আটক হয়েছিলেন। ডা. জিলুর হাসান পঙ্গু হাসপাতালের (নিটোর) চিকিৎসক। তিনি রংপুর মেডিকেল কলেজ থেকে পাস করেছেন। ড. ইমরুল কায়েস রংপুরের একটি বেসরকারি মেডিকেল কলেজ থেকে পাস করেন। ২০০৬ সাল থেকে তিনি প্রশ্ন ফাঁসের সঙ্গে জড়িত।

চিকিৎসক দম্পতি ডা. ময়েজ উদ্দিন আহমেদ ও ডা. সোহেলী জামান ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ থেকে পাস করেছেন। ডা. সোহেলী জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের চিকিৎসক। তারা ফেইম কোচিং সেন্টার নামে একটি কোচিং সেন্টারের মাধ্যমে মেডিকেলে ভর্তির প্রশ্ন ফাঁস করেন। ডা. আবু রায়হান ঢাাকা ডেন্টাল কলেজ থেকে পাস করেছেন। তিনি ছাত্র অবস্থায়ই প্রশ্ন ফাঁসের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। এছাড়া ই-হক কোচিং সেন্টারসহ আরো কিছু কোচিং সেন্টারের নাম এসেছে।

সিআইডির প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি মোহাম্মদ আলী মিয়া জানিয়েছেন, "২০০১ সাল থেকে পরবর্তী ১৬ বছরে মোট ১০ বার মেডিকেল কলেজে ভর্তির প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছে। এর মাধ্যমে শত শত শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছেন। আর চক্রের সদস্যরা গাড়ি বাড়িসহ বিপূল সম্পদের মালিক হয়েছেন। তাদের ব্যাংক একাউন্ট পরীক্ষা করে অর্থ ও সম্পদের তালিকা বের করা হচ্ছে।''

শুরু হয়েছে জোট সরকারের আমলে: আজিজ

সিাআইডি সূত্র জানায়, তারা এপর্যন্ত যে তথ্য পেয়েছেন তাতে ১৬  বছরে  ১০ বার প্রশ্নপত্র ফাঁসের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন মেডিকেল কলজে  কমপক্ষে দুই হাজারের মতো শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছেন। তারা ইতিমধ্যে পাস করে বেরিয়ে গেছেন। চিকিৎসক হয়েছেন। তারা কেউ সরকারি চিকৎসা প্রতিষ্ঠানে কাজ করছেন। কেউ বেসরকারি বা ক্লিনিক দিয়েছেন। প্রশ্নপত্র ফাঁসকারীদের কাছ থেকে বেশকিছু ডকুমেন্ট উদ্ধার করা হয়েছে।

সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার মুহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম জানান, "আমরা মোট ২৮ জনকে গ্রেপ্তার করেছি। সম্প্রতি গ্রেপ্তার করেছি ১২ জনকে। আমরা সব প্রমাণ হাতে নিয়ে তাদের আইনের আওতায় আনছি। আমরা সব দিকেই তদন্ত করছি। আরো কারা জড়িত তাদের ব্যাপারে তথ্য নিচ্ছি। এর সুবিধা কারা নিয়েছে তাদের ব্যাপারেও তদন্ত হচ্ছে।”

তিনি এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, "যারা ওই ফাঁস করা প্রশ্ন দিয়ে ভর্তি হয়েছেন, প্রশ্ন কিনেছেন, পাস করে চিকিৎসক হয়েছেন তাদের সঠিকভাবে চিহ্নিত করার কাজও চলছে। তাদেরও আইনের আওতায় আনা হবে।”

বাংলাদেশে সব মেডিকেল কলেজে কেন্দ্রীয় পরীক্ষার মাধ্যমে ভর্তি করা হয়। আর এর দায়িত্বে আছে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর। এ বিষয়ে জানতে অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে চেষ্টা করেও টেলিফোনে পাওয়া যায়নি। তবে ঢাকা মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. মো. শফিকুল আলম চৌধুরী বলেন, "এখন আর প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনা ঘটছে না। তবে হবেনা সেটা বলা যায় না। তাই আমরা আরো সতর্ক এবং আরো আধুনিক পদ্ধতি অবলম্বনের জন্য বলেছি। এটা দুঃখজনক যে ফাঁস করা প্রশ্নের সহায়তা নিয়ে যারা ভর্তি হয়েছেন তারা চিকিৎসকও হয়েছেন।”

স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের সাবেক  মহাসচিব অধ্যাপক ডা. এম এ আজিজ বলেন, "এটা শুরু হয়েছে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে ২০০১ সালে। এখন বন্ধ হয়ে গেছে। আমরা এই প্রশ্ন ফাঁসের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলাম।”

তার কথা,"এর সঙ্গে জড়িত সবার বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নিতে হবে। যে চিকিৎসকেরা জড়িত তাদের ছাড় দেয়ার প্রশ্নই ওঠে না। ফাঁস করা প্রশ্নের সহায়তা নিয়ে যারা ভর্তি হয়েছেন, যারা পাস করে চিকিৎসক হয়েছেন তাদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনতে হবে।”

 

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য