‘ধর্ষণ প্রমাণ সম্ভব’
৩ জুন ২০১৭সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কেউ কেউ প্রশ্ন তুলেছেন, প্রভাবশালী পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের সুষ্ঠু বিচার হবে তো? নাকি ফরেনসিক রিপোর্টে আলামত মেলেনি এই অযুহাতে তারা রেহাই পেয়ে যাবে? ঢাকা মহানগর আদালতের বিশেষ পিপি আবদুল্লাহ আবু এই বিষয়ে ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘ঘটনার ৪০ দিন পর ফরেনসিক পরীক্ষা করা হলে আলামততো পাওয়া যাবেই না৷ তবে ফরেনসিক রিপোর্ট বিচারের ক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ হলেও এটাই একমাত্র বিচার পাওয়ার পথ নয়৷''
তিনি বলেন, ‘‘অন্যভাবেও যদি প্রমাণ করা যায় তারা ধর্ষণ করেছে তাহলে তাদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করা সম্ভব৷ ফরেনসিক রিপোর্টের বাইরেও স্বাক্ষ্য, প্রমাণও আনুষঙ্গিক বিষয় প্রমাণ করা যায় তাহলেই হবে৷ আর আদালতেতো অপরাধীরা নিজেদের দোষ স্বীকার করেছে৷''
প্রসঙ্গত, ধর্ষণের অভিযোগের ফরেনসিক রিপোর্টের জন্য গঠিত মেডিকেল বোর্ড গত বৃহস্পতিবার একটি রিপোর্ট ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেছে৷ ওই দুই ছাত্রীর ডাক্তারি পরীক্ষার জন্য গঠিত মেডিকেল বোর্ডের প্রধান চিকিৎসক সোহেল মাহমুদ বলেন, ‘‘ঘটনার ৪০ দিন পর ওই দুই ছাত্রীকে মেডিকেল পরীক্ষার জন্য ফরেনসিক বিভাগে পাঠানো হয়৷ তাদের ডিএনএ প্রোফাইলে কোনো বীর্যের উপস্থিতি মেলেনি৷''
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের যুগ্ম কমিশনার এবং ধর্ষণ মামলার তদন্ত তদারকি কর্মকর্তা কৃষ্ণপদ রায় ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘ফরেনসিক পরীক্ষায় আলামত না পাওয়া গেলেও কোন অসুবিধা নেই৷ কারণ এই মামলার চার্জশিট দেয়ার মতো পর্যাপ্ত তথ্য উপাত্ত আমাদের কাছে আছে৷''
আদালতে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণ করা সম্ভব হবে কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘সেটা তো আদালতেই বোঝা যাবে৷ এখনই সেটা বলা সম্ভব নয়৷ তবে আমরা চার্জশিট দিতে পারি৷ প্রাথমিকভাবে অভিযোগের সত্যতা মিলেছে৷''
কবে নাগাদ চার্জশিট হতে পারে, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘শিগগিরই আমরা চার্জশিট দেয়ার চেষ্টা করব৷''
এদিকে, দুই শিক্ষার্থী ধর্ষণের ঘটনায় মামলার বাদী ও গ্রেফতার হওয়া পাঁচ আসামির জব্দ করা মোবাইলসহ বিভিন্ন আলামতের ফরেনসিক রিপোর্ট তদন্তকারী সংস্থা ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের কাছে জমা দিয়েছে৷ সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার রুমানা আক্তার এই বিষয়ে বলেন, ‘‘দুই শিক্ষার্থী ধর্ষণের ঘটনায় সিআইডির ফরেনসিক প্রতিবেদন মামলার তদন্ত কর্মকর্তার কাজে জমা দেওয়া হয়েছে৷ ফরেনসিক পরীক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে৷ আদালতের নির্দেশে মামলায় জব্দ করা বিভিন্ন আলামতের পরীক্ষা করা হয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) পরীক্ষাগারে৷''
তিনি বলেন, ‘‘ধর্ষণের শিকার একজন শিক্ষার্থীর ব্যবহৃত পোশাক ও ধর্ষণে জড়িত মামলার দুই নম্বর আসামির নমুনা ডিএনএ পরীক্ষার ম্যাচিং রিপোর্ট পাওয়া ছাড়াও আসামিদের কাছ থেকে জব্দ করা ছয়টি মোবাইল ফোনের ফরেনসিক প্রতিবেদনও দেয়া হয়েছে৷''
উল্লেখ্য, জন্মদিনের পার্টিতে ডেকে নিয়ে ধর্ষণ করা হয়েছে এমন অভিযোগ এনে গত ৬ মে বনানী থানায় মামলা পাঁচজনকে আসামী করে মামলা করেন এক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী৷ মামলার এজাহার থেকে জানা যায়, গত ২৮ মার্চ রাত ন'টা থেকে পরদিন সকাল ১০টা পর্যন্ত আসামিরা মামলার বাদী এবং তাঁর বান্ধবী ও বন্ধুকে আটকে রাখে৷ অস্ত্র দেখিয়ে ভয়ভীতি প্রদর্শন ও অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করে৷ পরবর্তীতে বাদী ও তার বান্ধবীকে জোর করে ধর্ষণ করেছে দুই আসামী, বাকিরা করেছে সহায়তা৷
আলোচিত এই ধর্ষণ মামলার সব আসামীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ৷ আর মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য আগামী ১৯ জুন দিন ধার্য করেছেন আদালত৷