প্রয়াত মহাশ্বেতা দেবী
২৮ জুলাই ২০১৬মধ্যবিত্ত বাঙালি মায়ের নকশাল করা ছেলেটিকে হারানোর যে বেদনা, সেই বেদনার মধ্য দিয়েই ক্রমশ রাজনৈতিক হয়ে উঠেছিল তাঁর উপন্যাস ‘হাজার চুরাশির মা'৷ উপন্যাসটি বাংলা সাহিত্যে যেন একটা মোচড় এনে দিয়েছিলেন৷ আর সেই থেকেই শুরু৷ এরপর শুধু সাহিত্য চর্চাই নয়, প্রান্তিক মানুষ নিয়ে মাঠেও নেমেছিলেন মহাশ্বেতা৷ তুলে ধরেছিলেন তাঁদের দুঃখ, কষ্ট, অধিকার আদায়ের গল্প৷
প্রখ্যাত এই লেখিকা ফ্রাংকফুর্ট আন্তর্জাতিক বইমেলার ৫৮তম আয়োজনের ‘গেস্ট অফ অনার' বা বিশেষ অতিথি হয়ে জার্মানিতে আসেন৷ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখার সময় তিনি বলেছিলেন নিজের ছেলেবেলা, যৌবন, সংগ্রাম এবং প্রান্তিক মানুষ সম্পর্কে কাজ করার কথা৷ ডয়চে ভেলের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে তুলে ধরেছিলেন তাঁর সাহিত্যকর্মের নানা দিক, তাঁর জীবনের স্বপ্নের কথাও৷ সাক্ষাৎকারটি নিয়েছিলেন বাংলা বিভাগের তৎকালীন তিন কর্মী – আব্দুল্লাহ আল-ফারূক, সুপ্রিয় বন্দ্যোপাধ্যায় এবং মাসকাওয়াত আহসান৷
মৃত্যুকালে বিশিষ্ট এই সাহিত্যিক, মানবাধিকার আন্দোলন কর্মীর বয়স হয়েছিল ৯০৷ বেশ কিছু বছর ধরেই তিনি বার্ধক্যজনিত অসুস্থতায় ভুগছিলেন৷ তাঁর কিডনিতে সমস্যা দেখা দিয়েছিল৷ সম্প্রতি বেশি অসুস্থ হয়ে ভর্তি হন কলকাতার এক বেসরকারি নার্সিং হোমে৷ বৃহস্পতিবার দুপুরে সেখানেই তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন৷ তাঁর মৃত্যুতে পশ্চিমবঙ্গের লেখক, শিল্পী মহলে নেমে এসেছে শোকের ছায়া৷
মহাশ্বেতা দেবীর স্বামী, বিশিষ্ট নাট্যকার-নির্দেশক, ভারতীয় গণনাট্য আন্দোলনের অন্যতম পুরোধা বিজন ভট্টাচার্য আগেই প্রয়াত হন৷ এমনকি তাঁদের পুত্র, অন্য ধারার সাহিত্যিক নবারুণ ভট্টাচার্যও মারা গেছেন৷ সাহিত্যে ‘জ্ঞানপীঠ' ও সমাজসেবায় ‘র্যামন ম্যাগসেসে' পুরস্কার বিজয়ী মহাশ্বেতা দেবী নিজের জীবন উৎসর্গ করেছিলেন আদিবাসী মানুষের অধিকার রক্ষায়৷ ভারত সরকার ‘পদ্মশ্রী' ও ‘পদ্মবিভূষণ' খেতাবে ভূষিত করেছিল তাঁকে৷ পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর সমাদর করেছেন ‘বঙ্গবিভূষণ' সম্মান জানিয়ে৷
নকশাল আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে লেখা ‘হাজার চুরাশির মা' ছাড়া মহাশ্বেতা দেবীর উল্লেখ্য গ্রন্থগুলির মধ্যে অগ্রগণ্য আদিবাসী আন্দোলন নিয়ে ‘অরণ্যের অধিকার'৷