যমুনা এখন মৃত্যুর মুখে...
৩ এপ্রিল ২০১৬গঙ্গার দীর্ঘতম শাখানদী যমুনা পৌরানিক ও ঐতিহাসিক – দু'দিক থেকেই প্রেমের নদী৷ তা সে বৃন্দাবনে শ্রীকৃষ্ণের জলকেলি হোক বা মোগল বাদশাদের নৌকা বিহার, অথবা সম্রাট শাহজাহানের প্রেমের স্মারক তাজমহল – হিমালয়ের যমুনোত্রী হিমবাহ থেকে নেমে উত্তরভারতের উত্তরাখন্ড, হরিয়ানা, দিল্লি ও উত্তর প্রদেশের মধ্য দিয়ে গিয়ে মিশেছে বারাণসীতে গঙ্গার সঙ্গে৷ এহেন এক নদী আজ হেজে মজে মরতে বসেছে দূষণের কারণে৷ যেটুকু জল আছে তা এত বিষাক্ত যে পান করা তো দূরের কথা, স্নান করা এবং কাপড় কাচাও বিপজ্জনক৷ তাছাড়া যমুনার জল বিভিন্ন রোগের উত্স হয়ে উঠেছে, উঠছে ক্রমশই৷ এক স্বাস্থ্য সমীক্ষায় বলা হয় যে, এই দূষিত জল ব্যবহার করলে কলেরা, ম্যালেরিয়া, টাইফয়েড, আমাশা, চর্মরোগ, এমনকি ক্যানসার পর্যন্ত হতে পারে৷ যমুনার প্রবাহ পথের উভয় তীরের জনজীবনের শিয়রে এখন শমন৷
কেন এমন দশা হলো? এর কারণ কী? কারণ নির্বিচারে বর্জ্য পদার্থ নদীতে ফেলা, যার মধ্যে আছে যমুনার দু'পাশের কলকারখানা থেকে নিসৃত অশোধিত রাসায়নিক বর্জ্য পদার্থ, আছে ক্রোমিয়াম,আর্সেনিক ও কোডমিয়াম, আছে শহরের নালি নর্দমার নোংরা জল, প্লাস্টিক, চাষাবাদের কীটনাশক পদার্থ৷ এর সঙ্গে আছে মানুষ, গবাদি পশুর মলমূত্র৷ এমনকি হাতি, উটও বাদ নেই৷ রয়েছে ফুল বেলপাতা থেকে যাবতীয় সব পুজো সামগ্রী৷ দূষণের মাত্রা বহুগুণ বেড়ে যাওয়ায় যমুনার জলে অক্সিজেন না থাকার মতো৷ তাই মাছ বা অন্যান্য জলজ প্রাণীও লুপ্তপ্রায়৷ দিল্লির রাজধানি এলাকায় যমুনার প্রবাহপথের ২২ কিলোমিটারের মধ্যে দিল্লি মহানগরীর ৬০ শতাংশ আবর্জনা পড়ে যমুনার জলে৷ এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, দিল্লির নির্মিয়মান মেট্রো রেলের ৫১ হাজার টন রাবিশ ফেলা হয়েছে এই জলে৷
বুজে আসছে যমুনার দুই পাড়৷ তাই যমুনা এখন একটা বড় খাল, আবার কোথাও কোথাও একটা বড় নালার মত হয়ে গেছে৷ জলের বহমানতা না থাকায় যমুনা এখন একটা অগভীর বদ্ধ জলাশয়৷ সেই সুযোগে যমুনা নদীর একপাড়ে দ্রুত গজিয়ে উঠছে বস্তি, অন্য পাড়ে তৈরি হয়েছে কৃষি ক্ষেত৷ আগ্রায় যমুনার তীরে যে তাজমহল, সেই যমুনাও আজ মজে গিয়ে তাজমহলের সৌন্দর্যকে করেছে ম্লান৷
সরকার ও জনসমাজের কারোরই যেন কোনো হেলদোল নেই৷ অথচ ঢাকঢোল পিটিযে ৯০-এর দশক থেকে ঘোষণা করা হচ্ছে যমুনা অ্যাকশন প্লান৷ বরাদ্দ ২০০০ কোটি টাকা৷ খরচ দেখানো হয়েছে ঠিকই, কিন্তু কাজ কি হয়েছে? হলে কতটুকু হয়েছে? হিসেবটা অতি নগণ্য৷ যে কয়েকটা ওয়াটার ট্রিটমেন্ট বা জল পরিশোধন প্লান্ট বসানো হয়েছে তার বেশির ভাগই নিষ্ক্রিয়৷ যমুনা পাড়ে গজিয়ে ওঠা বস্তি তুলে দেবার কথা, কিন্তু ভোট ব্যাংকের তাগিদে সেখানেও বাধা৷ নদীবক্ষের পলি তোলা যমুনা অ্যাকশন প্লানের আবশ্যকীয় শর্ত, তা ফাইলবন্দি থেকে গেছে আজ অবধি অবোধ্য কারণে৷ একমাত্র আশার দীপ জাতীয় গ্রিন ট্রাইব্যুনাল৷ এর প্রধান বিচারপতি সতন্ত্র কুমার হুঁশিয়ারি জারি করেছেন, কোনো সংস্থা যদি যমুনায় রাবিশ ফেলে তাহলে পাঁচ লক্ষ টাকা জরিমানা করা হবে৷
শিল্প কারখানাগুলির ওপর অশোধিত বর্জ্য পদার্থ ফেলার ওপর আরোপ করা হয়েছে কড়া নিষেধাজ্ঞা৷ গ্রিন ট্রাইব্যুনালের মতে, যমুনার জলকে দূষণমুক্ত করতে পারলে সরকার চিকিত্সা বা ওষুধপত্রের জন্য যে কোটি কোটি টাকা খরচ কোরে থাকে, সেটা অনেক কমে যাবে. নদী বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, সেদিন বেশি দূরে নেই, যেদিন যমুনা নদীও সরস্বতী নদীর মতোই অদৃশ্য হয়ে যাবে৷
বন্ধু, আপনি কি কখনও যমুনা নদী দেখেছেন? তাহলে জানান আমাদের৷ পাঠাতে পারেন ছবিও৷