প্রসঙ্গ: পহেলা বৈশাখ
১২ এপ্রিল ২০১৬শনিবার ঢাকায় এক মানববন্ধন ও সমাবেশে বাংলা নববর্ষ পহেলা বৈশাখকে ‘ইসলাম বিরোধী' ও ‘অনৈসলামিক' আখ্যায়িত করে তা বাতিলের দাবি জানায় আওয়ামী ওলামা লীগের একাংশ৷ তাদের এই দাবির পর সাধারণ মানুষের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়৷ এরপরও অবশ্য ওলামা লীগ তাদের দাবিতে অটল আছে৷ ওলামা লীগের সাধারণ সম্পাদক মাওলানা মুহম্মদ আবুল হাসান শেখ শরীয়তপুরি সোমবার ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘শনিবার প্রেস ক্লাবের সামনে আমিই এই দাবি তুলেছি এবং দাবিতে অটল আছি৷''
তাঁর কথায়, ‘‘পহেলা বৈশাখ হিন্দুদের সংস্কৃতি, মুসলামানদের নয়৷ এই দেশের ইসলাম ধর্মের অনুসারীরা পহেলা বৈশাখের নামে কোনো বেলেল্লাপনা ও বেহায়াপনা মেনে নেবে না৷''
তিনি বলেন, ‘‘আমরা আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন, বঙ্গবন্ধুর আদর্শের অনুসারী৷ প্রধামন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাকে ২০১৪ সালে হজে পাঠিয়েছেন৷ আমরা যা বলছি তা আওয়ামী লীগের যে নীতি, তার পরিপন্থি নয়৷ শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করতে যখন যাই, তখন তিনিও স্বীকার করেছিলেন যে, আলেম ওলামারাই আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় এনেছেন৷''
এর জবাবে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘ওলামা লীগের সঙ্গে আওয়ামী লীগের কোনো সম্পর্ক নেই৷ ওটা বাটপারদের দল, যারা আওয়ামী লীগের নাম ভাঙিয়ে এ ধরনের দল বা সংগঠন করে৷ তাদের বিরুদ্ধে আমরা প্রশাসনকে ব্যবস্থা নিতে বলেছি৷ আওয়ামী ওলামা লীগের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে পুলিশকে বলা হয়েছে৷''
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মিডিয়া বিষয়ক বিশেষ সহকারী মাহবুবুল হক শাকিল এক ফেসবুক পোস্টে বলেছেন, ‘‘ওলামা লীগ! এটা কি খায় না মাথায় দেয়? পহেলা বৈশাখের বিরুদ্ধে যারা কথা বলে তারা আওয়ামী লীগের কেউ না, এ কথা আমি দায়িত্ব নিয়ে বলছি...৷''
তিনি বলেন, ‘‘শেখ হাসিনাই প্রথম সরকার প্রধান, যিনি বৈশাখী ভাতা চালু করেন৷ যে সব অতিবিপ্লবীরা বঙ্গবন্ধুর দল মুসলিম লীগ হয়ে গেছে বলে নাকিকান্না জুড়ে দিয়েছেন, তারা দয়া করে থামুন৷ এই দেশ, বাঙালি সংস্কৃতি এবং মানুষের জন্য শেখ হাসিনার দরদ আমার-আপনার চেয়ে কম নয়৷''
তবে এ সব কথারও জবাব দিয়েছেন ওলামা লীগের সাধারণ সম্পাদক৷ তিনি বলেছেন, ‘‘হানিফ সাহেবেরা ব্যক্তিগতভাবে মনে করতে পারেন যে, ওলামা লীগ আওয়ামী লীগের কেউ নয়৷ কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তো কিছু বলেননি৷ শেখ হাসিনা পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়েন৷ তিনি ইসলাম প্রিয়৷ ইসলামের পক্ষেই তাঁর অবস্থান৷ আমরা ওলামা লীগের সদস্যরা জামায়াত-শিবির ও বিএনপিকে মোকাবেলা করেছি৷ আমরা বঙ্গবন্ধুর আদর্শের অনুসারী৷ বঙ্গবন্ধুই কিন্তু মদ, জুয়া, ঘোড়দৌড় নিষিদ্ধ করেছিলেন৷''
এদিকে ওলামা লীগের নববর্ষের উৎসব বিরোধী বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়েছে জঙ্গিবাদ ও সাম্প্রদায়িকতা বিরোধী মোর্চা৷ তারা ঢাকায় প্রতিবাদ সমাবেশ করে সংগঠনটি নিষিদ্ধের দাবি জানিয়েছেন৷ মোর্চার আহ্বায়ক সাংবাদিক ও সম্পাদক আবেদ খান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমরা বাঙালি সংস্কৃতিবিরোধী এই সংগঠন নিষিদ্ধ এবং এর নেতাদের গ্রেপ্তারের দাবি জানাচ্ছি৷ আওয়ামী লীগের নাম ভাঙিয়ে তারা কাজ করছে৷ তাই আওয়ামী লীগেরই উচিত হবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া৷''
ওলামা লীগ ছাড়াও হেফাজতে ইসলাম পহেলা বৈশাখে নারীদের ঘরের বাইরে যেতে বারণ করেছে৷ চরমোনাই-এর পীর বলেছেন, ‘‘পহেলা বৈশাখের নামে ভারতীয় হিন্দুয়ানি সংস্কৃতির আগ্রাসন শুরু হয়েছে বাংলাদেশে৷''
আবেদ খানের কথায়, ‘‘এখনো এ দেশের কিছু মানুষ এবং কিছু গোষ্ঠীর মাথায় পাকিস্তানি ভূত রয়েছে৷ কিন্তু বাস্তবে এই ভূতের কোনো অস্তিত্ব নেই৷ তাই এ সব ভূত টিকতে পারবে না৷''
বন্ধু, আপনি কী মনে করেন? পহেলা বৈশাখ, মানে নববর্ষের অনুষ্ঠান কি ইসলামবিরোধী? লিখুন নীচের ঘরে৷