প্রশ্নপত্র ফাঁস
৫ জুলাই ২০১৪ঢাকা বোর্ডের অধীনে গত উচ্চমাধ্যমিক (এইচএসসি) পরীক্ষার ইংরেজি ও গণিত (তত্ত্বীয়) দ্বিতীয় পত্রের প্রশ্নপত্র হুবহু ফাঁস হয়েছে বলে প্রমাণ পেয়েছে তদন্ত কমিটি৷ তাঁরা ফাঁস হওয়া প্রশ্নপত্রের কপিও উদ্ধার করেছেন৷ কিন্তু কী ভাবে প্রশ্নপত্র ফাঁস হলো এবং কারা এর সঙ্গে জড়িত, তা বের করতে পারেনি আন্তঃমন্ত্রণালয় তদন্ত কমিটি৷ অপরাধীদের চিহ্নিত না করেই শিক্ষামন্ত্রী প্রশ্নপত্র ফাঁস রোধে বিরতিহীন পাবলিক পরীক্ষা নেয়ার সিদ্ধান্তের কথা জানান বৃহস্পতিবার৷
কিন্তু প্রশ্নপত্র ফাঁসের সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিত করতে না পারাকে দুঃখজনক বলে মন্তব্য করেছেন শিক্ষাবিদ এবং সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী৷ তিনি বলেন, এটা তদন্ত কমিটি এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একটি বড় ধরনের ব্যর্থতা৷
রাশেদা কে চৌধুরী ডয়চে ভেলেকে বলেন, কারা প্রশ্নপত্র ফাঁস করলো, কী ভাবে করলো, তাই যদি জানা না গেল, তাহলে প্রশ্নপত্র ফাঁস রোধে কী ভাবে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া সম্ভব? তাই প্রশ্নপত্র ফাঁস ঠেকাতে ব্যবস্থা নিতে হলে আগে অপরাধীদের চিহ্নিত করতে হবে৷ তিনি আরও বলেন, ‘‘আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটি তো একটি প্রশাসনিক কমিটি৷ তাদের নানা ধরনের সীমাবদ্ধতা থাকতে পারে৷ কিন্তু সরকারের নানা সংস্থা আছে, যারা অপরাধ তদন্তে দক্ষ৷ এখন এই তদন্ত রিপোর্টকে ধরে পুলিশের সিআইডি বা অন্য কোনো তদন্তকারী সংস্থা দিয়ে আরো গভীর তদন্ত করিয়ে অপরাধীদের আটক এবং কী ভাবে ফাঁস হলো তা জানতে হবে৷''
রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, প্রশ্নপত্র ফাঁস ঠেকাতে সরকারি ছুটির দিন বাদে বিরতিহীন পাবলিক পরীক্ষা নেয়ার সিদ্ধান্ত বাস্তবে কোনো কাজে আসবে না৷ কারণ প্রশ্নপত্র ফাঁসের সঙ্গে বিরতিহীন বা বিরতি দিয়ে পরীক্ষার কোনো সম্পর্ক আছে বলে তিনি মনে করেন না৷ বিরতিহীন পরীক্ষা নেয়া না নেয়া ভিন্ন প্রশ্ন৷ আর সৃজনশীল পরীক্ষা পদ্ধতিতে বিরতিহীন পরীক্ষায় শিক্ষার্থীদের অসুবিধা হওয়ার কথা নয়৷ কিন্তু তাতে প্রশ্নপত্র ফাঁস যে ঠোকানো যাবে, তার কোনো নিশ্চয়তা নেই৷
এদিকে অভিভাকরাও মনে করেন, আসলে শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রশ্নপত্র ফাঁসের বিষয়ী নিয়ে লোক দেখানো সিদ্ধান্ত নিয়েছে৷ মতিঝিল আইডিয়াল স্কুলের অভিভাবক এবং অভিভাবক ঐক্য ফোরামের সভাপতি জিয়াউল হক দুলু ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রশ্নপত্র ফাঁসের সঙ্গে যারা জড়িত, তাদের চিহ্নিত করতে ব্যর্থ হয়েছে বা আড়াল করছে৷ এই প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনা বেশ কয়েক বছর ধরেই ঘটছে৷ এতদিন এটা মন্ত্রণালয় স্বীকারও করতো না৷ এবার স্বীকার করলো৷ কিন্তু তা প্রতিরোধে কার্যকর ব্যবস্থার পরিবর্তে টানা পাবলিক পরীক্ষার সিদ্ধান্ত নিয়ে একটা হাস্যকর কাজ করলো৷'' তিনি আরও বলেন, ‘‘অপরাধীদর চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা হল প্রথম কাজ৷ তারপর সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের সঙ্গে কথা বলে অন্যান্য পদক্ষেপ নিতে হবে৷ কিন্তু তা করে শিক্ষা মন্ত্রণালয় বিরতিহীন পরীক্ষার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তাতে প্রশ্নপত্র ফাঁস বন্ধ হবে না৷'' বরং ফাঁসকারীরা উলটে উৎসাহিত হবে বলে মনে করেন এই অভিভাবক নেতা৷