1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় কিশোর গ্যাং

১০ জুন ২০২১

এই করোনার মধ্যেও বাংলাদেশে এখন কিশোর গ্যাং-এর দৌরাত্ম। র‌্যাব ও পুলিশ তাদের ধরতে প্রতিদিনই অভিযান চালাচ্ছে।  কিন্তু এর নেপথ্যে কারা। আর তারা কীভাবে তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করছে?

https://p.dw.com/p/3uiLV
Bangladesch Chittagong Polizeikontrolle
ফাইল ফটোছবি: Bangla Tribune/Humayun Masud

‘ টিকটক রিদয়ের' পর এই সময়ে আরেকটি ‘আলোচিত' কিশোর গ্যাং-এর নাম ‘ডেয়ারিং কোম্পানি'। ঢাকার উত্তরা এবং টঙ্গি এলাকার এই গ্যাংটির বেশ কিছু সদস্যকে আটক করেছে র‌্যাব। সদস্যরা কিশোর হলেও এই গ্যাং-এর প্রধান কিশোর নয় বরং তরুণ৷ লন্ডন ফেরত এই তরুণ লন্ডন বাপ্পি নামে পরিচিত। এই নামেই সে একটি ফেসবুক গ্রুপ খুলে কিশোর গ্যাংটি গড়ে তোলে। সে এই কিশোরদের দিয়ে জমি দখল থেকে শুরু করে নানা ধরনের অপরাধমূলক কাজ করতো।

এরকম আরো অনেক কিশোর গ্যাং রয়েছে যার নেপথ্যে বা পরিচালায় রয়েছে প্রভাবশালী ব্যাক্তি বা স্থানীয় রাজনৈতিক ক্যাডার ও নেতা। সাভারে গত বছর কিশোর গ্যাং-এর হাতে নিহত হয় স্কুল ছাত্রী নীলা রায়। আর এই গ্যাংটির নেপথ্যে ছিলো স্থানীয় যুবলীগ নেতা মিজানুর রহমান। সেও তার অপরাধ কর্মের জন্য এই গ্যাংটি তৈরি করে। তাদেরও একটি ফেসবুক গ্রুপ ছিলো।

আর বরগুনার বহুল আলোচিত ‘নয়নবন্ড' নামের  গ্রুপটির মূলেও ছিলো রাজনৈতিক নেতারা। এটিও ছিলো একটি ফেসবুক গ্রুপ কেন্দ্রিক। আর কয়েক বছর আগে প্রথম আলোচনায় আসা উত্তরার কিশোর গ্যাংটিও সিনিয়িরদের গড়া। তারাও ফেসবুকে সংগঠিত।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধ বিজ্ঞানের অধ্যাপক ড. জিয়া রহমান বলেন," বাংলাদেশে এখন একটি ট্রানজিশনাল পিরিয়ড চলছে। তথ্য প্রযুক্তির বিকাশ ঘটছে। এই আর্থ সামাজিক অবস্থায় কিশোর গ্যাং গড়ে ওঠা অস্বাভাবিক কিছু না। তবে এর পিছনে নেপথ্য শক্তি থাকে। তারা এদের ব্যবহার করে। তারা মাদক চোরচালানসহ নানা অপরাধ করায়। এর প্রধান শিকারে পরিণত হয় নিম্নবিত্ত পরিবারের সন্তানেরা।”

১৯২০ সালে যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরে এরকম এক হাজার কিশোর গ্যাং তৈরি হয়েছিল। এর পিছনে ফ্যান্টাসিও থাকে বলে জানান অপরাধ বিজ্ঞানের এই অধ্যাপক।

বুধবারও র‌্যাব ঢাকার লালবাগ ও তেজগাঁও এলাকা থেকে কিশোর গ্যাং এর ১৮ সদস্যকে দেশীয় অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার করেছে। র‌্যাব জানিয়েছে তারা কিশোর গ্যাং - ‘আকাশ গ্রুপ'  এবং ‘সামী গ্রুপ' এর সদস্য।

র‌্যাব-এর সহকারী পরিচালক(মিডিয়া) এএসপি মো. ফজলুল হক জানান, এই কিশোর গ্যাংগুলো এখন স্বাধীনভাবেও গড়ে উঠছে। এলাকার আধিপত্য, চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধকর্মের জন্য। আবার কোনো কোনো ক্ষেত্রে তাদের নেপথ্য গডফাদারও থাকে। তারা রাজনৈতিক বা অরাজনৈতিক দুই শ্রেণিরই।

পুলিশ সদর দপ্তর বলছে, দেশের ৬৪ জেলা, উপজেলা ও মহানগর এলাকা মিলিয়ে পাঁচ শতাধিক কিশোর গ্যাং সক্রিয় । সারাদেশে ছড়ানো এইসব গ্যাংয়ে পাঁচ থেকে ছয় হাজার সদস্য জড়িত। এরমধ্যে রাজধানীতে অন্তত ৭০ থেকে ৭৫টি কিশোর গ্যাং গ্রুপে দেড় থেকে দুই হাজার কিশোর সক্রিয় । ২০১৭ সাল থেকে এ পর্যন্ত প্রায় তিনশ' কিশোর গ্যাং সদস্যকে আইনের আওতায় আনা হয়েছে।

কিন্তু মানবাধিকার কর্মী নূর খান মনে করেন," কিশোরদের রাজনৈতিক এবং প্রভাবশালী চক্র ব্যবহার করছে। এটা বন্ধ করে তাদের আইনের আওতায় আনা না গেলে কিশোর গ্যাং বন্ধ হবে। এক গ্রুপ ধরা পড়বে, আরেক গ্রুপ তৈরি হবে। মূল অপরাধীদের ধরতে হবে।”

করোনার সময় কিশোর গ্যাং বেড়ে যাচ্ছে বলে মনে করছেন ড. জিয়া রহমান। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীও তাই বলছে। তথ্য প্রযুক্তিবিদ তানভীর হাসান জোহা বলেন," করোনায় কিশোররা তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করছে বেশি। আর গ্রুপ গুলোর বড়  একটি অংশ প্রাথমিকভাবে অনলাইনেই সংগঠিত হয়। তার একটি প্রভাব পড়ছে।”

তিনি বলেন, অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যাদের বয়স ১৮ বছরের নিচে তাদের জন্যও ফেসবুকে শিক্ষা কার্যক্রম চালাচ্ছে। কিন্তু অভিভাবকেরা না বুঝেই বয়স বাড়িয়ে তাদের সন্তানদের ফেসবুক আইডি খুলে দিয়ে বিপর্যয় ডেকে আনছেন। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোও এর ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে ভাবছে না। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এ নিয়ে জরুরি নির্দেশনা প্রয়োজন বলে মনে করেন এই তথ্য প্রযুক্তিবিদ।

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য