প্রবাসীদের পাসপোর্ট দেয়া বন্ধ রাখার অভিযোগ
১৭ আগস্ট ২০২১তিনি আরো বলেন, ‘‘দূতাবাসগুলো আমাদের সাথে কথা না বলেই ওই নোটিস দিয়েছে৷’’
বিদেশে বাংলাদেশের বেশ কয়েকটি দূতাবাস নতুন পাসপোর্ট ও নবায়ন বন্ধ রাখার নোটিস দিয়েছে৷ কুয়েত, মালয়েশিয়া, লেবানন, ও মালদ্বীপ দূতাবাসের নোটিশ ডয়চে ভেলের হাতে এসেছে৷
কুয়েতে বাংলাদেশ দূতাবাস ১১ আগস্ট জরুরি বিজ্ঞপ্তিতে বলেছে, ‘‘ঢাকায় বহিরাগমন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট (এমআরপি) সার্ভারে ত্রুটি সৃষ্টি হওয়ায় বাংলাদেশের সকল মিশনের পাসপোর্ট প্রস্তুত কার্যক্রম ঢাকা থেকে বন্ধ আছে৷ ফলে যেসব বাংলাদেশি ২২ মে এবং পরবর্তী সময়ে পাসপোর্টের আবেদন করেছেন, তাদের পাসপোর্ট ডেলিভারি কারিগরি ত্রুটি সংশোধন না হওয়া পর্যন্ত বন্ধ থাকবে৷ তবে পাসপোর্টের আবেদন বন্ধ থাকবে না৷’’
মালদ্বীপের হাইকমিশন গত ৯ আগস্ট তাদের নোটিসে বলেছে, পাসপোর্ট সার্ভারে যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে সাময়িকভাবে পাসপোর্ট আবেদন বন্ধ থাকবে৷
মালয়েশিয়ার বাংলাদেশ দূতাবাস ৭ আগস্ট নোটিসে জানিয়েছে, সার্ভারের ধারণক্ষমতা শেষ হয়ে যাওয়ায় প্রচুর সংখ্যক পাসপোর্ট পাইপলাইনে জমা আছে৷ সমস্যা সমাধানে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পাসপোর্ট অধিদপ্তর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে৷
লেবানন দূতাবাস বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় পাসপোর্ট সার্ভারে সমস্যা হয়েছে বলে দাবি করেছে গত ২৮ জুন৷
জাপান ও ইটালি দূতাবাসও পাসপোর্ট দেয়া বন্ধ রেখেছে৷ মালয়েশিয়া দূতাবাসে ফোন করলে তারা কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি৷ তবে লেবানন দূতাবাস থেকে জানানো হয়, ‘‘গত দুমাস ধরে তারা পাসপোর্ট দিতে পারছেন না৷ এটা ঢাকার পাসপোর্ট অধিদপ্তরের সার্ভারের সমস্যা বলে তাদের জাননো হয়েছে৷’’
আর ইটালি দূতাবাসের ফার্ষ্ট সেক্রেটারি সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘‘গত জুলাই থেকে আমরা দেখতে পাচ্ছি পাসপোর্ট অধিদপ্তরের সেন্ট্রাল সার্ভার আমরা যে আবেদন পাঠাচ্ছি তা ভেরিফাই করছে না৷ এরকম আবেদনের সংখ্যা প্রায় সাড়ে চার হাজার হবে৷’’ আরো দাবি করা হয়, তারা ঢাকায় যোগাযোগ করে জেনেছেন এমআরপির সার্ভার ক্যাপাসিটি শেষ হয়ে যাওয়ায় এই পরিস্থিতি হয়েছে৷
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কত বাংলাদেশি প্রবাসীর পাসপোর্ট আটকা আছে তার সঠিক তথ্য পার্সপোর্ট অধিদপ্তরের কাছে নেই৷ তবে একটি সূত্র জানায়, এই সংখ্যা দেড়লাখের কম হবে না৷ প্রবাসীরা এমআরপি নিয়ে গত জুন মাস থেকে এই সমস্যায় আছেন৷
মালয়েশিয়া প্রবাসী হারুন অর রশীদ জানান, ‘‘মালয়েশিয়ায় এখন অবৈধ বিদেশিদের বিরুদ্ধে অভিযান চলছে৷ যাদের পাসপোর্টের মেয়াদ নেই, তারা তো আর থাকতে পারবেন না৷ নতুন পাসপোর্ট না পেলে তাদের দেশ ছাড়তে হবে৷ একই সমস্যা তৈরি হচেছ সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রচ্যের বিভিন্ন দেশে৷’’
বাংলাদেশে এমআরপির জন্য কাজ করছে মালয়েশিয়ার আইরিশ ইন্টারন্যাশনাল৷ তাদের সঙ্গে শুরুতে তিন কোটি পাসপোর্টের চুক্তি হয়৷ সেই পরিমাণ পাসপোর্ট হয়ে যাওয়ায় এখন আর তাদের সার্ভারে কোনো ডাটা এন্ট্রি নিচ্ছে না৷ বাংলাদেশে এখন ই-পাসপের্টের কাজও শুরু হয়েছে৷
পাসপোর্ট অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলেন, ‘‘কোভিডের কারণে ই- পাসপোর্ট নিয়ে একটু সমস্যা হচ্ছে৷ আর এই কারণে এখন আবার আমরা এমআরপি চালু করেছি৷ ধরে নিয়েছি, আরো দেড়-দুই বছর এমআরপি চালাতে হবে৷ সেজন্য আমরা যথা সময়ে নতুন চুক্তিও করেছি মালয়েশিয়ার আইরিশ কোম্পানির সাথে৷ তারা কাজ করছে৷ আমরা নতুন ৪০ লাখ পাসপোর্ট বই কিনেছি৷ তাদের মেমোরিও যখন শেষ হয়েছে, তখনই কিনে দিয়েছি৷ প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতিও কেনা হয়েছে৷ পাসপোর্ট ইস্যু হচ্ছে৷ আমরা প্রতিদিন ১৫ থেকে ২৫ হাজার পাসপোর্ট এখন ইস্যু করছি৷’’
তিনি বলেন, ‘‘দূতাবাসগুলো কেন পাসাপোর্ট ইস্যু সাময়িকভাবে বন্ধ করেছে আমরা জানি না৷ আমাদের সাথে কথা বলে তারা করেনি৷ আর সৌদি আরব ও মালয়েশিয়া দূতাবাসে প্রয়োজনীয় লোকবল নাই৷ তারা আবেদন জমা করে রাখে৷ যে কয়টা পাঠায়, আমরা সেই কয়টা দেই৷ এখন কোভিডের পর পাসপোর্টের চাহিদাও বেড়ে গেছে৷ আর তারা তো শুধু আবেদন জমা নেয়৷ এই করোনার মধ্যে ঢাকা থেকে পাসপোর্ট তৈরি করে পাঠাতেও তো সময় লাগে৷ দেড়-দুই মাস ধরে একটু সমস্যা হচেছ বেশি পাসপোর্টের চাহিদার কারণে৷ কিন্তু কাজ বন্ধ নেই৷’’
ই-পাসপোর্ট প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘করোনার কারণে এই দেরি হচ্ছে৷ আরো দেড়-দুই বছর লাগবে৷ এটা করার জন্য আমাদের সঙ্গে জার্মানির ভেরিডোস কোম্পানির সাথে চুক্তি৷ আমরা এই মাসের শেষের দিকে জার্মানি যাচ্ছি এই কাজে৷’’