প্রধানমন্ত্রীর আহ্বানে আস্থা নেই বিরোধীদের
২৬ জানুয়ারি ২০১৯প্রধানমন্ত্রী শুক্রবার তাঁর ভাষণে বলেন, ‘‘সংখ্যায় যত কমই হোক না কেন, আমরা সংসদে বিরোধীদের উপস্থিতি চাই৷ সংসদে বিরোধী দলের যে কোনো সদস্যের ন্যায্য ও যৌক্তিক প্রস্তাব, আলোচনা-সমালোচনার যথাযথ মূল্যায়ন করা হবে৷ আমি বিরোধী দলের নির্বাচিত সদস্যদের শপথ নিয়ে সংসদে যোগদানের আহ্বান জানাচ্ছি৷''
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একইসঙ্গে সকল মতপার্থক্য ভুলে গিয়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলে দেশকে দুর্নীতিমুক্ত করার কথাও বলেন৷
প্রধানমন্ত্রীর ঐ বক্তব্যের পর বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর শনিবার সংবাদ সম্মেলনে কথা বলেন৷ প্রধানমন্ত্রীর জাতীয় ঐক্যের ডাক নিয়ে তিনি সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘‘শেখ হাসিনা জাতীয় ঐক্যের যে ডাক দিয়েছেন, তা মেনে নেওয়ার কোনো কারণ নেই৷ নির্বাচনের আগে তিনি যখন আমাদের সঙ্গে সংলাপ করেন, তখন তিনি যে কথাগুলো বলেছিলেন সেগুলো কি তিনি রাখতে পেরেছেন? একটাও রাখতে পারেননি৷ এই যেমন তিনি বলেছিলেন, কোনো গ্রেপ্তার ও নতুন কোনো মামলা হবে না৷ বলেছিলেন, নির্বাচনের জন্য একটা ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড' তৈরি করা হবে৷ সেটাও কিন্তু তিনি করেননি৷''
প্রধানমন্ত্রী বিরোধীদের সংসদে যোগ দেয়ার যে আহ্বান জানিয়েছেন সে প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘‘এখন যে কথাগুলো প্রধানমন্ত্রী বলছেন, তা শুধু কথার কথা৷ এগুলো তিনি সব সময় বলেন৷ আমরা তো নির্বাচনের ফলাফলই প্রত্যাখান করেছি৷ সেখানে নতুন করে শপথ নেওয়া বা সংসদে যাওয়ার কোনো প্রশ্নই ওঠে না৷''
এ প্রসঙ্গে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী আসলে জাতীয় ঐক্য এবং বিরোধীদের সংসদে যোগ দেয়ার আহ্বান জানিয়ে জাতিকে বিভ্রান্ত করতে চাচ্ছেন৷ রাজনৈতিক দলগুলোকে বিভ্রান্ত করতে চাচ্ছেন৷ যেখানে গণতন্ত্রের ছিটোফোটা নেই – মানুষ কথা বলতে পারে না, আতঙ্কের মধ্যে আছে, জবাবদিহিতা নেই, আইনের শাসন নেই – সেখানে এই আহ্বানের, প্রতিশ্রুতির মূল্যায়নের খুব সুযোগ আছে বলে আমার মনে হয় না৷ তিনি নির্বাচনের আগে দেওয়া কোনো কথা রাখেননি৷ এমনকি একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন দেওয়ার কথাও রাখেননি৷ তাই তাঁর ওপর আস্থা রাখা যায় না৷''
এরপরও কোনো সুযোগ আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘আমার কথা হলো, গণতন্ত্রে যদি তিনি (প্রধানমন্ত্রী) ফিরতে চান, তাহলে তাঁর প্রথম পদক্ষেপ হতে হবে বিতর্কিত নির্বাচন থেকে সরে আসা৷ অর্থাৎ এই পার্লামেন্ট ভেঙে দেয়া পদত্যাগ করা এবং ভালো একটি নির্বাচনের জন্য আলোচনার আহ্বান জানানো৷ এই কাজটি তিনি করলে, তবেই রাজনৈতিক দলগুলোর আবারো তাঁর প্রতি আস্থা ফিরে আসতে পারে৷''
ওদিকে নাগরিক ঐক্যের প্রধান মাহমুদুর রহমান মান্না ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘জাতীয় ঐক্যের ব্যাপারে যে যার জায়গা থেকে বলছেন৷ উনিও (প্রধানমন্ত্রী) নিজের জায়গা থেকে কথা বলেছেন৷ ৩০ তারিখের এই প্রহসনের পর জাতীয় ঐক্য হবে কীভাবে? তাই আমার মতে, নির্বাচনের পুনর্মূল্যায়ন করতে হবে, নির্বাচন বাতিলের দাবি মেনে নিতে হবে৷ তারপর না জাতীয় ঐক্যের প্রশ্ন আসবে৷''
সংসদে যোগ দেয়ার আহ্বান প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘এ ব্যাপারে তো মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গতকালই (শুক্রবার) বলে দিয়েছেন যে ওনারা সংসদে যাবেন না৷ জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের আগের সিদ্ধান্তই হচ্ছে যে, নির্বাচন যেহেতু গ্রহণ করছি না, অতএব ফলাফল গ্রহণ করারও কোনো প্রশ্ন আসে না৷ তাই সংসদে যোগ দেয়ার চিন্তা তো নেই-ই৷''
তিনি আরেক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী একটা বক্তৃতা দিলেই বিরোধীদের ‘অনার' করা হয়ে গেল? তিনি আন্তরিকভাবে ডাকবেন, কথা বলবেন...৷ একমাত্র তবেই যেটা হয়ে গেছে, তারও একটি ‘সলিউশন' হতে পারে হয়ত বা৷ কিন্তু বক্তৃতা দেওয়াটা কোনো ‘পজেটিভ সিগন্যাল' না৷''
বিষয়টি নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক ড. শান্তনু মজুমদার ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘সরকার ও বিরোধী দলের মধ্যে এবার আস্থার সংকট প্রবল৷ তারা নির্বাচনকেই গ্রহণ করছে না৷ তাই প্রধানমন্ত্রী সংসদে যোগ দেওয়ার যে আহ্বান জানিয়েছেন, তাতে তারা সাড়া দেবে বলে আমার মনে হয় না৷ তারা তাদের আগের অবস্থানেই থেকে যাবে৷ তাছাড়া প্রধানমন্ত্রী যে জাতীয় ঐক্যের আহ্বান জানিয়েছেন, সেটা এত সহজ বলে আমার মনে হয় না৷ কারণ মতাদর্শগত দিক দিয়ে আমাদের মধ্যে বিভক্তি অনেক গভীর৷ এই ঐক্যের জন্য আরো কয়েক প্রজন্ম লাগতে পারে৷''
বন্ধু, শেখ হাসিনার আহ্বানে কি বিরোধীদের এগিয়ে আসা উচিত? আপনার মন্তব্য লিখুন নীচের ঘরে৷