প্রধানমন্ত্রী জাতীয় স্বার্থ বিকিয়ে দিয়ে এসেছেন: খালেদা জিয়া
১৭ জানুয়ারি ২০১০রবিবার বিকালে ঢাকার গুলশান কার্যালয়ে আয়োজিত সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরকালে তিনটি চুক্তি, একটি সমঝোতা স্মারক ও একটি প্রটোকল সই হয়েছে বলে জানানো হয়েছে৷ এ সবের মধ্যে কী আছে সে সম্পর্কে দেশবাসী পুরোপুরি অন্ধকারে রয়েছে৷ যেসব বিষয়ে চুক্তি হয়েছে তা খুবই সংবেদনশীল৷ তিনি এসব চুক্তির বিষয়বস্তু বিস্তারিত প্রকাশের দাবি করেন৷
তিনি বলেন, আমরা গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছি যে, প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরকালে একটি গোপন নিরাপত্তা চুক্তিও সই হয়েছে বলে সংবাদপত্রে খবর বেরিয়েছে৷ প্রধানমন্ত্রী এ সম্পর্কে তাঁর সংবাদ সম্মেলনে সম্পূর্ণ নীরবতা পালন করায় জনমনে সন্দেহ আরো ঘণীভূত হয়েছে৷ তিনি এ ব্যাপারে সরকারের ষ্পষ্ট বক্তব্য দাবি করেন৷
খালেদা জিয়া বলেন, প্রধানমন্ত্রী তাঁর সদ্য সমাপ্ত ভারত সফরের ওপর গতকাল শনিবার যে সাংবাদিক সম্মেলন করেছেন, সেখানেও তিনি দেশবাসীকে প্রকৃত সত্য ও তথ্য জানাবার চাইতে বিরোধীদলকে অসংযত ভাষায় আক্রমণ করার ব্যাপারেই বেশি আগ্রহ দেখিয়েছেন৷ পাশাপাশি দিয়েছেন নানান রকম অসত্য তথ্য৷
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দরের মোট ক্যাপাসিটির যথাক্রমে শতকরা ৪০ ও ১০ ভাগ বর্তমানে ব্যবহার করা হচ্ছে বলে যে তথ্য দিয়েছেন তা পুরোপুরি অসত্য৷ সকল সূত্র থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী এখন চট্টগ্রাম বন্দরের মোট ক্যাপাসিটির প্রায় ৬০ ভাগ এবং মংলা বন্দরের মোট ক্যাপাসিটির প্রায় ৪০ ভাগ আমরা ব্যবহার করছি৷ প্রতি বছরেই এই ব্যবহারের হার বাড়ছে৷ অথচ এই বন্দর দুটি ভারতকে ব্যবহার করতে দেয়ার ব্যাপারে সম্মতি জানিয়ে এসে প্রধানমন্ত্রী এখন এ সম্পর্কে মিথ্যা তথ্য দিয়ে জাতিকে বিভ্রান্ত করতে চাইছেন৷
খালেদা জিয়া দাবি করেন, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত ৫৪টি অভিন্ন নদ-নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা আদায়ের ব্যাপারে সফরে কোনো অগ্রগতিই হয়নি৷
প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরের আগে, প্রথম দিকে বলা হয়েছিল যে, তিস্তা নদীর পানি ভাগের ব্যাপারে সফরের সময়ে একটা চুক্তি হবে৷ পরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, তেমন কিছু হচ্ছে না৷ শেষ পর্যন্ত তিস্তার পানি ভাগেরও কোনো চুক্তি হয়নি৷ দুদেশের যৌথ ইশতেহারে এ নিয়ে আগামীতে বৈঠকের আশ্বাস মিলেছে মাত্র৷ তবে সবচেয়ে বেশি উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে, প্রধানমন্ত্রী ইতোমধ্যেই একাধিকবার বলেছেন যে, তিনি ফারাক্কার ব্যাপারে ভারতের সঙ্গে যে 'ট্রিটি'সই করেছিলেন, সেই আদলেই তিস্তার পানি ভাগের চুক্তি করতে চান৷ দেশের প্রতিটি সচেতন মানুষ জানে যে, ফারাক্কা ট্রিটিতে আমাদের কী মহাসর্বনাশ করা হয়েছিল৷
খালেদা জিয়া বলেন, বাংলাদেশ আজ নানামুখী আগ্রাসনের শিকার৷ এরমধ্যে সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ ও সুদুরপ্রসারী তাৎপর্য বহন করে৷ ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক নির্ণয়ের ক্ষেত্রে এ বিষয়টি উপেক্ষা করার উপায় নেই৷
তিনি বলেন, টিপাইমুখ প্রকল্প নিয়ে সারা জাতি উদ্বিগ্ন৷ এই উদ্বেগের সুরাহা করার বদলে প্রধানমন্ত্রী সম্পূর্ণ অসত্য তথ্য তুলে ধরে বলেছেন যে, আমরা সরকারে থাকতে নাকি এ প্রকল্পের ব্যাপারে কখনো কোনো প্রতিবাদ জানানো হয়নি৷
প্রকৃত সত্য হচ্ছে, আমরা বারবার প্রতিবাদ করেছি৷ এর আগে তথ্য প্রমাণ দিয়ে দেশবাসীকে তা জানিয়েছি৷ সে কারণে আমাদের সময়ে ভারত এ প্রকল্প নিয়ে অগ্রসর হতে পারেনি৷ এখন এই সরকারের আমলে ভারত ওই প্রকল্প নিয়ে তোড়জোর করছে৷ আর সরকার এর প্রতিবাদ না জানিয়ে বরং সমর্থনসূচক কথা বলছে৷ সে কারণেই দেশবাসী আরো বেশি উৎকণ্ঠিত৷
খালেদা জিয়া বলেন, প্রধানমন্ত্রী ভারত সফরে গিয়ে ৫০ দফা যৌথ ইশতেহারে সই করেছেন৷ এ পর্যন্ত শুধু এ ইশতেহারটুকুই জনসমক্ষে প্রকাশ করা হয়েছে৷ এতেই যা আছে তাতে প্রমাণিত হয়েছে যে, প্রধানমন্ত্রী জাতীয় স্বার্থ পুরোপুরি বিকিয়ে দিয়ে এসেছেন৷ ভারতকে সকল মাধ্যমে স্থায়ীভাবে ট্রানজিট সুবিধা দিয়েছেন৷ এ সবের ফলে সার্বভৌমত্বই কেবল ক্ষুন্ন হচ্ছে না, দীর্ঘমেয়াদে বাংলাদেশকে অর্থনৈতিকভাবে পঙ্গু করার ব্যবস্থাও পাকাপোক্ত করা হয়েছে৷
গত শনিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারত সফর বিষয়ে সাংবাদিক সম্মেলন করেছেন৷ এর একদিন পরেই বিরোধীদলীয় নেত্রী এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন৷
প্রতিবেদন: সাগর সরওয়ার
সম্পাদনা: জাহিদুল হক