1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

প্রধানমন্ত্রী জাতীয় স্বার্থ বিকিয়ে দিয়ে এসেছেন: খালেদা জিয়া

১৭ জানুয়ারি ২০১০

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের চেয়ারপার্সন এবং জাতীয় সংসদে বিরোধী দলীয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাম্প্রতিক ভারত সফরের সময়ে সম্পাদিত চুক্তি জনসমক্ষে প্রকাশের দাবি জানিয়েছেন৷

https://p.dw.com/p/LYF4
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়াছবি: DW

রবিবার বিকালে ঢাকার গুলশান কার্যালয়ে আয়োজিত সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরকালে তিনটি চুক্তি, একটি সমঝোতা স্মারক ও একটি প্রটোকল সই হয়েছে বলে জানানো হয়েছে৷ এ সবের মধ্যে কী আছে সে সম্পর্কে দেশবাসী পুরোপুরি অন্ধকারে রয়েছে৷ যেসব বিষয়ে চুক্তি হয়েছে তা খুবই সংবেদনশীল৷ তিনি এসব চুক্তির বিষয়বস্তু বিস্তারিত প্রকাশের দাবি করেন৷

তিনি বলেন, আমরা গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছি যে, প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরকালে একটি গোপন নিরাপত্তা চুক্তিও সই হয়েছে বলে সংবাদপত্রে খবর বেরিয়েছে৷ প্রধানমন্ত্রী এ সম্পর্কে তাঁর সংবাদ সম্মেলনে সম্পূর্ণ নীরবতা পালন করায় জনমনে সন্দেহ আরো ঘণীভূত হয়েছে৷ তিনি এ ব্যাপারে সরকারের ষ্পষ্ট বক্তব্য দাবি করেন৷

খালেদা জিয়া বলেন, প্রধানমন্ত্রী তাঁর সদ্য সমাপ্ত ভারত সফরের ওপর গতকাল শনিবার যে সাংবাদিক সম্মেলন করেছেন, সেখানেও তিনি দেশবাসীকে প্রকৃত সত্য ও তথ্য জানাবার চাইতে বিরোধীদলকে অসংযত ভাষায় আক্রমণ করার ব্যাপারেই বেশি আগ্রহ দেখিয়েছেন৷ পাশাপাশি দিয়েছেন নানান রকম অসত্য তথ্য৷

তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দরের মোট ক্যাপাসিটির যথাক্রমে শতকরা ৪০ ও ১০ ভাগ বর্তমানে ব্যবহার করা হচ্ছে বলে যে তথ্য দিয়েছেন তা পুরোপুরি অসত্য৷ সকল সূত্র থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী এখন চট্টগ্রাম বন্দরের মোট ক্যাপাসিটির প্রায় ৬০ ভাগ এবং মংলা বন্দরের মোট ক্যাপাসিটির প্রায় ৪০ ভাগ আমরা ব্যবহার করছি৷ প্রতি বছরেই এই ব্যবহারের হার বাড়ছে৷ অথচ এই বন্দর দুটি ভারতকে ব্যবহার করতে দেয়ার ব্যাপারে সম্মতি জানিয়ে এসে প্রধানমন্ত্রী এখন এ সম্পর্কে মিথ্যা তথ্য দিয়ে জাতিকে বিভ্রান্ত করতে চাইছেন৷

খালেদা জিয়া দাবি করেন, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত ৫৪টি অভিন্ন নদ-নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা আদায়ের ব্যাপারে সফরে কোনো অগ্রগতিই হয়নি৷

প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরের আগে, প্রথম দিকে বলা হয়েছিল যে, তিস্তা নদীর পানি ভাগের ব্যাপারে সফরের সময়ে একটা চুক্তি হবে৷ পরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, তেমন কিছু হচ্ছে না৷ শেষ পর্যন্ত তিস্তার পানি ভাগেরও কোনো চুক্তি হয়নি৷ দুদেশের যৌথ ইশতেহারে এ নিয়ে আগামীতে বৈঠকের আশ্বাস মিলেছে মাত্র৷ তবে সবচেয়ে বেশি উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে, প্রধানমন্ত্রী ইতোমধ্যেই একাধিকবার বলেছেন যে, তিনি ফারাক্কার ব্যাপারে ভারতের সঙ্গে যে 'ট্রিটি'সই করেছিলেন, সেই আদলেই তিস্তার পানি ভাগের চুক্তি করতে চান৷ দেশের প্রতিটি সচেতন মানুষ জানে যে, ফারাক্কা ট্রিটিতে আমাদের কী মহাসর্বনাশ করা হয়েছিল৷

খালেদা জিয়া বলেন, বাংলাদেশ আজ নানামুখী আগ্রাসনের শিকার৷ এরমধ্যে সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ ও সুদুরপ্রসারী তাৎপর্য বহন করে৷ ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক নির্ণয়ের ক্ষেত্রে এ বিষয়টি উপেক্ষা করার উপায় নেই৷

তিনি বলেন, টিপাইমুখ প্রকল্প নিয়ে সারা জাতি উদ্বিগ্ন৷ এই উদ্বেগের সুরাহা করার বদলে প্রধানমন্ত্রী সম্পূর্ণ অসত্য তথ্য তুলে ধরে বলেছেন যে, আমরা সরকারে থাকতে নাকি এ প্রকল্পের ব্যাপারে কখনো কোনো প্রতিবাদ জানানো হয়নি৷

প্রকৃত সত্য হচ্ছে, আমরা বারবার প্রতিবাদ করেছি৷ এর আগে তথ্য প্রমাণ দিয়ে দেশবাসীকে তা জানিয়েছি৷ সে কারণে আমাদের সময়ে ভারত এ প্রকল্প নিয়ে অগ্রসর হতে পারেনি৷ এখন এই সরকারের আমলে ভারত ওই প্রকল্প নিয়ে তোড়জোর করছে৷ আর সরকার এর প্রতিবাদ না জানিয়ে বরং সমর্থনসূচক কথা বলছে৷ সে কারণেই দেশবাসী আরো বেশি উৎকণ্ঠিত৷

খালেদা জিয়া বলেন, প্রধানমন্ত্রী ভারত সফরে গিয়ে ৫০ দফা যৌথ ইশতেহারে সই করেছেন৷ এ পর্যন্ত শুধু এ ইশতেহারটুকুই জনসমক্ষে প্রকাশ করা হয়েছে৷ এতেই যা আছে তাতে প্রমাণিত হয়েছে যে, প্রধানমন্ত্রী জাতীয় স্বার্থ পুরোপুরি বিকিয়ে দিয়ে এসেছেন৷ ভারতকে সকল মাধ্যমে স্থায়ীভাবে ট্রানজিট সুবিধা দিয়েছেন৷ এ সবের ফলে সার্বভৌমত্বই কেবল ক্ষুন্ন হচ্ছে না, দীর্ঘমেয়াদে বাংলাদেশকে অর্থনৈতিকভাবে পঙ্গু করার ব্যবস্থাও পাকাপোক্ত করা হয়েছে৷

গত শনিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারত সফর বিষয়ে সাংবাদিক সম্মেলন করেছেন৷ এর একদিন পরেই বিরোধীদলীয় নেত্রী এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন৷

প্রতিবেদন: সাগর সরওয়ার

সম্পাদনা: জাহিদুল হক