প্রথম বিদেশ সফরে ভুটানে মোদী
১৭ জুন ২০১৪গত ১৩ বছরে এই প্রথম ভারতের কোন প্রধানমন্ত্রী হিমালয়ের কোল ঘেঁষা ভুটানে গেলেন সরকারি সফরে৷ মোদী সরকারের পররাষ্ট্র নীতির প্রথম কথা প্রতিবেশী দেশগুলির সঙ্গে বন্ধুত্ব ও সহযোগিতার বন্ধনকে আরো মজবুত ভিত্তিতে দাঁড় করানো৷ সেটা বোঝা গিয়েছিল গত মাসে নতুন দিল্লিতে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মোদীর শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে সার্ক দেশগুলির শীর্ষ নেতৃত্বের উপস্থিতি৷
সাবেক মনমোহন সিং সরকারের আমলে প্রতিবেশী দেশগুলির সঙ্গে ভারতের সম্পর্কের অবনতি হয়েছিল৷ দূরত্ব বাড়ছিল বিশেষ করে পাকিস্তান, নেপাল, মালদ্বীপ, শ্রীলঙ্কা ও ভুটানের সঙ্গে৷ সেই দূরত্বকে কাজে লাগিয়ে চীন ক্রমশই তার ‘‘সম্প্রসারণবাদের'' পাখা বিস্তার করে চলেছে ভারতের প্রতিবেশী দেশগুলির ওপর৷ পরোক্ষে ভারতকে কূটনৈতিক দিক থেকে বিচ্ছিন্ন করা৷ ভুটানের সঙ্গে চীনের ক্রমবর্ধমান সম্পর্কের কথা মাথায় রেখে ভুটানকে সে বিষয়ে সতর্ক করে দিতে ভারত-ভুটান দীর্ঘ বহুমাত্রিক সহযোগিতার বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন মোদী চলতি সফরের আলোচনায়৷
উল্লেখ্য, ভারতের প্রতিবেশী দেশগুলিতে আর্থিক ও বিনিয়োগ সহযোগিতা লাগাতার বাড়িয়ে চলেছে চীন৷ চলতি আর্থিক বছরের প্রথম ছয় মাসে ভারতের প্রতিবেশী দেশগুলিতে চীনের প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগের পরিমাণ ভারতের চেয়ে অনেক বেশি৷ আর্থিক মন্দাহেতু ভারত সেদিক থেকে অনেক পিছিয়ে পড়ে৷ নির্মাণ করে চলেছে সামরিক ও বাণিজ্যিক অবকাঠামো৷ যেমন পাকিস্তানের গদর ও শ্রীলঙ্কার হামবানটোটা সমুদ্র বন্দর৷ মিয়ানমারেও গভীর সমুদ্র বন্দর তৈরি হচ্ছে চীনের সহযোগিতায়৷ ভারত মহাসাগরীয় মালদ্বীপে সামরিক ঘাঁটি স্থাপনের জন্য বেছে নিয়েছে চীন৷ বাংলাদেশের চট্টগ্রামে কন্টেনার সার্ভিস গড়ে তুলতে আর্থিক সাহায্য দিচ্ছে চীন৷ ধর্মীয়, সাংস্কৃতিক ও জাতিসত্তার দিক থেকে ভারত-নেপাল সম্পর্কে ঐতিহাসিক সম্পৃক্ততা থাকলেও ইদানীং নেপাল ক্রমশই যেন চীন ঘেঁষা হয়ে উঠছে৷
তাই মোদীর ভুটান সফরের প্রাথমিক লক্ষ্য দুটি৷ অর্থনৈতিক ও উন্নয়ন সহযোগিতা এবং সীমান্তের নিরাপত্তা তথা কৌশলগত সহযোগিতা৷ অর্থনৈতিক ও কৌশলগত সহযোগিতা নিয়ে ভুটানের প্রধানমন্ত্রী শেরিং টোবগে এবং ভুটানের রাজা জিগমে নামগিয়াল ওয়াংচুকের সঙ্গে দীর্ঘ আলোচনা হয়৷ জলবিদ্যুৎ, তথ্যপ্রযুক্তি ও সিমেন্টসহ ১৬টি প্রকল্পে বিনিয়োগ করেছে ভারত৷ চলতি সফরে মোদী একগুচ্ছ আর্থিক সহযোগিতার কথা ঘোষণা করেছেন৷ ভারত থেকে গুঁড়ো দুধ, গম, ভোজ্য তেল, ডাল এ অ-বাসমতী চাল রপ্তানিতে পরিমাণগত নিয়ে কোনো নিষেধাজ্ঞা থাকবেনা৷ দু'দেশের মধ্যে মুক্ত বাণিজ্য নিয়েও মত বিনিময় হয়৷ একাদশ যোজনায় ৪,৫০০ কোটি টাকার প্যাকেজ দেয়া হবে ভুটানকে৷ গুরুত্ব দেয়া হবে কৃষি পরিকাঠামো এবং পর্যটন শিল্পকে৷ ৬০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার খিলোংচু জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের শিলান্যাস করেন তিনি৷ এতে ভুটানের আয় যেমন বাড়বে, তেমনি ভারত পাবে কম দামে বিদ্যুৎ৷ সীমান্ত নিরাপত্তার ক্ষেত্রে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলিতে কেএলও এবং আলফাহ অন্যান্য জঙ্গি সংগঠনগুলিকে ভারত-বিরোধী নাশকতামূলক কার্যকলাপ দমনে ভুটানের সহযোগিতা চেয়েছে ভারত৷ ভারতের পররাষ্ট্র সচিবের কথায়, ‘‘ভারত-ভুটান সম্পর্ক অনন্য ও বিশেষ৷''