1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‘প্রতিহিংসার রাজনীতি জনগণের থেকে বিচ্ছিন্ন করে'

সমীর কুমার দে
১০ এপ্রিল ২০১৮

হিংসা আর প্রতিহিংসা আমাদের রাজনীতির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত৷ কেউ কাউকে সহ্যই করতে পারে না৷ কিন্তু কেন এত হিংসা বাংলাদেশে? এ বিষয়ে ডয়চে ভেলের মুখোমুখি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক৷

https://p.dw.com/p/2veBn
বাংলাদেশ
ছবি: Journey/Z. Islam

ডয়চে ভেলে: বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া এখন কারাগারে৷ বিএনপি বলছে, আদালতের উপর সরকারের হস্তক্ষেপের কারণেই তিনি জামিন পাচ্ছেন না৷ আপনি কী মনে করেন?

অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক: আমার মনে হয় আদালত ও আইনের বিষয়গুলো আইনিভাবেই চলছে৷ আমরা তো দেখেছি এই মামলা দীর্ঘদিন ধরে চলেছে৷ এখানে যদি সরকারের হস্তক্ষেপ থাকত, তাহলে তারা যতদিন সময় চাচ্ছে, তাদের সেই সময়টা দেয়া হতো না৷ আমরা দেখি, বাংলাদেশের সর্বক্ষেত্রেই দীর্ঘসূত্রিতা৷ যখন কোনো আইনি বিষয়ে যাই, তখনও দেখি এই দীর্ঘসূত্রিতা৷ সেই দীর্ঘসূত্রিতা এখানেও ছিল৷ আমরা দেখেছি ২০০৪ সালে গ্রেনেড হামলা হয়েছে৷ যে হামলার শিকার বর্তমান প্রধানমন্ত্রী৷ আমরা এতদিনেও সেই মামলার রায় আমরা পাইনি৷ অর্থাৎ এখানেও দীর্ঘসূত্রিতা৷ আমার মনে হয় না এখানে সরকারের কোনো হস্তক্ষেপ ছিল৷ আইন অনুযায়ী মামলা চলেছে, বিচার হয়েছে৷

খালেদা জিয়া কারাগারে যাওয়ায় গণতন্ত্র কি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে?

‘প্রতিহিংসার রাজনীতি আমরা বিভিন্ন সময় দেখেছি’

গণতন্ত্র গণতন্ত্রের মতো চলছে৷ আমাদের দেশে গণতন্ত্র কে ক্ষতিগ্রস্থ করেছে, কীভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে –সেটা আমরা জানি৷ আমরা দেখেছি, এখানে গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত হয়েও কীভাবে গণতন্ত্রকে লাঞ্ছিত করা হয়েছে৷ আমরা এ-ও দেখেছি যে, বিএনপি মানবতাবিরোধী অপরাধীদের নিয়ে সরকার গঠন করেছে৷ এর থেকে গণতন্ত্রকে লাঞ্ছিত করার আর কী দৃষ্টান্ত থাকতে পারে?

অনেকেই এটাকে প্রতিহিংসার রাজনীতি বলছেন৷ আমরা কি তাহলে প্রতিহিংসার রাজনীতির দিকে যাচ্ছি?

রাজনীতিতে প্রতিহিংসার কোনো স্থান নেই৷ রাজনীতিতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা থাকবে, প্রতিযোগিতা থাকবে, কিন্তু প্রতিহিংসা থাকতে পারে না৷ এই কথাগুলো যাঁরা বলছেন, তাঁরা নিজস্ব স্বার্থ বা সংকীর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি থেকে কথাগুলো বলেন৷ আমাদের দেশের মানুষ গণতন্ত্রমনা এবং খুবই রাজনীতি সচেতন৷ তাই আমরা মনে হয় না কেউ প্রতিহিংসার রাজনীতি করে এগিয়ে যেতে পারবে৷

সর্বশেষ ক্ষমতায় থাকার সময় বিএনপি যা করেছে, তার প্রতিশোধ নিতেই কি বিএনপির উপর খড়গহস্ত হয়েছে সরকার? আপনি কী মনে করেন?

সরকার খড়গহস্ত হয়েছে এমন দৃষ্টান্ত তো আমরা দেখি না৷ তবে বিএনপি থেকে এ কথাটা বারবার বলা হচ্ছে৷ অথচ বিএনপি কিন্তু তাদের নিয়মিত কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে৷ তাদের বিভিন্ন মুখপাত্রের বক্তব্য বা মন্তব্য প্রতিদিনই আমরা গণমাধ্যমে দেখছি৷ এগুলো গণমাধ্যমে অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে প্রচারিত হচ্ছে, সম্প্রচারিত হচ্ছে৷ আদালতের মামলাগুলো আদালতের নিয়ম অনুযায়ী চলছে৷ এটা একটা দিক৷ অন্য কোনো দিকেও বিএনপির কোনো সীমাবদ্ধতা আমরা লক্ষ্য করছি না৷ এমনকি বিএনপি অনেক জায়গায় অনেক কথা বলছে, যা সত্যের অপলাপ ছাড়া কিছুই না৷

বিএনপি বলছে প্রতিহিংসার কারণে তাদের অনেক নেতা-কর্মী এখনো কারাগারে...

বিএনপি তাদের স্বার্থের কথা মাথায় রেখেই কথাগুলো বলে৷ কিন্তু আমরা সাধারণ মানুষ যারা একটু রাজনীতি নিয়ে খোঁজ-খবর রাখি, তারা তো দেখছি যে, বিএনপি তাদের মতো করেই কার্যক্রম পরিচালনা করছে৷ সেখানে তাদের উপর প্রতিহিংসার রাজনীতি কোথায় ঘটল, সেটা তো আমরা বুঝতে পারি না৷ প্রতিহিংসার রাজনীতি যারাই করছে, তারাই জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে৷ প্রতিহিংসার রাজনীতি যদি বলতে হয়, তাহলে বিএনপিই সেটা করেছে, করছে৷ বিশেষ করে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগের সামাবেশে যে গ্রেনেড হামলা হয়েছে, সেখানে তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেত্রীসহ আওয়ামী লীগের সব নেতাকে একসঙ্গে হত্যার পরিকল্পনা করা হয়৷ এটাকে বলা যেতে পারে ধ্বংসের রাজনীতি৷ এর আগে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করে আওয়ামী লীগকে ধ্বংস করার চেষ্টা করা হয়েছিল, বাংলাদেশকে ধ্বংস করার চেষ্টা করা হয়েছিল৷ প্রতিহিংসার রাজনীতি বলতে এর চেয়ে বড় আর কী হতে পারে?

বিএনপি বলছে, সরকার তাদের দল ভাঙার চেষ্টা করছে৷ এটা কি প্রতিহিংসার কারণে?

আমার মনে হয়, বিএনপি যে কথাগুলো বলছে সেটা তাদের অবস্থা থেকে, দৃষ্টিভঙ্গি থেকে৷ সর্বক্ষেত্রেই হয়ত তারা প্রতিহিংসার রাজনীতি দেখেছে৷ কারণ, তারা প্রতিহিংসার রাজনীতি করে এ পর্যন্ত এসেছে৷ সে কারণে সবখানেই তারা প্রতিহিংসার রাজনীতি দেখে৷

সম্প্রতি একটি জার্মান গবেষণা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে স্বৈরতন্ত্রের কথা বলেছে৷ আপনি এ বিষয়ে কী বলবেন?

আমি পুরো রিপোর্টটা দেখিনি, সংবাদপত্রে সংক্ষিপ্ত পরিসরে যা এসেছে তা দেখেছি৷ নানা ধরনের ষড়যন্ত্র সারা বিশ্বেই হয়৷ আর সেটা বহুভাবে হয়৷ এটাও কোনো ধরনের ষড়যন্ত্রের অংশ কিনা সেটা আমাদের দেখার দরকার আছে৷ কারণ, স্বৈরতন্ত্র বলতে কী বোঝায়, তার ব্যাখা করা প্রয়োজন৷ এ দেশ গণতান্ত্রিকভাবে পরিচালিত হচ্ছে৷ গণমাধ্যম এখানে সম্পূর্ণ স্বাধীনতা ভোগ করছে৷ সাধারণ মানুষ প্রতিনিয়ত সেটা দেখতে পাচ্ছে৷ সেখানে তারা কোথায় স্বৈরতন্ত্র পেলো, সেটা নির্দিষ্ট করে বললে হয়ত আমরা বুঝতে পারবো৷

কেউ কেউ বলছেন, এটা বিএনপির প্রতি সরকারের আচরণের প্রতিফলন৷ আপনি কী মনে হয়?

আসলে তাদের গবেষণা পদ্ধতি কী ছিল, সেটা আগে দেখতে হবে৷ কীভাবে তারা গবেষণাটি করেছে, সেটা আমাদের জানতে হবে৷ একটা কথা বলে উপসংহার টেনে দিলে সেটা অপসাংবাদিকতা ছাড়া আর কিছুই না৷

বলা হচ্ছে, বাংলাদেশে বাকস্বাধীনতা এখন অনেকটাই সংকুচিত, আসলেই কি তাই?

আমরা দেখি সর্বোচ্চ বাকস্বাধীনতা ভোগ করছেন বিরোধী দলের নেতৃবৃন্দ৷ ভোগ করছে সাধারণ মানুষও৷ আমাদের ইন্টারনেট জগৎ তো পুরোটাই স্বাধীন৷ আমরা দেখছি, এই ইন্টারনেটে অনেকেই অনেক কিছু দিচ্ছে যার পুরোটা মিথ্যা৷ ফলে বাকস্বাধীনতা কোনোভাবে ক্ষুণ্ণ হচ্ছে বলে আমার মনে হয় না৷ বরং বাকস্বাধীনতার কারণে বিভিন্ন ব্যক্তি যা বলছেন, তা হুবহু গণমাধ্যমে প্রচারিত হচ্ছে৷ বাকস্বাধীনতার সঙ্গে গণমাধ্যমের স্বাধীনতার যে একটা বড় পার্থক্য আছে, সেটা আমাদের বুঝতে হবে৷ যে কেউ কিছু একটা বললেই সেটা যে যাচাইবাছাই ছাড়া গণমাধ্যমে আসতে পারে না – এই জায়গায় বাংলাদেশে বড় ধরনের দুর্বলতা আছে৷ সেই কারণে অনেকে বাকস্বাধীনতার সঙ্গে সংবাদপত্রের স্বাধীনতাকে এক করে ফেলছে৷ বাকস্বাধীনতার নামে আজকে আমরা যা বলছি, সেটা কালকে বা আজকেই গণমাধ্যমে প্রচারিত হচ্ছে৷ আমাদের বুঝতে হবে বাকস্বাধীনতার নামে সংবিধান আমাদের যেটা দিয়েছে, সেটা আমরা ভোগ করতে পারি৷ কিন্তু সেটা গণমাধ্যমে আসতে হলে গণমাধ্যমের স্বাধীনতার যে শর্তাবলী আছে, সেটাও অনুসরণ করতে হবে৷ তারপর গণমাধ্যম সেটা প্রচার বা সম্প্রচার করবে৷ বাকস্বাধীনতা ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা কখনোই এক জায়গায় থাকতে পারে না৷

প্রতিহিংসার রাজনীতি বাংলাদেশের জন্য কতটা ক্ষতিকর?

প্রতিহিংসার রাজনীতি আমরা বিভিন্ন সময় দেখেছি, বিএনপি আমলে, স্বৈরশাসকের আমলে৷ তখনকার সেই রাজনীতি আমাদের দেশকে অনেক পিছিয়ে দিয়েছে৷ এখন যে আমরা গণতন্ত্রের পথে চলছি, আছি, সে কারণে জাতিসংঘের মতো বিশ্ব সংস্থাগুলি আমাদের স্বীকৃতি দিচ্ছে৷ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে আমাদের উত্তরণ ঘটছে৷ তাই আমার মনে হয়, প্রতিহিংসার রাজনীতি পেছনে ফেলে আমাদের সামনের দিকে এগোতে হবে৷

প্রতিহিংসার রাজনীতি থেকে বের হওয়ার পথ কী?

প্রতিহিংসা কেন হয়? যখন কোনো মানুষ সংকীর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে কোনো একটি বিষয় দেখে বা কোনো রাজনৈতিক সংগঠন সংকীর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে কাজ করে৷ বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা যারা ধারণ করবে, তাদের মধ্যে প্রতিহিংসার কোনো স্থান থাকতে পারে না৷ আমাদের যেখানে মুক্তিযুদ্ধের আদর্শকে ধারণ করে রাজনীতি করা প্রয়োজন, সেখানে অনেক রাজনৈতিক দল মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করা রাজনৈতিক দলকে সঙ্গে নিয়ে এগোতে চায়৷ আমি মনে করি, আমাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণ করে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে৷ তাহলে কারো মধ্যে কোনো ধরনের কলুষতা থাকবে না, থাকতে পারে না৷

প্রতিহিংসা সমাজের কতটা গভীরে প্রথিত বলে আপনার ধারণা? লিখুন নীচের ঘরে৷