প্রতিবাদে উত্তাল ভারত, নেতৃত্বে ছাত্ররা
১৬ ডিসেম্বর ২০১৯প্রথমে ছিল আসাম সহ উত্তর পূর্বের রাজ্যগুলি৷ কিন্তু যত দিন যাচ্ছে ততই নাগরিকত্ব সংশোধন আইনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ আন্দোলন ছাত্র আন্দোলনে পরিণত হচ্ছে৷ দিল্লিতে জামিয়া মিলিয়া, দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়, জেএনইউ, কলকাতায় যাদবপুর, প্রেসিডেন্সি, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়, মুম্বইয়ে টাটা ইনস্টিটিউট অফ সোস্যাল সায়েন্সেস
ও আইআইটি, উত্তর প্রদেশে আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়, বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়, হায়দরাবাদে মৌলানা
আবুল কালাম আজাদ উর্দু বিশ্ববিদ্যালয় এবং লখনউয়ের নাদোয়া কলেজে ছাত্রছাত্রীরা নাগরিকত্ব বিলের প্রতিবাদে রাস্তায় নেমেছেন৷ দিল্লিতে জামিয়ার ছাত্রছাত্রীদের ওপর পুলিশের নির্মম প্রহার ও বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢুকে লাঠিচার্জ ও কাঁদানে গ্যাস ছোড়ার প্রতিবাদে সারা রাত ছাত্রছাত্রীরা ক্য়াম্পাসে অবস্থান প্রতিবাদ করেছেন৷ সকাল থেকে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে আবার শুরু হয়ে গিয়েছে প্রতিবাদ৷ জামিয়াতেও নতুন করে প্রতিবাদ শুরু হয়েছে৷
সোমবার সকালে ছাত্রদের পক্ষে এবং পুলিশের বিরুদ্ধে হিউম্যান রাইটস ল নেটওয়ার্ক সুপ্রিম কোর্টে আবেদনও করেছিল৷ কিন্তু প্রধান বিচারপতি বোবদের বেঞ্চ জানিয়ে দিয়েছে,যতক্ষণ হিংসা চলবে, ততক্ষণ তাঁরা এই আবেদন শুনবেন না৷ যদিও শেষ পর্যন্ত আদালত জানিয়েছে মঙ্গলবার আবেদন শোনা হবে৷ বিক্ষোভ শুরু হয়েছে পশ্চিমবঙ্গেও৷ তার মধ্যেই এ দিন রাস্তায় নামেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ আইনের বিরুদ্ধে মিছিল করেন শহরের রাজপথে৷ তাঁর মতোই, কেরলের পিনারাই বিজয়ন, পাঞ্জাবের অমরিন্দর সিং, মধ্য প্রদেশে কমল নাথ, ছত্তিশগড়ে ভূপেশ বাঘেল জানিয়েছেন, তাঁরা এই আইন নিজেদের রাজ্যে কিছুতেই চালু হতে দেবেন না৷
ছাত্রছাত্রীদের প্রতিবাদের মোকাবিলায় পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রবল বিতর্ক দেখা দিয়েছে গোটা দেশ জুড়ে৷ বিশেষ করে দিল্লি ও উত্তর প্রদেশে পুলিশ যে ভূমিকা নিয়েছে, যেভাবে তারা লাঠি, গুলি চালিয়েছে, তার ছবি এবং ভিডিও ভাইরাল হয়ে গিয়েছে৷ নড়েচড়ে বসেছে নাগরিক সমাজ৷ জামিয়ায় বিক্ষোভ সামাল দিতে পুলিশ বেধড়ক লাঠি চালিয়েছে৷ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়াই ক্যাম্পাসে ঢুকে লাঠি ও কাঁদানে গ্যাসের শেল ফাটায় পুলিশ৷ এমনকি, লাইব্রেরির কাঁচ ভেঙে ভিতরে আটকে থাকা ছাত্রছাত্রীদের ওপরও কাঁদানে গ্যাসের শেল ফাটানো হয়৷ একেক জন ছাত্রকে ঘিরে ধরে চার পাঁচজন পুলিশ কর্মী তার ওপর বেধড়ক লাঠি চালিয়েছে৷ কোনও কোনও ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, পুলিশ ছাত্রকে বাউন্ডারি ওয়ালের রেলিং ধরে দাঁড় করিয়ে মারছে৷ ছাত্রদের অভিযোগ, পুলিশ গুলিও চালিয়েছে এবং তারাই বাসে আগুন ধরিয়েছে৷ সেই ভিডিও তারা আপলোড করার কথা বলেছে৷ দিল্লির উপমুখ্যমন্ত্রী মনীষ সিসোদিয়া তিনটি ছবি সহ টুইট করে বলেছেন, '‘দেখুন, কারা দিল্লিতে বাসে আগুন লাগাচ্ছে৷’'
দিল্লিতে রবিবার চারটি বাস ও দুটি পুলিশের গাড়িতে আগুন ধরানো হয়৷ পুলিশ প্রচুর ছাত্রছাত্রীকে গ্রেফতার করেছিল৷ রাতে সংখ্যালঘু কমিশনের নির্দেশে তারা আহতদের ছেড়ে দেয়৷ তবে পাঁচশো জনের বিরুদ্ধে হিংসার অভিযোগ আনা হয়েছে৷
রবিবার রাতে জামিয়ার খবর আলিগড়ে পৌঁছলে সেখানেও ছাত্রছাত্রীরা প্রতিবাদ মিছিল করতে যায় ও পুলিশ তাদের বাধা দেয়৷ এরপর আলিগড়ও রণক্ষেত্র হয়ে ওঠে৷ পুলিশ জানিয়েছে, সোমবার তারা পুরো বিশ্ববিদ্যালয় খালি করে দেবে ও সবাইকে বাড়ি পাঠিয়ে দেবে৷ ৫ তারিখ পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে৷ পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জায়গায় পরিস্থিত ক্রমশ উত্তেজক হচ্ছে৷ মুর্শিদাবাদ, দুই চব্বিশ পরগনা, মালদা, হাওড়া, নদীয়ায় হিংসা ছড়াচ্ছে৷ প্রতিবাদকারীরা বেশ কিছু জায়গায় স্টেশনে হামলা করেছে৷ খালি ট্রেনে আগুন ধরানো হয়েছে৷
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায় বলেছেন, আন্দোলন শান্তিপূর্ণ হতে হবে৷ কড়া হাতে হিংসার মোকাবিলা করা হবে৷ তবে তিনি নিজেও প্রতিবাদে সামিল হচ্ছেন এবং মিছিল করছেন৷ বুদ্ধিজীবী ও নাগরিক সমাজও প্রতিবাদে সামিল হচ্ছে৷ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবীদের একাংশ জানিয়েছেন, তাঁরা বৈঠক করে পরবর্তী অবস্থান ঠিক করবেন৷ জামিয়ার উপাচার্য নাজমা আখতার বলেছেন, তিনি ছাত্রছাত্রীদের পাশে আছেন৷ সাহিত্যিক চেতন ভগতও টুইট করে ছাত্রছাত্রীদের পাশে থাকার বার্তা দিয়েছেন৷ এরই মধ্যে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর মন্তব্য নিয়েও প্রবল বিতর্ক শুরু হয়েছে৷ ঝাড়খণ্ডের জনসভায় মোদী বলেছেন, অসমে কারা হিংসা ছড়াচ্ছে তা তাদের পোশাক দেখেই বোঝা যাচ্ছে৷
সবমিলিয়ে প্রতিবাদ-আন্দোলন ক্রমশ ছড়াচ্ছে এবং প্রতিবাদে প্রধান ভূমিকা নিচ্ছে ছাত্রছাত্রীরা৷
জিএইচ/এসজি (এনডিটিভি, নিউজ ১৮)