1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

প্রতিবাদ জানানো মানেই অপরাধ?

২০ আগস্ট ২০১৮

সম্প্রতি ‘গুজব' ছড়ানো, কিংবা ‘উসকানি' দেয়ার জন্য অনেককেই আইনের মুখোমুখি হতে হয়েছে ও হচ্ছে৷ এ থেকে কেমন একটা ভয়ের সংস্কৃতি যেন তৈরি হয়েছে বলে অনুমান হয়৷ এ অবস্থা থেকে বের হওয়া দরকার৷

https://p.dw.com/p/33M78
ছবি: picture-alliance/Pacific Press/M. Asad

দেশের অন্যতম সেরা বিদ্যাপীঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়৷ কী রাজনীতি, কী অর্থনীতি, কী বিজ্ঞান সবক্ষেত্রেই অবদান রাখা অনেক বিখ্যাত ব্যক্তি বেরিয়ে এসেছেন এখান থেকে৷ তার চেয়েও বড় কথা, এই বিদ্যাপীঠে শিক্ষার্থীরা সচেতন নাগরিক হিসেবে গড়ে ওঠেন৷ বাংলাদেশের ইতিহাসে অধিকাংশ ছাত্র আন্দোলনেরই সূতিকাগার এই প্রাঙ্গণ৷এমন ধারণা নিয়েই এসেছিলাম এখানে৷

এখানকার মুক্ত বাতাসে মুক্ত হয়ে বেড়ে উঠব, এমন অনুভূতি খেলা করত সবসময়ই৷ সেই অনুভূতি আরো পোক্ত হলো যখন এসেই দেখি, প্রতিবাদমুখর একদল শিক্ষার্থী শহীদ মিনারে জড়ো হয়েছেন৷ সেটি ছিল শামসুন্নাহার হল আন্দোলন৷ প্রথমে কিছু না বুঝলেও শিরা-উপশিরায় তখন রক্তের বেগ টের পাই৷

প্রাতিষ্ঠানিক পৃষ্ঠপোষকতার বাইরে গিয়ে কীভাবে সাধারণের পৃষ্ঠপোষকতায় জাতীয় পর্যায়ের অনুষ্ঠান করা যায়, তা শিখেছি ও করেওছি এখানে৷ সেইসব অনুষ্ঠানের মৌলিক ভাষা ছিল, ছিল মৌলিক আবেদন৷

এসব করতে করতেই একদিন শুনি, বইমেলার বাইরে ধারালো অস্ত্রের আঘাতে রক্তাক্ত হয়েছেন ড. হুমায়ুন আজাদ৷ একদিন শুনি, সহপাঠীকে গুড়িয়ে দিয়ে চলে গেছে ঘাতক বাস৷ আরেকদিন চোখের সামনেই দেখি, বিনা অনুমতিতে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ঢুকে বেপরোয়া চালক বাস তুলে দিলেন দুই শিক্ষার্থীকে বহন করা রিক্সায়৷

এসব ঘটনায় প্রতিবাদ জানিয়েছেন হাজারো শিক্ষার্থী৷ বিচারের দাবিতে রাস্তায় নেমে আসা এই শিক্ষার্থীদের ওপর প্রশাসনের দমনে প্রিয় ক্যাম্পাস হয় রণক্ষেত্র৷ সরকারি দলের ছাত্র সংগঠনের নেতা-কর্মীদের হাতে নিপীড়নের শিকার হতে দেখেছি সহপাঠীদের৷

এতদিন পর যখন আবারো দেখি, নানা ঘটনায় প্রতিবাদ জানাতে শিক্ষার্থীরা মাঠে নামছে, অন্যায়ের বিরুদ্ধে তাদের বোধটুকু টের পাই৷

সরকার বদলায়৷ বদলায় না প্রশাসনের আচরণ৷ এখনো দেখি, সেই একই কায়দায় প্রশাসন বা সরকারি দলের অঙ্গ সংগঠনের ছেলেরা হামলে পড়ে শিক্ষার্থীদের ওপর৷ এই অপসংস্কৃতি বদলায় না৷ বরং দিন দিন তা আরো ভয়ঙ্কর দানবে পরিণত হয়৷

জনরোষ খুবই স্বাভাবিক বিষয়৷ যে কোনো সমাজেই এই রোষের আশঙ্কা নিয়ত বিদ্যমান৷ জনগণ কোনো কারণে নিজেদের বঞ্চিত ভাবলেই এর উদ্ভব ঘটে৷ তাই রাষ্ট্রের দায়িত্ব জনগণকে বঞ্চনার হাত থেকে রক্ষা করা৷ তা যখন ঘটবে না, তখন প্রতিবাদ হবে, বিক্ষোভ হবে৷

যে কোনো উত্তেজনা, উসকানি, যা জানমালের জন্য ক্ষতিকর, তা সরকার দমন করবে, সেটাও স্বাভাবিক৷ কিন্তু সেই দমন যখন একতরফা হবে, তখন তা জাতির জন্য বিপজ্জনক৷ বিক্ষোভ বা জনরোষ সামাল দিতে হবে৷ কিন্তু সেই অসন্তোষের মূলেও যেতে হবে৷ সমস্যা চিহ্নিত করে তা জনগণের কল্যাণে সমাধানও করতে হবে৷ যদি তা না করা হয়, সেই রোষ আবারো মাথাচাড়া দেবে৷ একেকবার একেক কায়দায়৷

Zobaer Ahmed
যুবায়ের আহমেদ, ডয়চে ভেলেছবি: Zobaer Ahmed

নিরাপদ সড়কের দাবির আন্দোলন কিংবা কোটা সংস্কার আন্দোলন সরকার আপাত সামাল দিতে পেরেছে বটে৷ কিন্তু এসব সমস্যার মূলে যেতে হবে৷

নিরাপদ সড়কের বিষয়ে নতুন করে কিছু বলার দরকার নেই৷ এর দুষ্টচক্রকে ভাঙতে হবে সরকারকেই৷ তা না হলে আজ কচিমনগুলোতে যে অসন্তোষ, যে ক্ষত তৈরি হলো, তা বয়ে নিয়ে বেড়াবে এই প্রজন্ম৷ সেটা নিশ্চয়ই কারো জন্য ভালো হবে না৷

শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের পর আবারো রাজধানীর রাস্তার প্রায় একই পরিণতি হয়েছে৷ আন্দোলনের পর যেসব উদ্যোগ নেয়ার প্রতিশ্রুতি সরকার করেছে, সেগুলো দ্রুত বাস্তবায়ন করতে হবে৷ তাহলে নিজেদের বঞ্চিত মনে করবে না এই প্রজন্ম৷ আর শুধু আন্দোলন করার জন্য যেসব শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে, তাদের ছেড়ে দিতে হবে৷

অন্যদিকে, শ্রমের বা কর্মের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে সরকারকে আরো তৎপর হতে হবে৷ যদি তেমন এক পরিবেশ থাকত এ দেশে, আমার ধারণা, কোটা সংস্কারের বিক্ষোভই হতো না৷

আর জনগণ যে কোনো সিস্টেম নিয়ে অসন্তুষ্ট হলে প্রতিবাদ জানাবেই৷ প্রতিবাদ কখনো অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হওয়া উচিত নয়৷ 

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য