প্রতি বছর বিশ্বে এক-তৃতীয়াংশ খাদ্য স্রেফ অপচয় হয়!
১২ মে ২০১১রিপোর্টটির নাম হল: বিশ্বে খাদ্য নষ্ট এবং খাদ্যের অপচয়৷ এফএও সুইডেনের একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে এই সমীক্ষা করিয়েছে৷ সমীক্ষায় দেখা যায়, খাদ্য নষ্ট অথবা অপচয়ের ক্ষেত্রে যেমন শিল্পোন্নত, তেমনই উন্নয়নশীল দেশগুলি, কেউই কম যায় না৷ শিল্পোন্নত দেশগুলি বছরে ৬৭০ মিলিয়ন টন খাদ্য ‘‘অপচয়'' করে৷ উন্নয়নশীল দেশগুলিতে বছরে ৬৩০ মিলিয়ন টন খাদ্য ‘‘নষ্ট'' হয়৷
উন্নয়নশীল দেশগুলিতে খাদ্য নষ্ট হয় উৎপাদন, ফসল তোলা, ফসল জমা করা এবং ফসল প্রক্রিয়াজাত করার সময় - কেননা এসব দেশে অবকাঠামো ভালো নয়, প্রযুক্তির মান নিম্ন এবং খাদ্য উৎপাদন প্রক্রিয়ায় বিনিয়োগ কম৷ সে তুলনায় শিল্পোন্নত দেশগুলিতে যেমন পাইকারি বিক্রেতা, তেমনই একক গ্রাহক-ক্রেতারা যথেচ্ছ খাদ্যের অপচয় করে, যার ফলে সম্পূর্ণ গ্রহণযোগ্য খাদ্য নিমেষে আস্তাকুঁড়ে গিয়ে পড়ে৷
ইউরোপ এবং উত্তর আমেরিকায় মাথাপিছু খাদ্য অপচয়ের পরিমাণ হল ৯৫ থেকে ১১৫ কিলোগ্রাম৷ সে তুলনায় সাহারা মরুভূমির দক্ষিণাঞ্চলের আফ্রিকায়, অথবা দক্ষিণ এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মানুষরা বছরে মাত্র ৬ থেকে ১১ কিলোগ্রাম খাদ্য অপচয় করে৷ অর্থাৎ ধনী দেশগুলির মানুষেরা প্রতিবছর যে পরিমাণ খাদ্য অপচয় করে - ২২২ মিলিয়ন টন - তা হল সাহারা মরুভূমির দক্ষিণাঞ্চলের আফ্রিকায় প্রতিবছর যে পরিমাণ খাদ্য উৎপাদন করা হয় - ২৩০ মিলিয়ন টন - প্রায় তার সমান৷
ধনী দেশগুলিতে সবচেয়ে বেশি নষ্ট করা হয় ফলমূল এবং সবজি৷ ইউরোপে কলা কতটা বাঁকা হবে, আপেলের সাইজ এবং রং কি হবে, সবই নির্দিষ্ট করে দেওয়া আছে৷ অর্থাৎ চোখের দেখাটা এখানে প্রায় স্বাদ কিংবা উপকারিতার মতোই গুরুত্বপূর্ণ৷ তার ফলে একদিকে ক্রেতারা যেমন অতিমাত্রায় খুঁতখুঁতে, তেমন বিক্রেতারা নির্দ্বিধায় বাক্স বাক্স, টন টন ফলমূল ফেলে দেন৷ আর নয়তো ক্রেতাদের অকারণে বেশি কিনতে উৎসাহিত করা হয়: ‘তিনটে কেন, দুটোর দাম দাও', এই ধরণের বাম্পার অফার দিয়ে৷ কিন্তু প্রয়োজনের বেশি কেনার অর্থ, তা'ও শেষমেষ অপচয় হয়৷
উন্নয়নশীল দেশগুলির জন্য রিপোর্টে বিভিন্ন পরামর্শ দেওয়া আছে, যার কোনোটাই বস্তুত নতুন নয়: ছোটচাষিদের সরাসরি গ্রাহকদের কাছে পণ্য বেচবার ব্যবস্থা করো৷ অবকাঠামো, পরিবহণ এবং প্রসেসিং ও প্যাকেজিং'এ আরো বেশি সরকারি ও বেসরকারি বিনিয়োগ চাই৷ এবং ধনী-দরিদ্র দুদেশেই সবার আগে যেটা চাই, তা হল শিক্ষা: খাদ্য অপচয় না করার শিক্ষা৷
প্রতিবেদন: অরুণ শঙ্কর চৌধুরী
সম্পাদনা: সঞ্জীব বর্মন