প্রচণ্ড শীতে সজারু, পাখি আর ইঁদুর যেভাবে বেঁচে থাকে
জুতা, হাতমোজা আর জ্যাকেট ছাড়াই কিভাবে ছোট ছোট প্রাণী প্রচণ্ড শীতের মধ্যে বেঁচে থাকে? আসলে, তারা কিছু বিশেষ কৌশলের আশ্রয় নেয়৷
ওদের পায়ে কি ঠান্ডা লাগে না?
গ্রিনফিন্চের মতো পাখিগুলোর পা সাকুল্যে দুই মিলিমিটারের মতো লম্বা৷ এত ছোট এবং সরু পা নিয়ে কিভাবে তুষারপাতের মধ্যে টিকে থাকে, যখন আমাদেরই পায়ের পাতা তাতে ডুবে যায় এবং দ্রুত জমে যায়?
শরীরেই তুষারপ্রতিরোধ ব্যবস্থা
পাখিদের দেহের শিরাগুলোতে একধরনের তাপমাত্রা পরিবর্তনের ব্যবস্থা রয়েছে৷ আর বরফের উপর হাঁটার সময় এই ব্যবস্থা তাদের শীত থেকে বাঁচায়৷ বিশেষ এই শিরাগুলো দেহ থেকে পায়ের দিকে গরম রক্ত প্রবাহিত করে আর ঠান্ডা রক্ত দেহের ভেতরে ফিরিয়ে আনে৷
এই ব্যবস্থা বন্ধও করা যায়
আমাদের বাড়িঘরের হিটার যেমন প্রয়োজন না হলে বন্ধ রাখা যায়, সেভাবে গরম আবহাওয়ার সময় পাখিরাও তাদের পা গরম রাখার ব্যবস্থা বন্ধ রাখতে পারে৷ আর সেই সময় শরীরের বাড়তি তাপ ঝেড়ে ফেলতে পায়ের সাহায্য নেয় পাখিরা, কেননা, পালকের কারণে তারা ঘামতে পারে না৷ শীতের সময় টিকে থাকতে পাখিদের খাবারের প্রয়োজন হয়৷ খুব বেশি তুষারপাত না হলে সেটা নিজেরাই খুঁজে নিতে পারে৷
বেশি ঠান্ডায় সহায়তা করতে পারি আমরা
যখন প্রচণ্ড তুষারপাত হয়, তখন মানুষ পাখিদের সহায়তায় এগিয়ে আসতে পারে৷ যেমন, ছোট্ট এই পাখিদের বীজ এবং শষ্য দিয়ে তৈরি খাবার দেয়া হয়েছে৷ এর মধ্যে প্রচণ্ড এনার্জি রয়েছে৷ আরো একটি কারণে আসলে পাখিরা শীত বেশি অনুভব করে না৷ সেটি হচ্ছে, তাদের গায়ে থাকা পালক৷
পাতার মধ্যে লুকিয়ে থাকা
শীতের আগেই বেশি বেশি খেয়ে শরীরে শক্তি জমিয়ে রাখে সজারু৷ এরপর তারা জঙ্গলের মধ্যে পড়ে থাকা পাতার স্তুপের মধ্যে শীতনিদ্রায় চলে যায়৷ আপনি যদি শীতের মধ্যে কোনো দুর্বল সজারুর দেখা পান, তাহলে স্থানীয় প্রাণী আশ্রয়কেন্দ্রে যোগাযোগ করতে পারেন৷ তারা তখন প্রাণীটিকে বাঁচিয়ে রাখতে বাড়তি উদ্যোগ নেবে৷
শীতে যাদের খুঁজে পাওয়া দুষ্কর
ইঁদুর আর কাঠবিড়ালের মতো দেখতে ডোরমাউস শীতকালে মাটির নীচে চলে যায়৷ এটি মাটির নীচে এক মিটার অবধি গর্ত খুঁড়তে পারে৷ আর শীতনিদ্রার সময় মূলত দেহে থাকা ফ্যাটের উপর নির্ভরশীল থাকে এই প্রাণী৷ আর শক্তি কম খরচ করার জন্য শ্বাস-প্রশ্বাসের মাত্রা এবং দেহের তাপমাত্রাও অনেক কমিয়ে আনতে পারে ডোরমাউস৷
ময়লা আবর্জনার মধ্যে দলবেঁধে থাকা
শীতকালে ইঁদুর মানুষের মতোই গা ঘেঁষাঘেঁষি করে থাকতে পছন্দ করে৷ এজন্য তারা বেছে নেয় কম্পোস্টের জন্য ফেলে দেয়া ময়লা আবর্জনার স্তুপ৷ সেখানে প্রচণ্ড ঠান্ডা সাধারণত পৌঁছায় না আর প্রয়োজনের সময় কিছু না কিছু খাবার পাওয়াই যায়৷
বিরক্ত করবেন না
বড় হরিণ এবং বুনো ভাল্লুকগুলো সাধারণত শীতের সময় শীতনিদ্রায় যায় না৷ ফলে তাদের টিকে থাকতে শীতের মধ্যেও খাবার খুঁজতে হয়৷ ফলে তাদের শক্তি সঞ্চয় করে রাখার স্বার্থে বেশি দৌঁড়ঝাঁপ থেকে বিরত থাকতে হয়৷ এ ধরনের প্রাণীকে শীতকালে কোনোভাবে বিরক্ত করা ঠিক নয়৷
মশারা টিকে থাকে
অনেক কীটপতঙ্গ শীতকালে বেঁচে থাকতে গর্ত বা কম ঠান্ডা, এমন স্থানে আশ্রয় নিলেও মশারা কিছুটা ব্যতিক্রম৷ শীতে জমে যাওয়া পানির নীচেও টিকে থাকতে পারে মশার ডিম৷ ফলে জনবসতি আছে এমন স্থানে শীতকালেও কিছু মশার দেখা মেলে৷