কপ২১ যে কারণে গুরুত্বপূর্ণ
৯ ডিসেম্বর ২০১৫জলবায়ু পরিবর্তনে সবচেয়ে ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম৷ ভূমির কম উচ্চতা, জনসংখ্যার ঘনত্ব, কৃষি নির্ভরতা এবং দারিদ্র্যের সংমিশ্রণ দেশটিকে করেছে জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য বিশেষভাবে ক্ষতিগ্রস্থ৷
বৈশ্বিক উষ্ণতা ও সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির কারণে বাংলাদেশের লাখো মানুষের বাড়ি ঘর ও ফসলি জমি সমুদ্র পৃষ্ঠে তলিয়ে যাবার ঝুঁকির মুখে৷ শুধু তাই নয়, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে রয়েল বেঙ্গল টাইগারের আবাসস্থল বাংলাদেশে অবস্থিত পৃথিবীর বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট সুন্দরবনের অস্তিত্বও আজ হুমকির সম্মুখীন৷
কৃষি নির্ভর এই দেশটিতে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে চাষের জমিতে লবণাক্ততার অনুপ্রবেশ বাড়ছে, যার ফলে এ সকল জমি হয়ে উঠছে চাষবাসের অযোগ্য৷ এর সাথে খরা ও বন্যার মাত্রা ও বেড়ে চলেছে যাতে ফসলের আবাদ নষ্ট হচ্ছে৷ এমতাবস্থায় কৃষিকাজ নির্ভর মানুষজন তাদের জীবিকা নির্বাহের পন্থা হারিয়ে অনিচ্ছাকৃতভাবে অন্য এলাকায় স্থানান্তরিত হতে বাধ্য হচ্ছে৷
যদিও বহু বছর ধরেই বাংলাদেশ ঘুর্ণিঝড়ের প্রকোপে আক্রান্ত, খুবই কম সময়ের ব্যবধানে দুটি প্রকট সাইক্লোন – সিডর এবং আইলা – দেশটির ইতিহাসে অবিস্বরনীয়৷ ঘনঘন দুর্যোগের তাণ্ডবে শুধু জানমালের ক্ষতি হচ্ছে না, অনেক মানুষ সর্বস্ব হারিয়ে উদ্বাস্তুতে পরিণত হচ্ছে ৷ বিশ্বব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী, প্রতিবছর দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে অন্তত চার লাখ মানুষ ঢাকায় চলে আসে, যাদের মধ্যে অনেকেই জলবায়ু উদ্বাস্তু৷
জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলার জন্য বাংলাদেশ নিজস্ব ১০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার অর্থ দ্বারা একটি জাতীয় জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফান্ড তৈরি করেছে, যার মাধমে দেশের ৭০ ভাগ এরও বেশি অভিযোজন প্রকল্প অর্থায়িত হচ্ছে৷ কিন্তু প্রয়োজনের তুলনায় এই অর্থ অত্যন্ত অপ্রতুল৷
বাংলাদেশের মত জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ঝুঁকির মুখে থাকা দেশগুলোর অভিযোজনের জন্য উন্নত বিশ্বের আর্থিক সহায়তা অত্যন্ত প্রয়োজন৷ এই প্রেক্ষাপটে প্যারিসে চলমান আন্তর্জাতিক জলবায়ু সম্মেলনে অভিযোজনের জন্য উন্নত বিশ্বের আর্থিক সহায়তা নিশ্চিত করার লক্ষে একটি বাধ্যতামূলক চুক্তি বাংলাদেশের লাখো মানুষের ভবিষ্যত নিরাপত্তা নিশ্চিতার্থে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ৷
আপনার কি কিছু বলার আছে? লিখুন নীচের মন্তব্যের ঘরে৷