পোষা প্রাণী মানুষের সুখ ও আত্মবিশ্বাস বাড়ায়
হোক কুকুর, বেড়াল কিংবা খরগোশ – এরা ছোট, বড় বা প্রবীণ – সকলেরই বিশ্বাসী বন্ধু৷ পোষা প্রাণী ছোটদের যেমন দায়িত্ব নিতে শেখায় ও আত্মবিশ্বাসী করে, প্রবীণদের তেমনি রাখে ‘ফিট’৷ বিস্তারিত দেখুন ছবিঘরে৷
শিশুদের জন্য পোষা প্রাণী
অনেক শিশু অস্থির বা অশান্ত প্রকৃতির হয়, লেখাপড়ায় মন বসে না বা অন্য কিছুতেও তেমন আগ্রহ নেই তাদের৷ এ সব ক্ষেত্রে শিশু বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ, শিশুকে যে কোনো একটি পোষা প্রাণী দিন৷ দেখবেন তাকে যত্ন, খাওয়া-দাওয়া, বাইরে ঘুরতে নিয়ে যাওয়া – এ সব করার মধ্য দিয়ে সে দায়িত্বশীল হয়ে উঠবে৷ দায়িত্ববোধ থেকেই বাড়ে মানুষের আত্মবিশ্বাস৷ তাই পোষ্য থাকলে তাদের দেখাশোনা করতে করতে পড়াশোনা, খেলাধুলাতেও ভালো করবে শিশুরা৷
হাঁস, মুরগি
পোষা প্রাণী বলতে যে শুধু বিদেশি কুকুর, বেড়াল বোঝায় – তা নয় কিন্তু! আমাদের দেশেও দেখা যায়, যেসব মানুষ মুরগি, হাঁস বা অন্য কোনো প্রাণী পোষেন, তাঁরা স্বাভাবিকভাবেই দায়িত্বশীল হন৷ পোষা প্রাণীর প্রতি মালিকের অনেক দায়িত্ব থাকে৷ ভোরে ঘুম থেকে উঠেই ওদের খাওয়াতে, স্নান করাতে হয়৷ আবার পোষ্য হাঁস, মুরগিরা ডিম দিলে সে ডিম শুধু খাওয়াই হয় না, আনন্দও দেয়৷ আর ডিম ফুটে বচ্চা যখন হয়, তখন তো আনন্দের সীমা থাকে না৷
পাখি
অনেকেরই বেড়াল বা কুকুরের লোম থেকে অ্যালার্জি হয়৷ তাই ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও তাঁরা কুকুর বা বেড়াল পুষতে পারেন না৷ তবে ইচ্ছে করলে তাঁরা বাড়িতে পাখি পুষতে পারেন, পরামর্শ ডাক্তারদের৷ খাঁচায় বন্দি পাখিও কিন্তু আপনাকে দিতে পারে অনেক সুখ আর আনন্দ৷ বিশেষ করে সেটা যদি কথা বলা পাখি হয়৷
মস্তিষ্কের বিশ্রাম
যাঁদের কর্মস্থলে প্রচণ্ড চাপের মধ্যে থাকতে হয়, বিশেষ করে মস্তিষ্কের চাপ যাঁদের খুব বেশি হয়, তাঁদের জন্যও পোষা প্রাণী বেশ উপকারী৷ কারণ পোষা প্রাণী ব্রেন বা মস্তিষ্ককে পুরোপুরি অন্যদিকে ঘুরিয়ে দিতে সাহায্য করতে পারে, অর্থাৎ এক্ষেত্রে মস্তিষ্কের বিশ্রাম হতে পারে সহজেই – যা সুস্থ থাকার জন্য খুবই প্রয়োজন৷
প্রবীণদের বন্ধু কুকুর
কুকুর যে প্রভুভক্ত প্রাণী – সেকথা সকলেই জানেন৷ জার্মানিতে কুকুরের মালিকরা তাই গর্ব করেই বলেন, তাঁরা বাড়ি ফেরার আগেই দরজায় ঘাপটি মেরে বসে থাকে কুকুরটি, প্রিয় মালিককে লেজ নেড়ে সম্ভাষণ জানানোর জন্য৷ জার্মানিতে পোষা কুকুর রয়েছে পাঁচ মিলিয়নেরও বেশি৷ কারণ কুকুরকে প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে দিনে অন্তত পাঁচবার বাড়ির বাইরে নিয়ে যেতে৷ এভাবেই কুকুর তার মালিককে মুক্ত বাতাসে হাঁটিয়ে ‘ফিট’ রাখে৷
নিঃসঙ্গতা দূর করে
বেশ কয়েকটি সমীক্ষার ফলাফলে দেখা গেছে, যাঁদের বাড়িতে পোষা প্রাণী আছে তাঁরা সাধারণত স্থিতিশীল ও সুখী হন, একাকিত্বে ভোগেন না৷ পশ্চিমা বিশ্বে অনেক জায়গায় দেখা যায় যে, কুকুরের মালিকদের মধ্যে একটা বন্ধুত্ব ও আন্তরিকতা তৈরি হয়েছে, শুধুমাত্র কুকুরকে বাড়ির বাইরে নিয়ে যাওয়ার মধ্য দিয়ে৷ ইউরোপে প্রবীণদের মধ্যে নিঃসঙ্গতা অসুস্থ থাকার একটি বড় কারণ৷একটা কুকুর বা বেড়াল থাকলে সেই নিঃসঙ্গতা থেকেও মুক্তি!
সন্তানের সাধ
নিঃসন্তান অনেক নারীই প্রাণী পোষেন এবং এর মধ্য দিয়ে তাঁরা খানিকটা হলেও মায়ের দায়িত্ব পালন করেন৷ পোষা প্রাণীটিকে ভালোবাসা দেন একং অনেকক্ষেত্রে সেটা ফেরতও পান৷ পোষা প্রাণী তাই নিঃসন্তান বাবা-মায়ের নিঃসঙ্গতাও দূর করে৷ বলা যেতে পারে, দুধের স্বাদ ঘোলে মেটানোর একটা উপায় অবশ্যই প্রাণী পোষা৷
মৃত্যুর পরও একসাথে
জার্মানিতে কুকুরদের জন্য আলাদা কবরস্থান আছে৷ তবে সম্প্রতি জার্মানির রাইনলান্ড-ফালৎস রাজ্যে এমন একটি কবরস্থান তৈরির পর উদ্বোধন হয়েছে, যেখানে কুকুর এবং কুকুরের মালিক মৃত্যুর পর একসাথে চিরনিদ্রায় থাকতে পরেন৷ অর্থাৎ যাঁরা জীবিত অবস্থায় কুকুরের সঙ্গ উপভোগ করেছেন এবং মৃত্যুর পরও একসাথে থাকতে চান, এমন মানুষদের জন্যই এ কবরস্থান৷